চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' উপস্থাপন করছি। আজকের আসরের শুরুতেই থাকবে বঙ্গবন্ধুর গ্রন্থ থেকে পাঠ। তা ছাড়া, উহান শহরের অবরুদ্ধ ব্যবস্থা প্রত্যাহারে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চেষ্টার কথা তুলে ধরবো আমরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি।
উহান শহরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আবেগ
৮ এপ্রিল উহান শহরের অবরুদ্ধ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তখন থেকে এ শহর আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। উহানের মহামারী প্রতিরোধে ও স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালান চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ২৩ জানুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল মোট ৭৬ দিনের অবরুদ্ধ ব্যবস্থা উহান শহরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষা ছিল। এ শহর মধ্যচীনে অবস্থিত এবং বিভিন্ন শহর ও প্রদেশের সাথে যুক্ত। কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছে উহান।
কোভিড-১৯ ভাইরাস গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে দ্রুত ও গুরুতর মহামারী এবং চীনের বিভিন্ন শহরের মধ্যে উহানের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। তাই প্রেসিডেন্ট সি'র নির্দেশে উহানের ওপর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়।
মহামারী ঘটার পর প্রেসিডেন্ট সি'র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যকে শীর্ষস্থানে রাখে এবং হুপেই প্রদেশ ও উহান শহরের মহামারী ঠেকানোর কাজে সমর্থন দেয়। সার্বিক, কঠোর ও সম্পূর্ণ প্রতিরোধক পদক্ষেপ নিয়ে মহামারী দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়াকে সফলভাবে বাধা দেওয়া হয়।
উহানের মহামারী প্রতিরোধক কাজের নির্দেশনা দেন সরাসরি প্রেসিডেন্ট সি। তিনি উহানে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করতে নির্দেশ দেন। ২৩ জানুয়ারি থেকে টানা ৮ বারের মতো বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করেন তিনি এবং উহানের মহামারী প্রতিরোধক কাজে পরামর্শ সংগ্রহ করেন।
উহানের প্রতিরোধক কাজ সম্পর্কে সি বলেন, 'উহানে যাওয়া-আসা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে মহামারীর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়। হুপেই প্রদেশ বিশেষ করে উহান শহরের মহামারী প্রতিরোধক কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শয্যা ও চিকিত্সকদের অভাব সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে হবে। চীনের বিভিন্ন প্রদেশের চিকিত্সাসম্পদ ও চিকিত্সকদের ঐক্যবদ্ধ করে হুপেই প্রদেশের মহামারী ঠেকানোর কাজে সহায়তা দিতে হবে…ইত্যাদি।
তা ছাড়া, কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধবিষয়ক সভায় তিনি বারবার উহানের প্রতিরোধক কাজের খোঁজ-খবর নেন এবং বিভিন্ন দিক্-নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশে উহানে ধারাবাহিক প্রতিরোধক পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং তা বাস্তবায়িত হয়। যেমন, দু'টি বিশেষ হাসপাতাল নির্মাণ ও বেশ কয়েকটি অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়। ১০ মার্চ তিনি নিজে উহান পরিদর্শন করেন। তখন স্থানীয় মহামারী প্রতিরোধক কর্মী, চিকিত্সক, গণমুক্তি ফৌজের সৈন্য, পুলিশ, আবাসিক কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন মহলের লোকদের সাথে দেখা করেন সি।
তিনি মুগ্ধ কণ্ঠে বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে দেশের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন জাতির জনগণের যৌথ প্রয়াসে উহান শহরবাসীরা অবশ্যই মহামারীকে পরাজিত করতে সক্ষম। শহরটি উন্নয়নের নতুন সাফল্যও অর্জন করবে।
উহান ও হুপেইয়ের জয় হলে চীনেরও জয় হবে। উহান শুধু হুপেই প্রদেশের রাজধানী নয়, বরং চীনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ঘাঁটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ঘাঁটি এবং বহুমুখী সংযোগস্থল। এটা ইয়াংসি নদীর অর্থনৈতিক এলাকা ও মধ্যচীনের পুনরুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই শহর বিশ্বের অর্থনীতির শিল্প চেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আসলে ২০২০ সালের আগে কয়েকবার উহান পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে বৃষ্টির মধ্যে উহানের বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন সি চিন পিং। তখন ঝড়বৃষ্টির কারণে তিনি ছাতা নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করেন। কাপড়চোপড় বৃষ্টিতে ভিজে যায়।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে আবার উহানে এসে ইয়াংসি নদীর অর্থনৈতিক এলাকা উন্নয়নবিষয়ক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সি। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নব্যতাপ্রবর্তন সাফল্য দেখা, আবাসিক কমিউনিটিতে তৃণমূলের কর্মীবৃন্দের প্রশাসনের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং গুণগত মান উন্নয়নবিষয়ক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেন সি। তার সফর উহানের দ্রুত উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হয়।
সর্বশেষ উহান পরিদর্শনকালে সুশৃঙ্খলভাবে কারখানার উত্পাদন ও অফিস-আদালতের কাজ পুনরুদ্ধার সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশনা দেন প্রেসিডেন্ট সি। স্থানীয় অর্থনীতি ও সরবরাহ চেইনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের স্থিতিশীলতা ও গণজীবিকা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন তিনি। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত উহান শহরের বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস পুনরুদ্ধারের পরিমাণ ৯৭.২ শতাংশ ছিল, যা পরিকল্পনার চেয়ে অনেক ভালো।
মার্চ মাসে উহানে পরিদর্শন করার সময় সি মুগ্ধ হয়ে বলেন, 'উহান বীরদের শহর, কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে উহানের অবদান ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। চীনের বিভিন্ন জাতির লোকেরা উহানের জন্য গর্বিত। চীনা জনগণ ও সিপিসি উহান শহরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।'
উহান শহরবাসী মহামারীর সমস্যা সম্মুখীন হলেও আপোস করেননি। তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় মহামারী প্রতিরোধক সংগ্রামে অংশ নেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেন এবং চীনের অন্যান্য অঞ্চলে মহামারী ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন, যা বিশ্বের সামনে উহান শহরবাসীর দৃঢ় ও পবিত্র চরিত্র তুলে ধরে।
ভাইরাসের কারণে শহরবাসীর উদ্বেগ ও ভয়, প্রিয় মানুষদের হারানোর দুঃখ, দীর্ঘকাল ধরে গৃহবন্দির মতো নিঃসঙ্গতা..ইত্যাদি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষার কথা স্মরণ করে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, উহান শহরের লোকসংখ্যা ১.৩ কোটিরও বেশি। শহর অবরুদ্ধ করে ভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য কঠিন ছিল। উহান শহরবাসীর সমর্থনও তাই ছিল সরকারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
এখন অবরুদ্ধ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে মহামারীর ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়নি। সবার যৌথ প্রয়াস ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এ ভাইরাস পরাজিত হবে। তবে এর জন্য আরো কিছু সময় লাগবে। তাই এখন আগের মতোও বিভিন্ন প্রতিরোধক কাজ ভালভাবে করতে হবে।
পরিদর্শনের শেষ দিকে সি বলেন, উহান এ বীরের শহরে বহু বীর দেখতে পারে। এবার মহামারীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে উহান শহরবাসীর সাহস ও ত্যাগ বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। উহানের বাসিন্দাদের ত্যাগ চীনা জাতির আত্মার প্রতিফলন। মহামারীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে চূড়ান্তভাবে জয়ী হওয়ার পর উহান অবশ্যই সুউজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি করবে।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)