উহানে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ-বিষয়ক চীনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র
  2020-04-03 13:38:05  cri

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ-বিষয়ক দেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্রের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। মহামারীর বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য চীনা জনগণ, বিশেষ করে উহানবাসী বিরাট ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ২৫ মার্চ উহান শহর ছাড়া হুপেই প্রদেশের অন্যান্য শহরের ওপর থেকে অবরুদ্ধ অবস্থা বা লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ৮ এপ্রিল উহান শহরের ওপর থেকেও এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। এ যুদ্ধে উহানে কী কী ঘটনা ঘটেছে? উহানবাসী কীভাবে দু'মাসেরও বেশি সময় কাটিয়েছে? চীনের মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোন বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য? আজকের আলোছায়া অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

প্রিয় শ্রোতা, অনেক বছর পর যখন মানুষ নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়ার দিকে ফিরে তাকাবে, তখন কোন বিষয়টি বেশি মনে পড়বে ? অবশ্যই ২০২০ সালের প্রথম দিকে উহান শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি মনে পড়বে। কারণ এরকম ব্যাপকভিত্তিক লকডাউন উহানবাসী হয়তো কখনোই দেখেনি।

২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি সকাল ১০টায় নভেল করোনাভাইরাসের কারণে উহান শহরে বাস ও সাবওয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয় এবং উহানের বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন দিয়ে শহর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়।

পথ বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকার ও জনগণের তীব্র প্রচেষ্টা শুরু হয়।

উহান ছিলো এই মহাযুদ্ধের কেন্দ্র।

কিছু মানুষ আতঙ্ক ও অজানা সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল; কেউ কেউ কঠিন অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে; কেউ আবার এ অচলাবস্থায় অন্যদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

উহান শহরের বীর জনগোষ্ঠী সঠিক কাজ করার প্রচেষ্টা চালায়, তারা আন্তরিকতা, সাহসিকতা, ন্যায়পরায়ণ ও সহানুভূতির মন নিয়ে মহামারীর মোকাবিলায় এই 'জনগণের যুদ্ধে' জয়ী হওয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।

মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সংবাদদাতারা উহান শহরে নিজস্ব ক্যামেরা দিয়ে ২ মাসেরও বেশি সময়ে উহান শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং সাধারণ মানুষ ও বেসামরিক বীরের গল্প ধারণ করেন।

৬০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের রেকর্ড করা অসংখ্য মূল্যবান ভিডিও দিয়ে সিনহুয়া বার্তা সংস্থা 'বীরত্বপূর্ণ শহর' নামে এক প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে। যেসব ঘটনা ভুলে যাওয়া উচিত্ নয়, সেসব ঘটনা এতে রেকর্ড করা হয়।

মহামারীর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পিছনের গল্প উন্মোচিত হয় প্রামাণ্যচিত্রে।

চাং চি সিয়েন নামে হুপেই প্রদেশের জনৈক চিকিত্সক কীভাবে সবার আগে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যালার্ম বাজান, তা এই প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায়।

চাং সিও ছুন নামে আরেকজন চিকিৎসক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে কম্পিউটিং টোমোগ্রাফি (Computed Tomography) দিয়ে নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া স্ক্রিনিং করাকে রোগ মোকাবিলার প্রধান ভিত্তি হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ফলে এ ভাইরাস চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা সংশোধন করা হয় এবং আরো বেশি রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।

চিকিত্সক ছাড়া, প্রামাণ্যচিত্রে আরো অনেক মনোমুগ্ধকর গল্পও তুলে ধরা হয়। গল্পের প্রধান চরিত্রের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। তথ্যচিত্রে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক একজন সাধারণ বীরের মনোজগৎ তুলে ধরা হয়।

চাং তিং ইয়ু উহান শহরের একটি হাসপাতালের মহাপরিচালক। তিনি অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরসিস রোগে ভুগছেন। অন্য একটি হাসপাতালে কাজ করা তার স্ত্রী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে মহামারী সময় তিনি প্রতিদিন প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি দিয়ে রোগের সঙ্গে লড়াই করেন। তিনি বলেন, তাঁর জীবনে মাত্র ৫/৬ বছর বাকি আছে। তাই তিনি মনে করেন, প্রতিটি দিন গুরুত্বপূর্ণ; একে নষ্ট করা যায় না।

চাং চিং উই নামের মানুষটি স্টেডিয়াম বা প্রদর্শনীকেন্দ্রে নির্মিত অস্থায়ী হাসপাতালে কাজ করা একজন পুলিশ। প্রতিদিন তার চেয়ে একটু ছোট সাইজের প্রতিরোধমূলক পোশাক পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বহন করতে থাকেন। এ কাজের পাশাপাশি তিনি অন্যান্য ভারী কাজগুলোও নিজে করেন, অন্য কাউকে করতে দেন না।

বেসামরিক বিমানচালক চাই ছেন ফেই, কাজ না থাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের দলে যোগ দেন। তিনি কমিউনিটির জন্য সবজি পাঠান, রোগীদের জন্য ঔষধ কেনেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিত্সা সামগ্রী দেন। বন্ধু এক স্বেচ্ছাসেবককে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কেন স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছ? সেই স্বেচ্ছাসেবক তাকে উহান শহরের একটি ছবি পাঠায়। তিনি বলেন, দেখো, কত সুন্দর, তাই না? এমন সুন্দর একটি শহর তুমি কি রক্ষা করবে না?

সু ইয়াং নামে সিনহুয়া বার্তা সংস্থার একজন সংবাদদাতা বলেন, আমাদের মাস্কের দাগ মুছে যাবার পর…সেদিন আসলে আমার মনে হয়, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, আমরা কীভাবে মাস্ক পরতাম এবং কার সাহায্যে আমরা মাস্ক খোলার সুযোগ পেয়েছিলাম।

এটি একটি লড়াই, বিশাল ত্যাগের মাধ্যমেই এ লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যায়।

এই লড়াইয়ে একদল মানুষ দেখা যায়, যারা প্রতিবন্ধকতার সামনে অব্যাহত পরিশ্রমী করে যান।

হাতে হাত রেখে আমরা অবশ্যই কঠিন শীতকাল পার করতে পারি, একে অপরকে হৃদয়ের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে পারি, রাতের গভীর অন্ধকারে সাঁতার কেটে ভোরের সূর্যালোক স্পর্শ করতে পারি।

অবশ্যই রাতের পর দিন আছে, শীতের পর বসন্ত আছে, কষ্টের পর সুখ আছে। একমাত্র মনের শক্তি দিয়েই সুদিনকে ছিনিয়ে আনা যায়।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040