ভাইরাস-সংক্রান্ত এনএইচকে'র তথ্যচিত্র
  2020-03-18 15:58:52  cri

৯ ফেব্রুয়ারি নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে নানা তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ২০ দিনে এ ভাইরাস প্রসঙ্গে একটি প্রামাণ্যচিত্রের জন্ম হয়।

সর্বপ্রথম আমরা জানাতে চাই, এ তথ্যচিত্রটি ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়, তাই এতে তখনকার তথ্য ও পরিসংখ্যান স্থান পেয়েছে। এটি ভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরতে পারে নি। তথ্যচিত্রে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের পাশাপাশি চীনের প্রভাবশালী গণমাধ্যমের সঙ্গে কিছু পার্থক্য থাকার পরও, বিভিন্ন মতামতের মাধ্যমে বাস্তবতার কাছাকাছি পৌঁছানো সহজ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

নভেল করোনাভাইরাস কি? কেন এই ধরনের ভাইরাস এত ভয়াবহ? কেন এই ভাইরাসের সামনে মানুষ অসহায়?

নভেল করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত তথ্যচিত্র হিসেবে প্রথমে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

তথ্যচিত্রে নভেল করোনাভাইরাসের যে বিশেষ এক চরিত্র তুলে ধরা হয় তা হলো কোনও লক্ষণ দেখা না-দেওয়া সংক্রমণ। অর্থাৎ কেউ কেউ তার শরীরে ভাইরাস বহন করেন, তবে তাদের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না, তাই তারা মনে করেন, তারা সংক্রমিত হন নি। এভাবে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভাইরাস অন্যদের ছড়িয়ে দেন। তা ছাড়া, আরো কঠিন অবস্থা হলো (Incubation period ) ইনকিউবেশন পিরিয়ডে সংক্রমণ। কোনো কোনো সন্দেহজনক রোগী, যাদের আক্রান্তের লক্ষণ দেখা দেয় নি, তবে তারা অন্যদের সংক্রমণ করতে পারেন। ফলে সংক্রমণের উত্স খুঁজে বের করা এবং সংক্রমণের চ্যানেল কেটে দেওয়ার বিভিন্ন উপায় কার্যকর হয় না।

এখনও কেউ কেউ মনে করেন, নভেল করোনাভাইরাস কতটা ভয়াবহ ও গুরুতর, তা জনসাধারণকে জানালে এতে সমাজে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে কি?

বাস্তবতা হলো, আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পূর্বাভাস জানালে এবং ভয়াবহ চরিত্র জনগণের কাছে তুলে না ধরলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার কোনও সুযোগ আছে কি?

না, অবশ্যই না। আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, গণমাধ্যমে ভাইরাস নিয়ে নানা খরব প্রচারের পরিমাণ দশ গুণ বেড়ে যায়, সংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩.৫ শতাংশ হ্রাস পায়।

রোগের নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। এ অবস্থায় সঠিক উপায় হলো সবচেয়ে ভালো টিকা।

ভাইরাস-সংক্রান্ত নানা সঠিক তথ্য প্রকাশ আতঙ্ক এড়াতে অনেক সহায়ক হয়।

তথ্যচিত্রে ভাইরাসের চরিত্র তুলে ধরার পর দ্বিতীয় ধাপে তা মোকাবেলার প্রচেষ্টা চালানো উচিত। অজানা ভাইরাসের সম্মুখীন হয়ে জাপানও কিছু ভুল করেছে বলে তথ্যচিত্রে উল্লেখ করা হয়। যেমন ভাইরাস সংক্রমণের ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ না করা।

জাপানের প্রথম যে রোগী শনাক্ত হন, তিনি একজন বাস চালক। যখন তার শরীরে কাশি, জ্বর ও সর্দিসহ নানা লক্ষণ দেখা দেয়, তিনি হাসপাতালে যান। তবে নভেল করোনাভাইরাসের পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ১৭ জানুয়ারি তিনি হাসপাতালে যান এবং ১১ দিন পর অর্থাত্ ২৮ জানুয়ারি তার ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত হয়। এনএইচকে'র তথ্যচিত্রে এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।

মহামারীর প্রাদুর্ভাবের সময় সব দেশ একটি অভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। সেটি হলো গুজব। গুজব কি? কীভাবে তা দূর করা যায়?

তথ্যচিত্রে জাপানের একজন অধ্যাপকের কথা শোনা যায়।

যেসব খবর গণমাধ্যমে ঘনঘন প্রচারিত হয়, সেসব খবরের ওপর দৃষ্টি রাখে জনগণ। এক্ষেত্রে সরকারের যা করা উচিত্, তা হলো সার্বিক বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়া। বর্তমানে আমাদের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা খুব কঠিন। এসব স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করলে জনগণ অবশ্যই বুঝতে পারবে। এভাবে গুজবও একসময় হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।

এবারের মহামারী প্রাদুর্ভাবের পর এক জরিপে টুইটার থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে 'পালিয়ে যাওয়া' অন্যতম একটি। এর পিছনে গুজব হলো যে, ভাইরাস বহনকারী কোনো কোনো পর্যটক বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে যায়। তা ছাড়া, আরো অনেক গুজব আছে, যেমন ভাইরাস হলো জৈব রাসায়নিক অস্ত্র। যেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু'র কথা বলার মতো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নকল তথ্য মিলিয়ে 'তথ্য ভাইরাস' সৃষ্টি করা হয়েছে।

এনএইচকে'র এ তথ্যচিত্রে মানুষের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। তথ্যচিত্রের শুরুতে চীনের উহানে বাসরত জাপানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দৃশ্য ধারণ করা হয়। মহামারীর কারণে তারা অফিস থেকে বা বাসায় থেকে কাজ করেন। তাদের ক্যামেরার মাধ্যমে জাপানি দর্শকেরা সুদূর স্থান থাকা এসব মানুষের বিশেষ সময়ের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন। তথ্যচিত্রে সাধারণ উহানবাসীর জীবনও তুলে ধরা হয়।

তথ্যচিত্রে খুব ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই ভাইরাসের বর্ণনা দেওয়া হয়। একজন জাপানি অধ্যাপক তথ্যচিত্রে বলেন, ভাইরাস নিয়ে বর্তমানের এই সংকট তৈরির প্রধান কারণ উহানের চিকিত্সা পশ্চাৎপদ নয়। তিনি বলেন, উহান খুবই আধুনিক একটি শহর। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে জাপানের মতো উন্নত হাসপাতাল আছে। তবে, উন্নত হাসপাতাল বা প্রবীণ চিকিত্সক, সবার প্রাণ বাঁচাতে পারেন না। এর অর্থ এটা নয় যে, উহানের চিকিত্সার মান খারাপ!

চীনের নেওয়া ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জাপানি অধ্যাপক এভাবে বলেন, উহান শহর লকডাউন করা হলো চীনের নেওয়া সঠিক একটি পদ্ধতি। তথ্যচিত্রে তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেন যে, ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে চীন হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশীদার।

৫৪ মিনিটব্যাপী এনএইচকে'র এই তথ্যচিত্রে মানুষের ওপর গুরুত্বারোপের চিন্তাধারা এবং রাষ্ট্রীয় সীমা অতিক্রম করা সর্বজনীন ভালোবাসা প্রকাশিত হয়।

সময়মতো নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া, নিজের ভুল আত্মজিজ্ঞাস করা এবং সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণ করা হলো এ তথ্যচিত্রের শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

.

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040