ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল (মঙ্গলবার) মহামারি সম্পর্কে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। মহামারি ঠেকাতে দেশে লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি মহামারির অবস্থা অনুযায়ী, দেশের কিছু অঞ্চলে প্রয়োজনীয় উত্পাদন পুনরায় শুরু হবে। প্রিয় শ্রোতা, বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
২৫ মার্চ থেকে ভারতে শুরু হয়েছে ২১ দিনের লকডাউন ব্যবস্থা। ১৪ এপ্রিল এ লকডাউন শেষ হবার কথা ছিল। তবে বর্তমানে ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারত সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। গেল এক মাসে তিনি চতুর্থবার মহামারি সম্পর্কে জাতীয় ভাষণ দিলেন। ভাষণে, মোদি বলেন, মহামারি শুরুর পর, ভারত সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিয়েছে এবং মহামারির পরিবর্তন অনুযায়ী ব্যবস্থা জোরদার ও সমন্বয় করেছে। এতে ভারতে মহামারির দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার গতি ধীর হয়েছে। তিনি বলেন, যদি সরকার যথাসময়ে ব্যবস্থা নিতে না পারত, তাহলে ভারতে মহামারি অকল্পনীয় এক পর্যায়ে উন্নীত হত। মোদি বলেন,অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, আমরা সঠিক পথ বাছাই করেছি। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও লকডাউন ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হয়েছি। অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, লকডাউনকে আমরা অনেক গুরুত্ব দেই। তবে, ভারতে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যর সঙ্গে তা তুলনা করা যায় না। এত বেশি মূল্য দেওয়া অনেক কঠিন।
ভাষণে মোদি বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার সবসময় মহামারি পরিস্থিতি উন্নয়নের ওপর দৃষ্টি দিয়েছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
কীভাবে মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় লাভ করা যায় এবং ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সবসময় আলোচনা করেছে। অবশেষে সবাই একমত হয়েছে যে, লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো উচিত্। মোদি বলেন,সবাই মনে করে লকডাউন অব্যাহত রাখা উচিত্ এবং এর আগে কয়েকটি রাজ্যে নিজেদের মতো করে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ ও গবেষণা করার পর কেন্দ্রীয় সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে; তা হলো- দেশে লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো। তার অর্থ, ৩ মে পর্যন্ত প্রত্যেককে লকডাউন অবস্থা বজায় রাখতে হবে।
ভাষণে মোদি জোর দিয়ে বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা নিশ্চিত করবে ভারত। তা না হলে, ভারত পিছিয়ে পড়বে। আগামী সপ্তাহে অবস্থা আরও কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই আরও কঠোর লকডাউন চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, এক সপ্তাহ পর বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী, যেখানে মাহামরি গুরুতর হবে না, সেখানে প্রয়োজনীয় উত্পাদন ও স্বাভাবিক জীবনযাপন পুনরুদ্ধার হবে। তিনি বলেন,আগামী সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আরও কঠোর ও সার্বিকভাবে লকডাউন করা হবে। গ্রাম থেকে রাজ্য পর্যন্ত মাহামরি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকাজ নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান ও মূল্যায়ন করা হবে। চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে মাহামরি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকরের স্থানে যদি কোন নতুন রোগী না পাওয়া যায়, সেখানে কিছু প্রয়োজনীয় উত্পাদন ও স্বাভাবিক জীবনযাপন পুনরুদ্ধার হতে পারে।
ভাষণে মোদি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ১৫ এপ্রিল লকডাউনের নিয়ম ও গাইড প্রকাশ করবে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করবে সরকার এবং মহামারি প্রতিরোধকাজ জোরদার করবে। পাশাপাশি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজন সামগ্রী ও পণ্যদ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং লকডাউনের জন্য যারা কষ্টের মধ্যে পড়েছে তাদেরকে সহায়তা দেওয়া হবে।
পরীক্ষার সরঞ্জাম বৃদ্ধি ও আরও বড় আকারের পরীক্ষা চালুর সাথে সাথে সম্প্রতি ভারতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট প্রকাশিত সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভারতে ১০৮১৫জন কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেছে এবং মারা গেছে ৩৫৩জন।
(শিশির/তৌহিদ/রুবি)