অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বই 'আমার চোখে নয়াচীন' থেকে পড়ে শোনাচ্ছি।
উহান অস্থায়ী হাসপাতালে মহামারী প্রতিরোধে নিয়োজিত যুবকদের গল্প
চীনের হুনান প্রদেশের ছাংতে শহরের ১ নম্বর হাসপাতালের নার্স চিয়াং হান ইউ ১০ ফেব্রুয়ারি উহানে পৌঁছান। হুনান প্রদেশের সহকারী চিকিত্সক হিসেবে তিনি সহকর্মীদের সাথে উহানে আসেন। হুনান প্রদেশের ৪০ জন চিকিত্সকের মধ্যে ৬ জন ছাংতে শহরের। তাদের মধ্যে সবচেয়ে জুনিয়ার নার্স চিয়াং। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, '২০০৩ সালে যখন সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়, তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। তখন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইরত চিকিত্সক ও নার্সদের ছবি দেখেছি। তাদের দেখে ভালো লাগতো। এখন আমিও একজন নার্স। তাই মহামারী ঠেকাতে আমিও অবদান রাখতে চাই।'
মহামারী প্রতিরোধক কাজে যুক্ত হবার জন্য তিনি লম্বা চুল ছোট করেন। অস্থায়ী হাসপাতালে আসার প্রথম দিনে তিনি বিভিন্ন ধরনের লাগেজ পরিবহনে আক্রান্তদের সহায়তা দেন। গভীর প্রতিরোধক পোশাক পরে এসব ভারী জিনিস টানা কষ্টের কাজ ছিল।
অস্থায়ী হাসপাতালে ভীষণ ব্যস্ততা। চিকিত্সকদের সহায়তা দেওয়ার সাথে সাথে রোগীদের খাবার, ওষুধ ও পানি দেওয়া; শয্যা ঠিক করা; লাগেজ বহন করা; এবং বয়স্ক রোগীদের টয়লেটে যেতে সাহায্য করা ইত্যাদি সবই তাকে করতে হয়। প্রতিরোধক পোশাক পরলে সে সবসময় ঘামে।
৩৮ বছর বয়সের চিকিত্সক থাং মিং চিয়ে ছাংতে শহর থেকে আসা চিকিত্সকদের অন্যতম। তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস বিভাগের ডক্তার। মহামারী প্রতিরোধ যেন যুদ্ধের মতো। উহান যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধ জয় করতে চাইলে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে হবে। তিনি এমন কথা বলেন। প্রথম দিনে অস্থায়ী হাসপাতালে পৌঁছে তিনি কয়েকটি কথা লেখেন, যেমন: যারা ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের নিয়মিত ওষুধ কতোদিনের বাকি রয়েছে; হাসপাতালের উজ্জ্বল বাতি থেকে রোগীদের চোখ বাঁচাতে কোনো কাভার আছে কি না; বয়স্ক রোগীরা টয়লেট ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে কি না; ডায়াবিটিসের রোগীদের সময়মতো খাবার খেতে হবে ইত্যাদি। এ সম্পর্কে চিকিত্সক থাং বলেন, 'আমরা যেন বহুমুখী সৈন্যদের মতো যথাযথভাবে রোগীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করি। কারণ, এ হাসপাতালে তাঁদের কাছে সবচেয়ে নির্ভরশীল লোক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়।'
অস্থায়ী হাসপাতালের রোগীদের অবস্থা সাধারণত গুরুতর নয়। তবে কেউ কেউ মানসিক চাপের সম্মুখীন হন। এ সম্পর্কে চিকিত্সক থাং বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং মানসিক শক্তি যোগান।
রোগীদের উত্তেজনা শিথিল করার জন্য চিকিত্সকরা তাদের নিয়ে মার্শাল আর্ট চর্চা করেন এবং নাচগান করেন। শরীরচর্চা মানসিক অস্থিরতা দূর করে। অনেকে জানেন না, গভীর প্রতিরোধক কাপড় পড়ে নৃত্য করা খুবই কঠিন ব্যাপার এবং নিঃশ্বাসের সমস্যাও হয়। তবে রোগীদের মানসিক সমস্যা সমাধানে চিকিত্সকরা এ অবস্থায়ও সবার সাথে নৃত্য করেন।
রাতে হাসপাতাল থেকে হোস্টেলে ফিরে যান নার্স চিয়াং। তিন স্তরের টুপি, দুই মাস্ক, তিনটি জুতার কাভার আর তিনটি গ্লাস এবং প্রতিরোধক কাপড়চোপড় ছেড়ে দিয়ে তিনি মনোযোগ দিয়ে হাত ও মুখ ধুয়ে নেন। গোসল শেষ করে কাপড়চোপড় জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হবে। সব কাজ শেষ করতে করতে গভীর রাত হয়। যদিও অস্থায়ী হাসপাতালের কাজের চাপ বেশি, তবে রোগীদের সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করা চিকিত্সদের জন্য সুখের ব্যাপার। নার্স চিয়াং হাঁসিমুখে এ কথা বলেন।
সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন বা মিস করেন, আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn,আমাদের যোগাযোগ ইমেল ঠিকানাben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)