আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলাদেশের জনগণের ভাষা আন্দোলন এবং ভাষাশহীদদের স্মরণে পালিত দিবস। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে ঢাকায় কয়েকজন ছাত্র-জনতা পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তাঁদের স্মরণে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা বিশ্বে এ দিবস পালন শুরু হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয় যে, যেহেতু ইউনেস্কোর উদ্দেশ্যসমূহের মূলে রয়েছে বিশ্বের ভাষাসমূহের পারস্পরিক সহঅবস্থান এবং যেহেতু বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মূর্ত ও বিমূর্ত সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম, সেহেতু এ দিবসের স্বীকৃতি শুধু ভাষাগত বৈচিত্র্য ও বহুভাষিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না, বরং বিশ্বে ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত ঐতিহ্যের পূর্ণ সচেতনতার জাগরণও ঘটাবে এবং সমঝোতা, সহিষ্ণুতা ও মতামতের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সংহতিকে উদ্বুদ্ধ করবে।
প্যারিস অধিবেশন অনুধাবন করতে পেরেছিল যে, মাতৃভাষাসমূহের উন্নয়ন ও বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা কার্যকর পন্থাসমূহের অন্যতম হলো বিশ্বব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠা করা এবং এ দিনে সদস্য রাষ্ট্রসমূহে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে ভাষাবিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করা। এ উপলক্ষে প্যারিস সম্মেলন ২১ ফেব্রুয়ারিকে উপযুক্ত দিন হিসেবে নির্ধারণ করে। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল মাতৃভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নজিরবিহীন আত্মত্যাগের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি। ১৯৫২ সাল থেকে বাংলাদেশের মানুষ এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কতটা ভাবগম্ভীর পরিবেশে অদ্যাবধি দিবসটি পালন করছে তাও এ সম্মেলনে যথার্থ গুরুত্বের সঙ্গে লিপিবদ্ধ হয়।