সম্প্রতি চিয়াং সু, চেচিয়াং ও শাংহাইসহ নানান জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদেরকে অনেককে বিভিন্ন সভায় মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। চীনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন সম্প্রতি প্রকাশ করে 'মাস্ক পরার বৈজ্ঞানিক গাইড'। এতে বলা হয়: বাড়ির ভিতরে বা বাইরে ভিড় নেই এমন জায়গায়, যেখানে বায়ু চলাচল স্বাভাবিক, সেখানে মাস্ক না-পরলে ক্ষতি নেই। প্রশ্ন হচ্ছে: তাহলে চীনের সাধারণ মানুষ কখন মাস্ক খুলে রাখবে?
গত ২৩ মার্চ, শাংহাই কেন্দ্রীয় এলাকায় অনুষ্ঠিত এক সভায় সবাই নিজ নিজ মাস্ক খুলে ফেলেন। পাশাপাশি, শাংহাই, চিয়াং সু, চেচিয়াং ও হাই নানসহ নানান জায়গায় বিভিন্ন সভায় সরকারি কর্মকর্তারা মাস্ক খুলে ফেলেন। চেচিয়াং প্রদেশের হাং চৌ শহরে অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মদলের সাংবাদিক সম্মেলনে, সব অংশগ্রহণকারী মাস্ক পরেননি।
২১ মার্চ, হাং চৌ সরকার ঘোষণা করে যে, কিছু পাবলিক জায়গা ও যানবাহনে যন্ত্রের সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। পার্ক, দর্শনীয় স্থান, রাস্তাসহ নানান জায়গায় যদি ভিড় না থাকে, তবে মাস্ক পরতে হবে না। সাইকেল চড়া, খোলা জায়গায় হাঁটাহাটিঁ করা বা শরীরচর্চার সময়ও মাস্ক পরার দরকার নেই। বিদেশ থেকে ফিরে আসা মানুষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি, এমন লোকজনকেও অফিসে মাস্ক না-পরলে চলবে।
তবে সাংবাদিক দেখেছেন যে, এমন ব্যবস্থা চালু হলেও, বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরছেন। তারা জানায়, মাস্ক পরা এখন আভ্যসে পরিণত হয়েছে এবং মাস্ক পরলে নিরাপদ বোধ হয়। প্রতিদিন বিদেশ থেকে ফিরে আসা মানুষের আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাই লোকজন এখনও মাস্ক পরে।
অন্যদিকে, নান চিং শহরের একটি যাদুঘরে সাংবাদিক দেখেছেন, মানুষ বেশি না-হলেও সবাই মাস্ক পরেছেন এবং পরস্পরের মধ্যে কিছু ব্যবধান রেখে চলছেন। একজন নান চিং নাগরিক বলেন, 'আমি মনে করি মাস্ক খুলে ফেলার সময় এখনও আসেনি। এখন পরা ভালো।'
শাংহাইয়ে তো প্রায় একই অবস্থা। রাস্তায়, পার্কে্ মানুষ মাস্ক পরে ঘুরছে। তারা বলে, যদিও মাস্ক না-পরার কথা বলা হচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরছেন। কারণ, একজন মাস্ক না-পরলে অন্যরা ভয় পেতে পারেন। সবারই মাস্ক পরা উচিত। তাদের মতে মাহামারি নিয়ন্ত্রণে চীনারা প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে, এখন সেটি আবার ফিরে আসুক, তা কেউ চায় না।
চিয়াং সু প্রদেশের চাং চৌ শহরের নাগরিক মিঃ ছাং বলেন, 'আবহাওয়া দিন দিন গরম হয়ে উঠছে, মাস্ক পরলে অসুস্থ বোধ হয়। যখন মেয়েকে নিয়ে উপকণ্ঠে ভ্রমণে যাই তখন মাস্ক খুলে ফেলি। তবে যদি আশেপাশে অন্য মানুষ দেখি, তখন আবার মাস্ক পরি।'
সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের মুখের মাস্ক খুলে আমাদেরকে এমন একটি সংকেত পাঠান যে, কোনো কোনো জায়গায় মহামরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং উত্পাদন ও জীবনের শৃঙ্খলা ফিরে আসছে। সেখানে মহামারির ঝুঁকি কম এবং কোনো নতুন আক্রান্ত রোগী নেই। যেমন, ৩ মার্চ পর্যন্ত চিয়াং সু প্রদেশের সব জেলা ও শহর নিম্ন ঝুঁকি এলাকায় পরিণত হয়। ২২ মার্চ পর্যন্ত চিয়াং সু প্রদেশে টানা এক মাস কোনো নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়নি এবং আক্রান্তদের সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এখন বেইজিং, থিয়ান চিন, হ্য পেই ও হুপেই ছাড়া, চীনের সকল প্রদেশ মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নেওয়া জরুরি-ব্যবস্থা খানিকটা শিথিল করেছে।
শাংহাই কোভিড-১৯ চিকিত্সা-দলের প্রধান, ফু তান বিশ্ববিদ্যালয়ের হু শাস হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগের পরিচালক ছাং হং ওয়েন বলেন, 'রোগীর সংখ্যা কম এবং নতুন কোনো নেই, এমন প্রেক্ষাপটে ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম। হাসপাতাল, সাবওয়ের মতো জনসমাগমের স্থান ছাড়া, আসালে আমরা মাস্ক খুলে ফেলতে পারি।'
অবশ্যই জনসাধারণ আরও স্পষ্ট নির্দেশনা শুনতে চায়। সাধারণত এমন পরিবেশে মাস্ক পরার দরকার নেই, তবে উচ্চ ঝুঁকির জায়গায় গেলে মাস্ক পরা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাস্ক খুলে ফেলা সামাজিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। নির্ভুল নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তিগত সমর্থন এবং ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দরকার। যেমন, পার্ক বা স্টেডিয়ামে মানুষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কোনো কোনো পার্ক জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি এখন শুধু অল্পসংখ্যক পর্যটক ঢুকতে দিচ্ছে এবং খোলাও থাকছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম সময়। কোনো কোনো পার্কে যেতে চাইলে একদিন আগে রিজার্ভেশন করতে হয়।
১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সম্মেলনে বলা হয়, যেখানে মহামরির ঝুঁকি কম, সেখানে সার্বিকভাবে উত্পাদন ও জীবনযাপন পুনরুদ্ধার হবে।
শাংহাই স্বাস্থ্য উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক উ লি মিং বলেন, মহামারি হবার পর জনসাধারণ সক্রিয়ভাবে মাস্ক পরেছে, যা মহামরি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন মহামরি পরিস্থিতি উন্নতি ঘটেছে, পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। এ পরিস্থিতি আরও কিছুদিন বজায় থাকলে সবাই মাস্ক খুলতে পারেন এবং আগের মতো জীবনযাপন করতে পারেন।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখন চীনের চেয়ে বিদেশের অবস্থা গুরুতর। কোন কোন জায়গায় বিদেশ থেকে ফিরে আসার মানুষ বেশি। তাই বিভিন্ন জায়গায় নিজ নিজ বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী নিয়ম তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ঘন ঘন হাত ধুয়ে নেওয়া এবং পরস্পরের মধ্যে কিছু ব্যবধান রাখা প্রয়োজন।
পাবলিক জায়গা যেখানে উত্পাদন বা কাজ আবার শুরু হয়েছে, সেখানে বায়ু চলাচল এবং ভেতরে মানুষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। পাশপাশি নানা ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান বিষয় জোরদার করা হবে বলে জানায় সরকার।
সংক্রামক রোগ চিকিত্সা জাতীয় পরীক্ষাগারের উপ-পরিচালক সেং চি ফাং বলেন, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের দিক দেখলে মানুষের মাস্ক পরার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। ফ্লু ঋতু বা সংক্রামক রোগের শীর্ষ সময়ে ভিড়ের জায়গা বা সীমাবদ্ধ স্থানে মাস্ক পরা উচিত। পাশাপাশি, ভাল জীবনযাপনের অভ্যেস তৈরি করা এবং মানসিক ও শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে হবে।(শিশির/আলিম/রুবি)