বিদ্যাবার্তা ০৩২৩
  2020-03-23 14:20:35  cri

 


চলতি বছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে আমরা এ সপ্তাহের অনুষ্ঠান থেকে বিশেষ পর্ব যুক্ত করবো। সেটি বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' উপস্থাপন। তা ছাড়া, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উহান পরিদর্শন সম্পর্কে প্রতিবেদন শোনাবো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার দেখা নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি। 

 

১০ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উহান পরিদর্শন করেন। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধের সন্ধিক্ষণে তাঁর উহান পরিদর্শন কী ইঙ্গিত দেয়?

প্রেসিডেন্ট সি'র পরিদর্শন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উহানের মহামারী প্রতিরোধ পরিস্থিতি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। উহানে গুরুতরভাবে আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ আছেন হুওশেনশান হাসপাতালে। প্রেসিডেন্ট সি উহানে প্রথম সে হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি বলেন, পরিশ্রম ও কঠোর প্রচেষ্টায় হুপেই প্রদেশ ও উহান শহরের মহামারী পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে। এতে বিশ্বের সামনে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীনের মহামারী প্রতিরোধক পদক্ষেপ কার্যকর। সি'র পরিদর্শন সম্পর্কে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাই ইয়ান চুন বলেন, চীনের সর্বোচ্চ নেতা আর মহামারী প্রতিরোধক যুদ্ধের সেনাপতি উহানে পৌঁছে গেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় জনস্বাস্থ্য কমিটির সূত্রে জানা গেছে, ৯ মার্চ চীনে নতুন করে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সংখ্যা ছিল ১৯ জন। এর মধ্যে হুপেইতে ১৭ জন এবং বাকি ২ জন বিদেশ থেকে চীনে আসা রোগী। এ সম্পর্কে চীনের নানখাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছাং চিয়ান বলেন, হুওশেনশান হাসপাতালের চিকিত্সা ও রোগী ভর্তির পদ্ধতি থেকে বোঝা যায় চীনের বিভিন্ন পদক্ষেপ কার্যকর আর দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্মিত এ হাসপাতাল চীনের সামাজিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও প্রাধান্যেরও প্রতিফলন।

পরিদর্শনকালে সি চিন পিং বলেন, যদিও কিছু সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তবে কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানো চলবে না। এ সময় ঠাণ্ডা মাথায় আগের মতো বিভিন্ন প্রতিরোধক ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। এ সম্পর্কে অধ্যাপক তাই বলেন, প্রায় দেড় মাসের সংগ্রামের পর নুতন করে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে মহামারীর অনিশ্চিয়তা রয়ে গেছে এবং চীনের বাইরে থেকে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিরোধক কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

পরিদর্শনকালে সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রতিরোধক-কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিভিন্ন আবাসিক কমিউনিটির প্রতিরোধক-কাজ অতি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তুংহু আবাসিক কমিউনিটি পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় জনস্বাস্থ্য মহামারী ঠেকানোর কাজ, আবাসিক কমিউনিটির সেবাকাজ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, মহামারী প্রতিরোধের দুটি যুদ্ধক্ষেত্র রয়েছে: আবাসিক কমিউনিটিতে প্রতিরোধক কাজ এবং হাসপাতালের চিকিত্সাসেবা কাজ।

এ সম্পর্কে অধ্যাপক ছাং মনে বলেন, আবাসিক কমিউনিটিকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আখ্যায়িত করার মূল কারণ হল আবাসিক কমিউনিটিতে সহজভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, খাবার ও বিভিন্ন সামগ্রীর অভাব এবং বাসিন্দাদের নেতিবাচক অনুভূতি, ইত্যাদি। তা ছাড়া, লোকজন কমিউনিটিতে সহজে শিথিলতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট সি'র পরিদর্শন বিভিন্ন আবাসিক কমিউনিটির প্রতিরোধককাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। এ পরিদর্শন থেকে বোঝা যায়, চীনের কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের চাহিদা ও চিন্তাভাবনার ওপর গুরুত্ব দেয়।

পরিদর্শনকালে সি চিন পিং বলেন, হুপেই প্রদেশ আর উহান শহর গুরুতর মহামারীর কারণে দীর্ঘকাল ধরে অবরুদ্ধ রয়েছে। স্থানীয় নাগরিকদের কিছু নেতিবাচক অনুভূতি থাকা স্বাভাবিক। একে সহজভাবে মেনে নেওয়া উচিত।

যথাযথভাবে অফিসের কাজ ও উত্পাদনকাজ পুনরুদ্ধার সম্পর্কে সি চিন পিং বলেন, বিভিন্ন পক্ষের প্রতিরোধক কাজের কর্মপ্রতিবেদন শোনার পর সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহামারী প্রতিরোধ কাজ জোরদার করার প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা চালু করা উচিত। ইতোমধ্যে চীনের বিভিন্ন এলাকায় উত্পাদন শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি'র উহান পরিদর্শন স্থানীয় অঞ্চলের উত্পাদনকাজ পুনরুদ্ধারে উত্সাহ যুগিয়েছে।

চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণাগারের সাবেক মহাপরিচালক ছেন ফেং ইং বলেন, স্থানীয় মহামারী পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ধাপে ধাপে চালু করতে হবে।

আসলে হুপেই প্রদেশ আর উহান শহরের উত্পাদনকাজ পুনরুদ্ধার করা অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। হুপেই কৃষিভিত্তিক প্রদেশ। এখানে ধান ও শাকসবজি উত্পন্ন হয়।

সম্প্রতি মহামারীর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে; ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। হুপেই ও উহান কঠিন সময় কাটাতে সক্ষম হলে, বিশ্বও অবশ্যই এ সমস্যা সমাধান করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধক চিকিত্সকদের জন্য বিনামূল্যে কফি

চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরের একটি কফি দোকানে তিন জন কর্মী কফি বানাতে ব্যস্ত। তাইওয়ান প্রদেশের যুবক কুও ই ফান দু'জন সহকর্মীর সাথে কম সময়ের মধ্যে ৫০ কাপ কফি তৈরি করেন এবং হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ৩০ মিনিট পর কফি হাসপাতালে পৌঁছে যায়।

কুও ও তার সহকর্মীরা ফুচৌ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়া-আসা করেন এবং সেখানে চিকিত্সকদের জন্য কফি সরবরাহ করেন। এ কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমরা মাস্ক দিতে পারি না, তবে কফি দিতে পারি।'

২০১৪ সালে কুও চীনের তাইওয়ান প্রদেশের তাইচুং শহরে তাঁর প্রথম কফি দোকান চালু করেন এবং পরে ফুচৌ বেড়াতে এসে শহরটি বেশ পছন্দ করেন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি ফুচৌতে কফি দোকান চালু করেন। যদিও শূন্য থেকে ব্যবসা চালু করেন, তবে কফি দোকান গড়ে তুলতে অনেক অপরিচিত লোকের সাহায্য পেয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের বসন্ত উত্সবে করোনাভাইরাস চীনে ছড়িয়ে পড়ে। বসন্ত উত্সবের দ্বিতীয় দিনে তিনি তাইওয়ান প্রদেশ থেকে ফুচৌতে ফিরে আসেন এবং প্রতিদিন ভাইরাসের খবর মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকেন। অনেকে হুপেই প্রদেশের মহামারী ঠেকাতে সহায়তা দিচ্ছেন দেখে, তিনি ভাবেন যে নিজেও কিছু কাজ করবেন। চিকিত্সকদের কাজ কষ্টের; বিশ্রামের সময় কফি হতে পারে তাদের জন্য আরামদায়ক। এই ভেবে তিনি সহকর্মীদের নিয়ে ফুচৌ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে কফি পাঠাতে শুরু করেন।

'চিকিত্সকরা আমাদের কফি পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানান। তখন আমাদের অনেক ভালো লাগে। আমাদের ক্ষুদ্র অবদান জমে বড় অবদান হতে পারে।' জনাব কুও গর্বিতভাবে এমন কথা বলেন।

ফুচৌ ফুসফুস হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের বিশেষ হাসপাতাল। ওখানে কফি পাঠানোর সময় জনাব কুও'র বন্ধু অনেক উদ্বিগ্ন থাকেন। এ সম্পর্কে কুও বলেন, 'আমার বন্ধু আমাকে না যেতে বলে। কারণ ওখানে ভাইরাস থাকে। আসলে আমাদের একটু ভয় লাগে। তবে চিকিত্সকদের একটু আরাম দেওয়া আমাদের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, ফুচৌ তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে এবং আমাদের যৌথ উদ্যোগে অবশ্যই এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয় আসবে।'

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040