বাংলাদেশে করোনা নিয়ে শিথিলতা আত্মঘাতী হবে
  2020-03-15 19:22:52  cri

১৪ মার্চ রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ঘোষণা দেন- বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত ৩ জনই সুস্থ হয়েছেন-অর্থাৎ দেশে আর কোনো করোনা রোগী নেই। কয়েক ঘন্টা ব্যবধানে রাতে তিনি আরেকটি ঘোষণায় জানান নতুন করে দুই জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে দেশে।

এই একটি ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে করোনা-সংক্রমণ কতটা অনিশ্চিত একটি বিষয়। গত কয়েক মাসে চীন ও পরবর্তীতে ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় ১৫৩টি দেশ ও অঞ্চলে দেড় লাখের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এতে মারা গেছেন ৫ হাজার ৮৩৯ জন। চীনে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ইউরোপের দেশ ইতালিসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ হিমশিম খাচ্ছে করোনা-দুর্যোগ মোকাবেলায়।

সরকারের পূর্বপ্রস্তুতির কারণে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখনো বড় আকারে দেখা দেয়নি। কিন্তু বড় ঝুঁকিতে এখনো বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র শিথিলতা ডেকে আনতে পারে বড় বিপর্যয়। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে একাধিকবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। দৃশ্যত বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সতর্ক ও তৎপর রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু বিষয় মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিন জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ ঘটনার পরপরই অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যায় মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজারে। পরে বাজার থেকেই একরকম উধাও হয়ে যায় এ সব সামগ্রী। উচ্চমূল্য দিয়েও আর পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় এ সব সরঞ্জাম। হাইকোর্টের নির্দেশে সরকার দাম বেধে দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও বিশেষ একটা কাজ হয়নি।

১ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে প্রথম দফায় ৩১২ জনকে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের হজক্যাম্পে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। স্বাস্থ্যপরীক্ষা শেষে করোনামুক্ত ঘোষণা করে তাদের বাড়ি যেতে দেওয়া হয়। মাঝখানে করোনা সন্দেহে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বেশ কজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ও হোম-কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। সারাদেশে এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। এ সব উদ্যোগের ফলে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি হ্রাস পায়।

কিন্তু ১৪ মার্চ ভয়াবহ করোনা আক্রান্ত ইতালি থেকে আসা ১৪২ জনকে কোয়ারেন্টাইনে না রেখে বাড়ি যেতে দেওয়ায় জনগণের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছি। সব মহলে প্রশ্ন উঠেছে কেন তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলো না। একই দিন ভারতের দিল্লি থেকে আসা ২৩ জনকেও ছেড়ে দেয়া হয়। তবে চীন থেকে দিল্লি পৌঁছার পর তারা সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তাই তারা করোনামুক্ত এটা-নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ১৪ তারিখ রাতে ইতালি থেকে আসা আরো ৪৮ জনকে গাজীপুরের পুবাইলে রাখা হয়েছে। আর ১৫ মার্চ সকালে ইতালি থেকে আসা আরো ১৫৫ জনকে আশকোনায় হজক্যাম্পে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এদেরও আগের ১৪২ জনের মতো ছেড়ে দেওয়া হবে কিনা- এপ্রশ্ন সবার মনে।

১৪ মার্চ ইতালি থেকে আসা ১৪২ জন হজক্যাম্পের অব্যবস্থাপনা ও কোয়ারেন্টাইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। আর রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আইই্ডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন ইতালি ফেরত ওই ১৪২ জন সুস্থ তাই তাদের নিজ নিজ বাড়িতে হোম-কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের মাধ্যমে তারা আইইডিসিআরের নজরদারিতে থাকবেন।

কিন্তু তাদের এ বক্তব্য আশ্বস্ত করতে পারছে না সাধারণ মানুষকে। করোনা সতর্কতা হিসেবে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিধান বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে এবং বিশ্বের সব দেশ তা কঠোরভাবে তা পালন করছে। সেক্ষেত্রে ইতালি ফেরত এতজনকে ছেড়ে দেওয়া কোনো বিবেচনায় ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

আইইডিসিআর পরিচানল অধ্যাপক সেব্রিনা যদিও বলছেন তারা হোম-কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে ইতালিসহ বিদেশ-ফেরতদের কাছে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। এমনকি না মানলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করার সতর্কবাণী দিচ্ছেন। কিন্তু কে মানলো, আর কে মানলো না তা নিশ্চিত করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বিষয়টি আত্মঘাতী হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।

এদিকে করোনা আতঙ্কে স্কুল-কলেজ ছুটি দিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে। সরকার এখনো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দূর করতে সরকার এ বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। বন্ধের পড়ালেখা সামনে গ্রীষ্মের ও রমজানের ছুটিতে পুষিয়ে নেয়া যাবে বলে মনে করেন তারা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040