বাংলাদেশে এপ্রিলে করোনার ধাক্কা : প্রয়োজন সচেতনতা ও সর্বাত্মক প্রতিরোধ
  2020-04-12 19:34:32  cri
এপ্রিলের দেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হবে- এমন আশঙ্কা ছিল স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট মহলের। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে এ আশঙ্কার কথা জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেন।

আশঙ্কাকে সত্য করে দেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিন অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড ১৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন দেশে। ১ হাজার ৩৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হলেন। এতে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬২১ জনে। একই সময়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা যাচ্ছে মানুষ।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারাদেশে গণছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। বন্ধ থাকছে গণপরিবহনও। করোনা আক্রান্ত ও মৃতদের অর্ধেকই রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার মিরপুর ও বাসাবো এবং নারায়ণগঞ্জকে করোনার কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানার মধ্যে ৩৩টিতেই এর মধ্যেই করোনা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ সব এলাকার আড়াই শোর বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন করোনা ভাইরাসে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ সব এলাকার ৩০৮টি বাড়ি ও আবাসিক এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। রাজধানীর বাইরে সারা দেশে প্রায় অর্ধেক- ৩১ জেলায় ছড়িয়েছে করোনা। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জসহ ১১টি জেলা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অর্থাৎ ঘরে থাকা সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে গোটা বিশ্বে। বাংলাদেশেও সরকার গণছুটি দিয়ে জনগণকে ঘরে থাকতে বলছে বারবার। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার। সন্ধ্যা ৬টার পর ঘর থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু খোদ রাজধানীতেই পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। বিনা প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতে বের হয়ে আসছে মানুষ। আর সারা দেশের অবস্থা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন স্থানে জমায়েতের পাশাপাশি বিয়ে করতে গিয়ে সরকারি চাকরিজীবীর বরখাস্ত হওয়ার খবরও আসছে গণমাধ্যমে।

এর মধ্যে মসজিদ-মন্দির-গির্জায় সমবেত প্রার্থনা সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এটি সরকারের একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। তবে মসজিদে জামাত চালু রাখতে প্রতি ওয়াক্তে সর্বোচ্চ ৫ জন এবং জুমায় সর্বোচ্চ ১০ জনের নামাজ আদায়ের বিধানেও ঝুঁকি রয়ে যায়। রাজধানীসহ সারাদেশে লাখ লাখ মসজিদে ৫ জন, ১০ জন করে নামাজ আদায়ে সমবেত হলেও বিশাল সংখ্যক মানুষ করোনা ঝুঁকিতে থেকেই গেলেন।

করোনা মোকাবেলায় কার্যত দেশব্যাপী অঘোষিত লকডাউন চলছে বলা যায়। এ পরিস্থিতিতে উপার্জন বন্ধ থাকায় রোজকার খাদ্য সংকটে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ১৪ শতাংশ মানুষ। সরকার রাজধানীসহ সারাদেশে ত্রাণ সহায়তা চালু করলেও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা গেছে, সরকারি ত্রাণ সহায়তাকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না ৯৬ শতাংশ মানুষ। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের চাল চুরির ঘটনা আসছে গণমাধ্যমে।

জরিপে দেখা গেছে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ৯৯ ভাগ মানুষ জানলেও সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার বিষয়টি জানেন না ৫১ শতাংশ মানুষ। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৩ শতাংশের আয় কমে গেছে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর।

এ সংকট নিরসনে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে আলাদাভাবে বড় আকারে করোনা বিষয়ে প্রচারণা, সংকটে পড়া মানুষদের খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দেওয়া, কৃষক যেন ধানসহ উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আশার কথা এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া সার উৎপাদনে ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি, বীজের জন্য ১৫০ কোটি ও কৃষকদের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন সরকার প্রধান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ জনপদে হাটবাজার সম্পূর্ণ বন্ধ না করে স্বাস্থ্যবিধি মেন খোলা জায়গায় বাজার চালু রাখতে প্রশাসনাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে কৃষক ও খামারিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে ক্ষতি কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পারবে। তবে, এ ক্ষেত্রেও করোনা ঝুঁকি থাকবে- তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়েই হাটবাজারে কেনাবেচা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040