কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এক নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে চীনে। আমরা আগে 'শেয়ার গাড়ি', 'শেয়ার সাইকেল' ইত্যাদি টার্ম শুনেছি। কিন্তু 'শেয়ার কর্মী' টার্মটি নতুন। হ্যাঁ, এটাই বিশেষ সময়ে নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টির ফল।
শুরুতে অনলাইন খুচরা শিল্পে সবার আগে 'শেয়ার কর্মী' নিয়োগ করা হয়। পরে লজিস্টিক ও নির্মাণ শিল্পেও দেখা যায় এ ধরনের কর্মী।
কুয়াং তুং প্রদেশের ছিং ইউয়ান শহরের তাই পো ইউয়ু একটি হটপট রেস্তোরাঁর পরিচালক। এখন তিনি একটি সুপারমার্কেটে ট্যালি হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, মহামারীর কারণে, হটপট রেস্তোরাঁ বন্ধ। শিগগিরি এটি পুনরায় শুরু হবার সম্ভাবনাও কম। কিন্তু তাকে তো কাজ করতে হবে! তাই তিনি হটপট রেস্তোরাঁর লাগোয়া সুপারমার্কেটে নতুন একটি কাজ করছেন। তিনি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন বলে তার স্বাস্থ্য ভালোর প্রশংসাপত্র আছে। সব ধরনের শাকসবজি ও মাংস তিনি চেনেন। তিনি ইন্টারভিউতে সহজে পাস করে নতুন চাকরি পান। তিনি খুব দ্রুত নতুন কাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন। যখন হটপট বেস্তোরাঁ আবার চালু হবে, তখন তিনিও ফিরবেন পুরাতন কাজে। মহামারীর কারণে রেস্তোরা ও হোটেলসহ নানান ব্যবসা বড় আঘাত পায়। অনেক কর্মী আগের কর্মস্থানে ফিরতে পারছেন না। পাশাপাশি অনলাইন ব্যবসা ফুলে উঠেছে। বাছাই, প্যাকিং এবং শিপিংসহ নানান কাজে প্রচুর কর্মী লাগে। তাই 'শেয়ার কর্মী' ব্যবস্থার সৃষ্টি।
সিনেমা থিয়েটার, কেটিভি, দর্শনীয় স্থান, রেস্তোরাসহ নানা ব্যবসার কর্মীরা এখন বেকার। পাশাপাশি কিছু মাইক্রো ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদনও শুরু হয়নি। তাই তারা এখন অনলাইন ফ্রেশ ই-কমার্স, নির্মাণ শিল্প বা লজিস্টিক শিল্পে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪০টির বেশি কোম্পানির ৩০০০ জনের বেশি কর্মী আলিবাবার অধীনে হেমা ফ্রেশ দোকানে যোগ দেন। দেশব্যাপী ৪০০টির বেশি ওয়াল-মার্ট সুপারমার্কেট ৩০০০ জনের বেশি 'শেয়ার কর্মী' নিয়োগ দিয়েছে। তারা আরও ২০০০ জন নিযোগ করবে বলে জানানো হয়।
ধাপে ধাপে চীনে নানান ব্যবসা চালু হচ্ছে; কারখানার উত্পাদন শুরু হচ্ছে। তবে মহামারী নিয়ন্ত্রণের কারণে অনেক কর্মী নিজ নিজ কর্মস্থানে ফিরে আসতে পারছেন না। তাই 'শেয়ার কর্মী' হিসেবে কাজ করা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন, কুয়াং চৌ ফু শেন নামের একটি বায়োটেকনোলজি কোম্পানি ১৩২ জন শেয়ার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। তারা মূলত প্যাকিং ও এসেম্বলির কাজ করেন। চেচিয়াংয়ে একটি হোম টেক্সটাইল কোম্পানি এখন মাস্ক তৈরি করে। তারা শেয়ার কর্মী নিয়োগ করে মাস্ক পরীক্ষা ও প্যাকিংয়ের কাজের জন্য।
এমন শেয়ার কর্মী সাধারণত সহজ এক ধরনের কাজ করে এবং কিছু প্রশিক্ষণ নিলে তক্ষুণি কাজ শুরু করতে পারে। বর্তমানে শেয়ার কর্মী বেশির ভাগ প্যাকিং, গুদাম সাজান বা সমাবেশ লাইনে কাজ করেন। এমন কাজে বেশি পেশাদারিত্ব, তথ্য বা প্রযুক্তি লাগে না। কিছু কাজ স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে করা যায়। কোন কোন কোম্পানি সক্রিয়ভাবে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে এবং সরকারও কোম্পানিগুলোকে বেশি শেয়ার কর্মী নিয়োগ করতে উতসাহ দেয়। কুয়াং তুং প্রদেশের তুং কুয়ান শহর ও আন হু প্রদেশের হ্য ফে শহরসহ নানান সরকার সম্প্রতি অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করার প্রস্তাব দেয়।
তাহলে কীভাবে একজন 'শেয়ার কর্মী' নিয়োগ করা হয়? দুটি পদ্ধতি আছে: একটি হল দুটি কোম্পানি ও কর্মীর সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করা, যেমন: যদি একটি রেস্তোরাঁ তার নিজের কর্মীকে একটি সুপারমার্কেটে অস্থায়ীভাবে 'ভাড়া' দেয়, তাহলে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। অন্য একটি পদ্ধতি হল: তৃতীয় পক্ষের শ্রম সংস্থার মাধম্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা। পাশাপাশি কিছু ইন্টারনেট কোম্পানিও কর্মসংস্থানের তথ্য প্রকাশ করে। কোম্পানি ও কর্মী এ ওয়াবসাইটের মাধ্যমে যেমন নিয়োগ তথ্য প্রকাশ করতে পারে তেমনি দেখতেও পারে। শেয়ার কর্মীর বেতন ঘন্টা হিসেবে লেনদেন করা হয় বা ইউনিট সময়ে তারা কত কাজ শেষ করে সে হিসেবে দেওয়া হয়। তাদের মাসিক বেতন আগের কোম্পানির মাধ্যমে তাদেরকে দেওয়া হয় এবং সামাজিক নিশ্চয়তাও আগের কোম্পানি সরবরাহ করে।
কুয়াং তুং ইউ ছি নামের একটি গাড়ি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের কর্মীদের কোন কাজ নেই। তাই তারা চিংতুং লজিস্টিক কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। শুরুতে , কিছু কর্মীর ধারণা ছিল তারা চাকরি হারাচ্ছে। কিন্তু কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি কর্মীদেরকে জানায়, তারা অস্থায়ীভাবে চিংতুং লজিস্টিকে কাজ করবেন। চিংতুং তাদের বেতন গাড়ি কোম্পানিকে দেয়; গাড়ি কোম্পানি তাদেরকে বেতন দেয়। গাড়ি কোম্পানিও প্রতিশ্রুতি দেয় যে, শেয়ার কর্মীতদের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠানো হবে না। হ্য মা ফ্রেশ ও হ্যলো বাইসেইকেলসহ নিয়োগ কোম্পানিও তাদের শেয়ার কর্মীর অধিকার রক্ষা করে। তাদেরকে বিনামূল্যে মহামারী বীমার জন্য আবেদনে উৎসাহ দেয় এবং তৃতীয় পক্ষের শ্রম সংস্থার মাধ্যমে শেয়ার কর্মীর জন্য ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা ক্রয় করে।
পাশাপাশি 'শেয়ার কর্মী' খুব নমনীয় একধরনের কর্মসংস্থান। আগের কোম্পানি ব্যবসা শুরু করলে কর্মীরাও আগের কর্মস্থানে ফিরবেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ৯০০ জন হ্যমা ফ্রেশ দোকান ছেড়ে আগের কোম্পানিতে ফিরে এসেছেন।
সম্প্রতি চীনের মানবসম্পদ এবং সামাজিক নিশ্চয়তা মন্ত্রণালয় বলেছে, বর্তমানে মানবসম্পদের অভাব রয়েছে যেসব কোম্পানিতে, সেসব কোম্পানি বন্ধ থাকা কোম্পানির কর্মীদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিচ্ছে। যখন মহামারি শেষ হবে, তখন 'শেয়ার কর্মী' ব্যবস্থা আর থাকবে না।
তবে কোন কোন নিয়োগ কোম্পানি বলছে, শেয়ার সাইকেল একটি মৌসুমি ব্যবসা। প্রতি গ্রীষ্মকালে তার শীর্ষ সময়। তা ছাড়া, প্রতি বছরের ডাবল ১১ অনলাইন কেনাকাটা উত্সবে লজিস্টিক ব্যবসায় বেশ কর্মী লাগে। এমন সময় কোম্পানিও অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে চায়। হ্য মা ফ্রেম দোকান ব্যবস্থার শীর্ষ সময় প্রতিদিনের সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। তবে শপিং মলের ব্যবসা রাতে ব্যস্ত। তাই হ্য মা ফ্রেশও ভাবছে যে শপিং মল থেকে কিছু কর্মী "ধার"করবে, মহামারী শেষ হবার পরও।
ডিজিটাল অর্থনিীতি থিংক ট্যাঙ্কের জনৈক গবেষক বলেন, আরও বেশি কোম্পানি শেয়ার কর্মী নিয়োগ করতে থাকলে ভবিষ্যতে 'শেয়ার কর্মী' ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নতুন কোম্পানি গড়ে উঠতে পারে। (শিশির/আলিম/রুবি)