ঢিলেঢালা ব্যবস্থায় করোনা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশে
  2020-04-05 20:37:52  cri
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক অভূতপূর্ব অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ। এ বিপর্যয় সামাল দিতে সারাদেশে চলছে গণছুটি। তিন দফায় বেড়ে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পর্যন্ত ছুটিতে থাকছে গোটা দেশে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের যোগযোগ কার্যত এখনো বন্ধ।

করোনা পরীক্ষায় ঢাকার বাইরেও ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। বেড়েছে পরীক্ষার হার। পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের হারও। সবশেষ রোববার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ১৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ পর্যন্ত মোট সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছে ৮৮ জনে। এদের মধ্যে রোববার একজনসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ জন।

উপরের এ পরিসংখ্যান থেকে বাংলাদেশের করোনার চিত্র খুব ভয়াবহ মনে নাও হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রথম দিকে ১ জন ২ জন, ৩ জন করে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে দেশে। কিন্তু পরীক্ষা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এটি বাড়ছে ৫, ৮, ১৮ এ হারে- অর্থাৎ সংক্রমণ বাড়ছে প্রায় জ্যামিতিক হারে। অঞ্চলভিত্তিক সীমিত গণসংক্রমণের কথা জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অর্থাৎ বিপদ আছে বাংলাদেশের সামনে।

সরকারের তরফে করোনা পরীক্ষা বাড়ানো, নিরাপত্তা পোশাক, টেস্ট কিট, ও হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর কাজ চলছে। সংক্রমণ রোধে গণছুটি আর গণপরিবহন বন্ধ করেছে সরকার আগেই। সামাজিক সঙ্গনিরোধ ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগও সীমিত আকারে হলেও রয়েছে সরকারের।

সবশেষ রোববার করোনা প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাদ্য প্রদানসহ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। শিল্পখাতকে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্বল্পসুদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারের তরফে যথাসাধ্য করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু বিপদের কথা হচ্ছে- জনগণের তরফে যা করার তা কি দেশের মানুষ করছেন? বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের সব বিশেষজ্ঞরা করোনার বিস্তার ঠেকাতে কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বারবার। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক মানুষ এ পরামর্শে কান দিচ্ছেন না কিংবা বিষয়টার ভয়বাহতা বুঝতে চাইছেন না। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলা হচ্ছে না- যা করোনার গণসংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

খেটে খাওয়া অনেক মানুষকে জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বের হতে হয়। কিন্তু এর বাইরে রাজাধানীর অলিগলিতে অকারণে মানুষজন জমায়েত হচ্ছেন। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে-সরকারি বেসরকারি সংস্থার বা ব্যক্তিগত ত্রাণবিতরণে সময় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে করোনা সংক্রমণের।

দেশের জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব যথযথভাবে মেনে না চলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর হলে সবাই সতর্ক হয়। আবার আইনশৃঙ্খলাবাহিনী একটু শিথিলতা দেখালেই যেই কে সেই। গ্রামাঞ্চলে হাটবাজারগুলো কটা দিনের জন্য বন্ধ করা যায়নি। অনেকে বলছেন- সব বন্ধ করে দিলে মানুষ চলবে কি করে, খাবে কী? কিন্তু করোনা মহামারি আকারে ছড়ালো তখন তো আর এ সব যুক্তি দেখানো যাবে না। তাই আগেই একটু কষ্ট স্বীকার তো আমাদের একটা জাতীয় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।

দেশজুড়ে আরেকটি বড় ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে মসজিদ, মন্দির, গির্জায় সমবেত প্রার্থনা। ইউরোপ-আমেরিকায় দেখা গেছে স্টেডিয়াম, চার্চ থেকে করোনা ছড়িয়েছে। প্রতিবেশি ভারতে তাবলিগ জামায়াতের সমাবেশ থেকে করোনা ছড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বিবেচনা করে সরকার সমবেত প্রার্থনায় নিরুৎসাহিত করলেও মসজিদ, মন্দির, গির্জায় প্রার্থনা বন্ধ করা হয়নি। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহুদেশে মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ করা গেলে আমাদের দেশে না করতে পারার কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাববার সময় এসেছে।

জাতিকে একটা আসন্ন দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে কসুর করলে চলবে না।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040