কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে প্রযুক্তি ব্যবহারে চীন
  2020-04-04 19:47:06  cri

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বা কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে চীনের প্রচেষ্টা দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চীনের মূল-ভূখণ্ডে নতুন সংক্রমিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) চীনের এমন সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। চীনের অভিজ্ঞতাগুলো মহামারী প্রতিরোধে "অন্যান্য দেশের জন্য একটি অনুসরণীয় শিক্ষা হতে পারে"।

ব্যাপক এ যুদ্ধে চীন সর্বাধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা সে বিষয়ে আলাপ করব।

১. হাসপাতাল তৈরির কাজে পেইতৌ ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা ব্যবহার:

চীন ১০ দিনের মধ্যে হুপেই প্রদেশের উহান শহরে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে হুওশেনশান ও লেইশেনশান হাসপাতাল নির্মাণ করে, যা ছিল কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত দুটি হাসপাতাল। 'চীনা গতির' বা 'দ্রুত গতির' অন্যতম নজির এটি। চীনের পেইতৌ নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম (বিডিএস) হাসপাতালের জন্য সুনির্দিষ্ট অবস্থানের নির্ধারণ করেছে (highly precise positioning service) ও সার্বক্ষণিক নির্মাণকাজ তদারকে (expedited construction) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া, উহানে আরও ১৪টি স্থানকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। জনসংখ্যার ঘনত্ব ও যাতায়াত সুবিধা বিবেচনা করে হাসপাতাল তৈরি বা রূপান্তরের স্থান নির্বাচনে পেইতৌ নেভিগেশন সিস্টেমের সহায়তা নেওয়া হয়।

এই পেইতৌ ব্যবস্থার মাধ্যমে উহান শহরসহ অন্যান্য শহরে ড্রোনের মাধ্যমে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয় এবং জনাকীর্ণ বা জনসমাগমের স্থানগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হয়।

সেই সঙ্গে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে জরুরি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সর্বমোট ৬০ লাখ বার মানববিহীন বা চালকবিহীন গাড়ি পাঠানো হয়। মহামারীর এ সময় পেইতৌ ব্যবস্থা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।

২. প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—এআই (AI ) ও বিগ ডেটা (Big Deta) ব্যবহার

ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা (এআই) সুবিধা কাজে লাগানোর আহ্বান জানায়। কোভিড-১৯ রোগের ক্ষেত্রে তীব্র জ্বর অন্যতম লক্ষণ। এআই-চালিত সিস্টেমগুলি ব্যবহার করে পরিবহন স্টেশন, অফিস ভবন ও মানুষের চলাচলের পথে যাতায়াতের সময় শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা সনাক্ত করা হয়। দেহের আকার ও মুখের গঠনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে, চীনের এই ব্যবস্থাটি মানুষের শরীরের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা দ্রুত যাচাই করতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এর ভিত্তিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা হয়।

৩. চিকিৎসকের কাজে সহায়তা করেছে অসংখ্য রোবট

বিপুল পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ওপর চাপ কমাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন অসংখ্য রোবট প্রস্তুত করা হয়।

রোগীর বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসকদের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে, কোয়ারেন্টিতে থাকা রোগীদের কক্ষে বিভিন্ন সামগ্রী আনা-নেওয়া সহ নানা কাজে এসব রোবট ব্যবহার করা হয়েছে। বায়োলজিকাল স্যাম্পল সংগ্রহ ও রোগীর কফ পরীক্ষা করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোও রোবট দিয়ে করানো হয়েছে। এসব পদক্ষেপ ৯৫% সফলতা পায়।

৪. অনলাইন চিকিৎসায় ৫জি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার

চীনের টেলি-মেডিসিন খাতে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এবারও গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

উহানের দুটি বিশেষ হাসপাতাল ৫জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। এর মাধ্যমে রোগীরা চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। পাশাপাশি, বেইজিং-সহ অন্যান্য অঞ্চলের বিশেষজ্ঞরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের ও বিদেশের চিকৎসকরা বিভিন্ন সময় ভিডিও কনফারেন্স করেছেন ও করছেন। এমনকি সারা বিশ্বের রোগীদের বিনামূল্যে পরামর্শ বা কনসালটেন্সি দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

মূলত এসব বিভিন্ন পদক্ষেপ চীনকে দ্রুততার সঙ্গে সমস্যা প্রতিরোধের সুযোগ করে দেয়। অনুরূপ প্রমাণিত পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশও সফলতা লাভ করতে পারে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040