চীনের হুনান প্রদেশের একটি পুরাতন রাইস নুডলস দোকানে পুনরায় লেনদেন শুরু হয়েছে। সেখানকার দুধ চায়ের দোকানেও এখন দুধ চা পাওয়া যাচ্ছে। ছাং শা শহরের মানুষ সম্প্রতি উইচ্যাটে এসব নিয়ে কথা বলেন। কমার্সিয়াল স্ট্রিটের দোকানগুলো ধীরে ধীরে খোলা হচ্ছে। স্মার্ট কারখানায় হাইস্পিড ট্রেন ও ক্রেনসহ বড় বড় সরঞ্জামের উত্পাদন শুরু হচ্ছে। নভেল করানোভাইরাস মহামারীর কারণে একসময় এগুলো বন্ধ ছিল। আজকের 'পুবের জানালা' আসরে আমরা হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাং শা শহরের স্বাভাবিক হয়ে ওঠার গল্প শোনাবো।
সকাল ৮টা, ছাং শা শহরের থিয়ান সিন এলাকার একজন নাগরিক ইয়ান চেং একটি পুরাতন রাইস নুডলস দোকানে আসেন। তিনি একটি নুডলস অর্ডার করেন। অনেক দিন পর তিনি আবার সুস্বাদু ও পরিচিত এ খাবার খান। তবে আগের চেয়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। দোকানে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা একবার মাপা হয় এবং হাত ধুতে হয়। তার পর একটি টেবিলে কেবল একজন বসতে পারেন। ইয়ান ছেং বলেন, বসন্ত উত্সবের ছুটির পর তিনি প্রথমবারের মতো এ নুডলস খেলেন। এ স্বাদ তার খুব পরিচিত। মহামারী দেখা দেওয়ার পর সবাই সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বাড়িতে ছিলেন। এখন কারখানার উত্পাদন শুরু হচ্ছে এবং অফিসগুলো ধাপে ধাপে খুলতে শুরু করেছে। দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোও আবার খুলেছে।
রাতের খাবার হু নান প্রদেশে খুব জনপ্রিয়। রাতের সময় মানুষ বাইরে খেতে পছন্দ করেন এবং রাতের খাবারের মেলা হু নানের বিশেষ একটি দৃশ্য। মহামারির কারণে এ মেলাও বন্ধ ছিল। সম্প্রতি, ছাং শা শহরের ইউ হুয়া এলাকার একটি রাতের খাবার রাস্তা আবার খোলা হয়। যদিও মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষ এখনও শুধু দোকান থেকে খাবার কিনতে পারে, সেখানে বসে খেতে পারে না। বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। বাড়িতে বসে অনলাইনে অর্ডারও করা যায়। তবুও মানুষ আবার রাতের পছন্দের খাবার খেতে পারছেন, এটাই বড় কথা।
ওয়াং সিং পাং রাতের খাবার পছন্দ করেন। তিনি নিজের প্রিয় দোকানে এসে অর্ডার দিলেন এবং উইচ্যাটে মূল্য পরিশোধ করলেন। খাবার নিয়ে তিনি বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে খাবেন বলে জানালেন।
খাবার, মানুষের মনের শান্তি আনতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য প্রিয় খাবার খেতে পারা মানে তাদের জীবন ঠিক পথে ফিরে এসেছে।
ছাংশা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত উ ই বাণিজ্যিক এলাকা যেমন শহরের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জায়গা তেমন পর্যটকদের প্রিয় স্থান। প্রতিবছর লক্ষ-কোটি মানুষ এখানে আসে। সম্প্রতি এ এলাকার একটি হাঁটার রাস্তায় বেশ কয়েকটি দোকান আবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
ছাং শা বিখ্যাত ও জনপ্রিয় একটি দুধ চার ব্রান্ড 'ছা ইয়ান ইউয়ে স্য' হাঁটার রাস্তায় একটি দোকান দিয়েছে। দুপুর ১২টায় খোলা হবে এ দোকান তবে ১১টা থেকে মানুষ এখানে লাইন দিতে শুরু করে। কেবল একটি দোকান খোলা হলেও এ রাস্তার ব্যবসা পুনরুদ্ধার হবে মনে করা হয়।
এ হাঁটার রাস্তার পরিচালনা কমিটির একজন কর্মকর্তা জানায়, এ রাস্তায় দোকান ১০০০টির বেশি। এখন ২০-৩০ শতাংশ দোকান পুনরায় খুলেছে। যারা মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সরকার নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণে সক্ষম তাদেরকে ব্যবসা আবার শুরু করতে উত্সাহ দেয় সরকার; পাশাপাশি সহায়তাও দেয়।
উ ই বাণিজ্যিক এলাকার মার্চেন্ট জোটের পরিচালক পান সিয়াও লিন বলেন, গাড়ি ও মানুষ আগের চেয়ে বেশি দেখা যায়। যদিও রাতে বেশির ভাগ দোকান বন্ধ হয় এবং বার ও রেস্টুরেন্টসহ অনেক দোকান এখনও বন্ধই রয়েছে, তবে বাণিজ্যিক এলাকায় দেখা যায় কিছু পুনরুদ্ধার প্রবণতা।
ভাড়া কমিয়ে দেয়াসহ নানা নীতির মাধ্যমে আরও বেশি দোকানকে উত্সাহ দেওয়া হচ্ছে। নাপিতের দোকান, গাড়ি ধোয়ার দোকান, বেকারিসহ ছোট তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে পুনরায় কাজ শুরু করছে। তারা যেমন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে, তেমনটি জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণশক্তি যোগায়।
ছাং শা লু কু শিল্প পার্কে zoomlion কোম্পানির প্রধান প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ কাও রং চি একটি ক্যামেরা সেট আপ করেন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার ফ্লাইন্টকে একটি নতুন যন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ২০০০ জন অনলাইনে তার প্রদর্শন শুনেন ও দেখেন ।
অন্যদিকে, কারখানায় কর্মী ও রোবট একসাথে কাজ করছে। সবাই মাস্ক পরেন এবং নিয়মিত কারখানা জীবাণুমুক্ত রাখেন। কারখানায় কাজকর্ম ঠিক আগের মতোই।
ছাং শা চীনের বিখ্যাত নির্মাণ যন্ত্রপাতি নগর। zoomlionসহ বেশ কয়েকটি নেতৃস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পুনরায় উত্পাদন শুরু করে। এ পর্যন্ত zoomlion কোম্পানির কংক্রিট যন্ত্রপাতি, উত্তোলন যন্ত্রপাতি, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ নানা বিভাগ উত্পাদন আবার শুরু করে। ৭০ শতাংশ কর্মী কারখানায় ফিরে আসে এবং উত্পাদনক্ষমতার ৭০-৮০ শতাংশ কাজে লাগছে।
অন্যদিকে, প্রকৌশলী বিন মিয়াও ও পেং ছিং 'Sirius' নামে একটি হাইস্পিড ট্রেনের ইনস্টলেশন ডিভাইস পরীক্ষা করেন। পরে এ ট্রেনগুলো চেক প্রজাতন্ত্রে রফতানি করা হবে।
'Sirius' ট্রেন হল ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনের প্রথম রপ্তানিকৃত হাই স্পিড ট্রেন। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম এমন ট্রেন চেক প্রজাতন্ত্রে রফতানি করা হয়। এখন বাকিগুলো তাড়াতাড়ি উত্পাদন করছে সিআরআরসি চুচৌ locomotive লিমিটেড। এখন কোম্পনির ৮৫ শতাংশ কর্মী পুনরায় কাজ শুরু করেছেন। বিদেশে তাদের প্রকল্পও ধাপে ধাপে ঠিক পথে ফিরে আসছে। মেক্সিকো ও ফিলিপিন্সসহ বিশটির বেশি বিদেশি প্রকল্পে কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে।
কোম্পানির সিইও চৌ ছিং হ্য বলেন, 'আমাদের হাই স্পিড ট্রেন বিশ্বের নানা জায়গায় চলছে। আমরা মহামারীকেও পরাজিত করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।'
বসন্তকাল আসবে। আমরা বিশ্বাস করি, চীন মহামারীর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে চূড়ান্ত জয় লাভে সক্ষম হবে এবং দেশব্যাপী সকল মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সক্ষম হবে। (শিশির/আলিম/রুবি)