চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা প্রতি সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়া চীন' উপস্থাপন করি । তা ছাড়া, কোভিড-১৯ মহামারীর পর চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্কুল খোলা এবং পিকিং বিশ্বিদ্যালয়ের চিকিত্সক দলকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জবাবি চিঠি সম্পর্কে জানাবো।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার চোখে নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি।
উরুমুচি শহরে মাধ্যমিক স্কুল ও উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস পুনরায় শুরু
মার্চ মাসের শেষ দিকে চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী উরুমুচিতে বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল ও উচ্চবিদ্যালয় পুনরায় খুলেছে। এখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে বসে পড়াশোনা করতে পারছে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর স্কুলে যেতে পারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক খুশির ব্যাপার। এ সম্পর্কে উরুমুচি এক নম্বর মাধ্যমিক স্কুলের প্রশাসনিক বিভাগের পরিচালক ম্যাডাম থিয়ান ইয়ু বলেন, ভিন্ন সময়সূচি অনুসারে ক্লাসে আসা, ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ভাগাভাগি করা, নিয়িতমভাবে জীবাণুমুক্ত করা এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে স্কুলের পড়াশোনা পুনরায় শুরু হয়েছে। কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মহামারী প্রতিরোধক ব্যবস্থার সমন্বয় হয়েছে এবং স্কুলের পড়াশোনাও সুশৃঙ্খলভাবে চলছে।
সিনচিয়াংয়ের শিক্ষা বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৬ মার্চ থেকে মাধ্যমিক স্কুলের নবম শ্রেণী, উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণী, আর পেশাগত প্রশিক্ষণ স্কুলের শেষ বছরের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫.৭ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষাঙ্গনে আসা শরু করে, যাদের সংখ্যা সিনচিয়াংয়ের মোট শিক্ষার্থীর ৯ শতাংশ। এ সম্পর্কে উরুমুচি এক নম্বর মাধ্যমিক স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মাইনুর ইবলাইন বলেন, স্কুলের ভিন্ন সময়ের পড়াশোনা ও শিক্ষার্থীদের ছোট ক্লাস ভাগাভাগি ব্যবস্থার সমন্বয়ে তিনি অনলাইন ক্লাসের বিষয় সংশোধন ও উন্নত করেছেন এবং কম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার উপযোগী করে গড়ে তুলবেন। সাথে সাথে স্কুলটি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। মানসিক শিক্ষকদের পরামর্শ ও খেলাধুলা ক্লাসের মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে স্কুলের ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক থিয়ান সিন বলেন, মহামারী ঠেকানোর সময়ও স্কুলটিতে খেলাধুলার ক্লাস বজায় ছিল। শিক্ষার্থীরা এসময় প্রতিসপ্তাহে বাইরে শরীরচর্চা করেছে।
দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের হ্যথিয়ান এলাকায় বিভিন্ন স্কুলে বিতরণকৃত মাস্কের সংখ্যা ৪ লাখ ২২ হাজারের বেশি এবং বিশেষ মহামারী প্রতিরোধক বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।
চীনের মূল ভূভাগ থেকে সিনচিয়াংয়ে আসা সহকারী শিক্ষকদের সংখ্যা বেশি। শিক্ষকদের সিনচিয়াংয়ে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার কানসু, সিছুয়ান, কুইচৌ ও ইনারমঙ্গোলিয়া থেকে ১৩০০ জনেরও বেশি শিক্ষক হ্যথিয়ানে ফিরিয়ে আনে এবং আরো ২৮০০ জনেরও বেশি শিক্ষক ট্রেনে করে স্কুলে ফিরে আসেন।
স্কুল পুনরায় খোলা প্রসঙ্গে হ্যথিয়ান লুওপু জেলার এক নম্বর উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইলিমিনুল নাইবি বলেন, 'আমার কাওখাও তাড়াতাড়ি শুরু হবে। স্কুল পুনরায় খোলায় আমার উদ্বেগ প্রশমিত হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন পরিশ্রম করে লেখাপড়া করব, যাতে কাওখাও পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠ ফলাফল করতে পারি।'
সিনচিয়াংয়ে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থার সাফল্যের পর ২৩ মার্চ থেকে এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল ও উচ্চবিদ্যালয় পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্কুল খোলা থাকলেও প্রতিদিন প্রতিরোধক-ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্লাসরুম ও কান্টিনসহ বিভিন্ন জায়গায় সময় মতো জীবাণুনাশক ছিটানো হয়, যাতে নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারেন।
হুপেইকে সহায়তাকারী পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সক-দলকে চিঠির উত্তর দিলেন প্রেসিডেন্ট সি
সম্প্রতি কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে হুপেইতে যান পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সক-দল। দলটি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির উত্তর দেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি লিখেছেন, 'মহামারী প্রতিরোধক যুদ্ধে আপনাদের মতো যুবকরা বিপদকে তুচ্ছ করে মাঠে নেমেছেন; ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছন। এমন সাহস ও অবদানে যুবকদের শক্তি প্রতিফলিত হয়।'
মহামারী প্রতিরোধক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল যুবকদের উত্সাহ দিতে এ চিঠি লেখেন সি চিন পিং। তিনি তাদের শুভ কামনা জানান।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিত্সক উ ছাও হুপেইতে যাওয়া চিকিত্সক দলের একজন সদস্য। ৭ ফেব্রুয়ারি উহানে পৌঁছার পর তিনি প্রতিদিন সহকর্মীদের সাথে উহান থুংচি হাসপাতালে গুরুতর আক্রান্তদের চিকিত্সা দেওয়ার কাজ করেন।
প্রেসিডেন্ট সি'র চিঠি সম্পর্কে ডাক্তার উ বলেন, 'প্রেসিডেন্ট সি'র চিঠি আমাদের কার্যক্রমের ব্যাপক স্বীকৃতিস্বরূপ।' চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে তিনি এ শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা স্মরণ রেখে ভবিষ্যতেও চিকিত্সা-কাজে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
আসলে কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে হুপেই প্রদেশে যাওয়া ৪২ হাজারেরও বেশি চিকিত্সকের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের চেয়ে কম।
চিয়াংসু প্রদেশের সহকারী চিকিত্সক-দলের সদস্য লি জুয়ান জুয়ান প্রেসিডেন্ট সি'র চিঠি দেখে অনেক উত্সাহিত হন। তিনি বলেন, 'যদিও আমার বয়স সবার চেয়ে কম, কিন্তু চিকিত্সক হিসেবে আমি মহামারীকে যুদ্ধে পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।'
হুপেই সিয়াননিং শহরের গণনিরাপত্তা ব্যুরোর পুলিশসদস্য স্যু ছি সুয়ান বলেন, 'আমার মতো অনেক যুবক পুলিশ এবার মহামারী প্রতিরোধক যুদ্ধে যোগ দিয়েছে এবং দিন-রাত ধরে অফিসে কাজ করেছে। এতোদিন আমরা বড়দের চোখে ছিলাম বাচ্চা। তবে বর্তমানে মহামারী প্রতিরোধে আমরা বাবা ও দাদাদের মতো সংগ্রাম করতে সক্ষম।'
চীনের ইয়ুননান প্রদেশের খুনমিং শহরের ইউয়ানজি গ্রামের একজন দারিদ্র্যবিমোচন সহকারী কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট সি'র চিঠি পড়ে অনেক মুগ্ধ হন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি তাঁর চিঠিতে চীনা যুবকদের জনগণের সেবা করে বড় হওয়া, সংগ্রামে দৃঢ়তার চর্চা করা, ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর কথা বলেন। এটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও মহামারী ঘটেছে, তবে আমাদের দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ ভাইরাসের কারণে বন্ধ হবে না। আমাদের যৌথ প্রয়াসে গ্রামের ২১৮টি পরিবারের ৮৭৪ জন দরিদ্র মানুষ পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। ২০২০ সালে চীনে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আমাদের সবার প্রয়াস প্রয়োজন।'
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)