গানের মালা: শীতের বনে
  2020-04-16 13:37:41  cri

প্রিয় শ্রোতা, আশা করি ভাল আছেন। বেইজিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান 'গানের মালায়' আপনাদের সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমি ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা।

সংগীত কোনো দেশের সীমা মানে না। সংগীতের জগতে ডুব দেওয়ার আনন্দই আলাদা। যে যেখানে যেভাবেই থাকুন-না-কেন, আসুন সংগীত উপভোগ করি।

আজকের গানের মালা অনুষ্ঠানে সুন্দর সুরের সাথে রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গান এবং তার চীনা ভাষার অনুবাদ আপনাদের পড়ে শোনাবো, কেমন? প্রথম গানের নাম শীতের বনে।

শীতের বনে আমার সবচেয়ে প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলোর মধ্যে একটি। শীতের বনে ঋতুটির আগমনের সাথে সাথে প্রকৃতির সবুজ সাজ ছাড়া নিয়ে একটি গান, তাই এক অর্থে সেটি শীতের আগমনী বার্তা। কিন্তু গানটি ঋতুটির রুক্ষতা ও শুষ্কতার বর্ণনা নিয়ে হলেও সেটির মধুর সুর কেন জানি আমাকে ছোটবেলার শীতকালগুলোর সুখস্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। হয়তো শীতের মলিন হিমের মাঝেই ছোট্টবেলার আনন্দগুলো সবচেয়ে বেশি উষ্ণ হয়ে উঠে, কিংবা হয়তো শীতের রুক্ষতার মাঝে মনে একটু কোমল অনুভূতি জাগে! তা যে কারণেই হোক, আপনাদের সঙ্গে সেই অনুভূতিটুকু ভাগ করে নিতে তাই আজ এ গানের পংক্তিগুলো তুলে ধরছি।

শীতের বনে কোন্‌ সে কঠিন আসবে ব'লে

冬日的森林里将会迎来怎样的严酷,

শিউলিগুলি ভয়ে মলিন বনের কোলে॥

秋季的花朵们因害怕而在森林的怀抱里瑟瑟发抖。

আম্‌লকি-ডাল সাজল কাঙাল, খসিয়ে দিল পল্লবজাল,

小酸果和豆子挂满了枝头,浓密的树叶飘落纷纷,

কাশের হাসি হাওয়ায় ভাসি যায় সে চলে॥

甜根子草笑着随风飘过。

সইবে না সে পাতায় ঘাসে চঞ্চলতা

它活跃地不肯在树叶和草尖停歇,

তাই তো আপন রঙ ঘুচালো ঝুম্‌কোলতা।

所以用自己的色彩让金凤花褪色。

উত্তরবায় জানায় শাসন, পাতল তপের শুষ্ক আসন,

北风在它微热干燥的王座上开始发号施令,

সাজ-খসাবার হায় এই লীলা কার অট্টরোলে॥

妆扮掉落了,这是谁的吼叫声中的享乐。

(প্রকৃতি ১৮৫, রাগ: খাম্বাজ, তাল: কাহারবা, রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৩৩, রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1927, স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর)

বেশ কিছুদিন ধরেই রবি ঠাকুরের লেখাগুলোর মাঝে ডুবে আছি, তাই এই সাইটটির সাম্প্রতিক সংযোজনগুলোর ধারাবাহিকতায় আজ কবিগুরুর আরেকটি কবিতা। আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে গানটি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন বোলপুরে থাকাকালে কোন এক জ্যোৎস্নালোকিত রাতে, সাহিত্যিক চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্ণনায় –

"কোন এক উৎসব উপলক্ষ্যে আমরা বহু লোক বোলপুরে গিয়েছিলাম। খুব সম্ভব 'রাজা' নাটক অভিনয় উপলক্ষে। বসন্তকাল, জ্যোৎস্না রাত্রি। যত নারী ও পুরুষ এসেছিলেন তাঁদের সবাই প্রায় পারুলডাঙ্গা নামক এক রম্য বনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কেবল আমি যাইনি রাত জাগবার ভয়ে।… গভীর রাত্রি, হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, মনে হল যেন 'শান্তিনিকেতনের' নীচের তলার সামনের মাঠ থেকে কার যেন মৃদু মধুর গানের স্বর ভেসে আসছে। আমি উঠে ছাদে গিয়ে দেখলাম, কবিগুরু জ্যোৎস্নাপ্লাবিত খোলা জায়গায় পায়চারি করছেন আর গুন্‌গুন্‌ করে গান গাইছেন। আমি খালি পায়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলাম, কিন্তু তিনি আমাকে লক্ষ করলেন না। আপন মনে যেমন গান গেয়ে গেয়ে পায়চারি করছিলেন তেমনি পায়চারি করতে করতে গান গাইতে লাগলেন। গান গাইছিলেন মৃদুস্বরে। তিনি গাইছিলেন 'আজ জ্যোৎস্নারাতে…"।

পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে কোন এক জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিতে তাঁকে মনে করে রবিঠাকুর এই গানটি লিখেছিলেন, এমন একটি কথাও প্রচলিত আছে। কিন্তু গানটি সত্যিই ঐ প্রেক্ষাপটে লেখা কিনা আমি জানিনা। কিন্তু এটুকো মনে হয় যে প্রিয় কিংবা আরাধ্য কোনও জনের জন্য গভীর ভালোবাসা আর বেদনাভরা অপেক্ষা এমন আবেগভরে বোধহয় আর কোনও লেখায় বর্ণিত হয়নি। শ্রোতাদের মন আর্দ্র করার জন্য গানের পংক্তিগুলো আজ এখানে তুলে দিলাম।

আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে

今天这月光皎洁的夜晚里,所有人都去林中了

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥

在这春天里让人陶醉的微风中。

যাব না গো যাব না যে, রইনু পড়ে ঘরের মাঝে--

我不去啊,不去,自己留在房间中——

এই নিরালায় রব আপন কোণে।

留在在这孤单的自己的角落里。

যাব না এই মাতাল সমীরণে ॥

我不去,在这让人陶醉的微风中。

আমার এ ঘর বহু যতন ক'রে

我的这个房间需要我来很用心地

ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।

清洁和擦洗。

আমারে যে জাগতে হবে, কী জানি সে আসবে কবে

我得醒着,谁知道他什么时候来

যদি আমায় পড়ে তাহার মনে

如果他能想起我的话

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥

在这春天里让人陶醉的微风中。

(পূজা ১৪৬, রাগ: বেহাগ, তাল: তেওরা, রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২২ চৈত্র, ১৩২০, রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914, রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন, স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর)

(স্বর্ণা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040