নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে প্রচলিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর সবকটিই হাস্যকর ও অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করে চীন। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত এসব অযৌক্তিক ও হাস্যকর তত্ত্বে কান না-দিয়ে যৌথভাবে মহামারী মোকাবিলা করা। এদিকে শুক্রবার চীনের মূলভূখণ্ডে কোভিড-১৯ রোগে নতুন করে মারা গেছে ১০৯জন। পাশাপাশি কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের চিকিত্সায় তিনটি ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রিয় শ্রোতা এ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আজ (শনিবার) প্রকাশিত এক খবরে জানায়, শুক্রবার চীনের মূলভূখণ্ডে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩৯৭জন এবং সুস্থ হয়েছে আরও ২৩৯৩জন। এদিন মারা গেছে ১০৯জন; নতুন আরও ১৩৬১জনকে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত, চীনের মূল ভূখণ্ডে নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬,২৮৮জন, সন্দেহভাজন ৫৩৬৫জন, সুস্থ হওয়া মানুষের মোট সংখ্যা ২০৬৫৯জন, মারা গেছে ২৩৪৫জন, আক্রান্তদের ঘনিষ্ঠ ১১৩,৫৬৪জনকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে চীন সর্বাত্মকভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুধু চীনের জনগণই নয়, বরং বিশ্ববাসীর নিরাপত্তায়ও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পাশ্চাত্যের কোনো কোনো গণমাধ্যমে কোভিড-১৯ গবেষণাগারে সৃষ্টি বলে গুজব ছড়ানো হয়। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) পর্যন্ত বার বার বলছে যে, পরীক্ষাগারে এ ভাইরাস সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নাল 'দ্য ল্যানসেট'-এ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশ্বের প্রথম পর্যায়ের ২৭ জন বিশেষজ্ঞ তীব্রভাবে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভাইরাসসম্পর্কিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নিন্দা জানান। বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গত বৃহস্পতিবার জেনিভায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, মহামারী সম্পর্কে অনুমানভিত্তিক কথা বলা বা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া উচিত না। তিনি বলেন, বর্তমানে হু'র বিশেষজ্ঞদল চীনের কর্মীদের সঙ্গে ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। অপ্রমাণিত তথ্য বিশ্বাস করা উচিত না।
এদিকে, চীনে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এ আক্রান্তদের চিকিত্সায় তিনটি ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওষুধগুলো হচ্ছে ফ্যাপিলাভির, স্টেম সেল থেরাপি, ও রেডসিভ।
এর মধ্যে ফ্যাপিলাভির চীনের শেনচেন হাসপাতালে ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়েছে। স্টেমসেল থেরাপিতে ইতোমধ্যেই ৪ জন গুরুতর রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আর রেডসিভ নামক ওষুধ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। উহানের ১০টি হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এই ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার উহানের স্টেট কাউন্সিলের তথ্য অফিসের সাংবাদিক সম্মেলনে সেন্ট্রাল স্টিয়ারিং গ্রুপের সদস্য ও স্টেট কাউন্সিলের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল তিং সিয়ানইয়াং জানান, সামগ্রিকভাবে হুপেই ও উহানের মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলি চালু রাখা হলে অবস্থার আরও উন্নতি ঘটবে। তিং জানান, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে হুপেই প্রদেশে নতুন নিশ্চিত রোগী এবং সন্দেহজনক কেসের সংখ্যা কমেছে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনও অনেক জটিল। সবাইকে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
সর্বোপরি, চীনা জনগণ ও সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারী কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। এ জন্য চীনকে যে বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে, তার ভূয়সী প্রশংসাও করেছে আন্তর্জাতিক সমাজ। তবে কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করার পরিবর্তনে কুত্সা রটিয়ে যাচ্ছে এবং চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে না-হক অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বেইজিং তার প্রতিবাদ জানায়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এইচ১এন১ ফ্লু'র প্রকোপ ঘটে। মার্কিন সরকার ফ্লু'র প্রকোপ দেখা দেওয়ার ৬ মাস পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ফলে এ ফ্লু বিশ্বের ২১৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের ৬ কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় প্রায় ৩ লাখ। এখনও প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ২.২ কোটি মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হন এবং কমবেশি ১২ হাজার মানুষ এতে মারা যাচ্ছে।