১. সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্র তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঝুঁকিও কমে গেছে। তাই চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা যায়। চীন-মার্কিন প্রথম পর্যায়ের আর্থ-বাণিজ্যিক চুক্তি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর চাপ প্রশমন করেছে বলেও আইএমএফ মনে করে।
আইএমএফ আরও বলেছে, চলমান মহামারী সংকটের কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে, সেই প্রভাব হবে ক্ষণস্থায়ী।
২. শাংহাইয়ে দ্বিতীয় শাখা খুলতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কোস্টকো হোলসেল কর্পোরেশান। এ লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার শাংহাই নতুন জেলার খাংছিয়াও শিল্প এলাকায় কোস্টকো ও চীনের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৪৭৩১৯.২ বর্গমিটারের একটি প্লট অধিগ্রহণের চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্লটের মূল্য ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৮০ লাখ ইউয়ান।
কোস্টকোর দ্বিতীয় শাখার জন্য নির্ধারিত স্থানটি শাংহাই ডিজনির অদূরে অবস্থিত। বছর দুয়েক আগে কোস্টকো (চায়না) ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে শাংহাই ফুতং খাংছিয়াও (গ্রুপ) কোম্পানি লিমিটেড কোস্টকোর দ্বিতীয় শাখা খোলার ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
উল্লেখ্য, কোস্টকো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম রিটেইলার। কোম্পানিটি গত বছর চীনের বাজারে প্রবেশ করে। চীনে একমাত্র শাংহাইতেই কোম্পানিটির শাখা আছে।
৩. গত মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং অনলাইনে এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, চীনা ও বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নকাজে অংশ নিতে হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু লৌহ ও ইস্পাত কোম্পানি অভিযোগ করে যে, চীনা সরকারের ভর্তুকিনীতি ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কারণে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে। এ মন্তব্যের বিরোধিতা করে মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ যৌথভাবে বাস্তবায়নযোগ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক প্রস্তাব। এতে উন্মুক্ততা, সহনশীলতা ও স্বচ্ছতার ধারণা কাজে লাগানো হচ্ছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে 'এক অঞ্চল, এক পথ' বাস্তবায়ন করছে চীন। এতে যৌথ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে।
৪. চীনা ও মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক ব্যবসায়িক সহযোগিতাকে বাস্তব ও ন্যায্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রকে তাগিদ দেয় চীন। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত উস্কানিমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকা। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং অনলাইনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা বলেন।
মুখপাত্র বলেন, সম্প্রতি মার্কিন সরকার চীনের বাণিজ্যিক বিমান সি-৯১৯-এর ইঞ্জিন সরবরাহ না-করতে জেনারেল মটরস (জিএম) কোম্পানিকে তাগিদ দিয়েছে। মার্কিন সরকারের দাবি, চীনারা ইঞ্জিনের প্রযুক্তি শিখে ফেলবে এবং এতে মার্কিন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নষ্ট হবে। বস্তুত, এমন দাবি হাস্যকর।
কেং শুয়াং বলেন, ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটনের বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে জিএম কোম্পানি। কোম্পানি মনে করে, প্রযুক্তি নকল করার ব্যাপারে কিছু মার্কিন কর্মকর্তার ভয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কোম্পানি দীর্ঘকাল ধরেই চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু কোম্পানির কোনো প্রযুক্তি চীন নকল করেনি।
মুখপাত্র আরও বলেন, এটি রাজনৈতিক উপায়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক সহযোগিতা নষ্ট করার মার্কিন সরকারের আরেকটি নেতিবাচক উদ্যোগ।
৫. মালবাহী ট্রেন এক্স-৮০৫৯ সম্প্রতি যন্ত্রাংশ ও হালকা শিল্পপণ্য নিয়ে চীনের শেনইয়াং পূর্ব রেলস্টেশন থেকে মস্কোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ১৮ দিন পর ট্রেনটি মস্কো পৌঁছাবে।
চীনে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরার পর লিয়াওনিং প্রদেশ থেকে ট্রেন চলাচল গত ৩ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ছিল। শুল্ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ভাইরাসের কারণে কোনো কোনো পণ্য সড়ক পথের পরিবর্তে রেলপথে পরিবহন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শেনইয়াং ও মানচৌলি থেকে ইউরোপগামী ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর।
৬. এদিকে, সম্প্রতি গাড়ীর যন্ত্রাংশ বহনকারী একটি ট্রেন সিনচিয়াংয়ের খর্গোস থেকে পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এটি ফেব্রুয়ারি মাসে খর্গোস দিয়ে ইউরোপে যাওয়া ৫০তম ট্রেন। একই দিন, ৮৫০ টন পণ্য নিয়ে একটি ট্রেন আলাশানকৌ বন্দরে এসে পৌঁছায়।
১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খর্গোস ও আলাশানকৌ বন্দর দিয়ে চীনের বাইরে আসা-যাওয়া করেছে ৭৩০টির বেশি ট্রেন। চীন এসব ট্রেনে বিদেশে রফতানি করেছে মূলত মেকানিকাল পণ্য, পোশাক, এবং ইলেকট্রনিক পণ্য। অন্যদিকে আমদানি করেছে মূলত সুতা ও বিল্ডিং উপকরণ।
৭. ইউরোপীয় বিমানের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মার্কিন সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিমান নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাস। স্থানীয় সময় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে এয়ারবাস এ অসন্তোষ প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দু'পক্ষের বাণিজ্যিক সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়াবে এবং মার্কিন এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোকেও অনিশ্চয়তায় ফেলবে। অতিরিক্ত শুল্কের ফলে এয়ারলাইন ও বিমানযাত্রীদের ব্যয় বাড়বে।
উল্লেখ্য, মার্কিন বাণিজ্যিক প্রতিনিধি কার্যালয় সম্প্রতি ইউরোপের সুপরিসর বেসামরিক বিমানের ওপর আমদানি-শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়।
৮. ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন খাতে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছে তুরস্ক। সম্প্রতি দেশটির শিল্প ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মুস্তাফা ভারনাক এ কথা বলেন।
ইস্তাম্বুলে আয়োজিত 'ইউকে টেকনোলোজি কনফারেন্স'-এ মন্ত্রী বলেন, তার দেশ মূলত পেট্রোক্যামিকেল, পরিবহন প্রযুক্তি, সমন্বিত খনিকাজ, নিরাপত্তা, ও ইলেক্ট্রনিক্স খাতে বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
তিনি দাবি করেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তুরস্কে সুবিধা পাবে। তিনি দেশের শক্তিশালী অবকাঠামো, বড় বাজার, দক্ষ শ্রমশক্তির কথা তুলে ধরেন।
৯. গেল বছর শ্রীলঙ্কা রফতানি করেছে ১৬১৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা। এর মধ্যে পণ্য রফতানি করেছে ১১৯৪ কোটি ডলারের এবং সেবা ৪২০ কোটি ডলারের। স্থানীয় গণমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকাশিত তথ্যানুসারে, শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বেশি পণ্য ও সেবা রফতানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে, ৩১৩৯ মিলিয়ন ডলারের। এর পরেই আছে যথাক্রমে ব্রিটেন (৯৯৮ মিলিয়ন ডলার), ভারত (৭৫৯ মিলিয়ন ডলার), ইতালি (৫৩১ মিলিয়ন ডলার), ও বেলজিয়াম (৩৫২ মিলিয়ন ডলার)-এর স্থান।
১০. ২০১৯ সালে বুলগেরিয়ায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। বুলগেরিয়ান ন্যাশনাল ব্যাংকের হিসেব অনুসারে, গেল বছর দেশটিতে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ এসেছে ৬২৯.৯ মিলিয়ন ইউরো, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭.৩ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে নেদারল্যান্ডস্ থেকে, ৪০৪.২ মিলিয়ন ইউরো। এর পরেই আছে যুক্তরাজ্য ও লুক্সেমবুর্গের স্থান।
১১. বাংলাদেশে কর্মরত বৈধ-অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের মাধ্যমে বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (প্রায় ৩১৫ কোটি মার্কিন ডলার) বিদেশে পাচার হচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এসব বিদেশি কর্মীর বেশির ভাগই ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করছেন। অবৈধ বিদেশি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ না-থাকায় এদের সংখ্যা বাড়ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে 'বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি কর্মীর ন্যূনতম সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। বিদেশি কর্মীদের বেশিরভাগই ট্যুরিস্ট ভিসা বা ভিসা অন অ্যারাইভাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পরে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দেন। আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তারা নিজ দেশে বা বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে চলে যায় এবং পুনরায় একই ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করে। সেই ভিসায় আবার বাংলাদেশে আসে।
দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের নথিপত্রে বিদেশি কর্মীর কোনো উল্লেখ থাকে না, তাদের জন্য পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। আবার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা আইন (সংশোধিত), ২০১৫ অমান্য করে অধিকাংশ বিদেশি নাগরিকই হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে থাকেন। তথ্যানুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর অঞ্চল ১১-তে মোট ৯৫০০ জন বিদেশি কর্মী সর্বমোট ১৮১ কোটি টাকা আয়কর প্রদান করেছেন। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুসারে দেশে কর্মরত বিদেশিদের মোট আয়ের ৩০ শতাংশ কর হিসেবে উল্লিখিত অর্থবছরে এই বিদেশি কর্মীদের মোট আয়ের পরিমাণ ৬০৩ কোটি টাকা হিসেবে তাদের গড় মাসিক বেতন হয় ৫৩ হাজার টাকা বা ৬০০ ডলার। অথচ এ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদেশি কর্মীদের ন্যূনতম মাসিক গড় আয় ১৫০০ ডলার বা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অর্থাত্, কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে বৈধ প্রক্রিয়ায় কর্মরত বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত বেতন গোপন করা হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম বেতন প্রদর্শিত হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকৃত বেতনের এক-তৃতীয়াংশ বৈধভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় এবং বেতনের বাকি অংশ অবৈধভাবে নগদ দেওয়া হয়ে থাকে।
সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে অবৈধভাবে বিভিন্ন খাতে কর্মরত আড়াই লাখ বিদেশি কর্মীর আয়ের সিংহভাগই (বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা) পাচার হচ্ছে। এর মাধ্যমে কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা, যা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
টিআইবি বলছে, বিভিন্ন উত্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৪৪টিরও বেশি দেশের এসব নাগরিক বিভিন্ন খাতে কর্মরত। এর মধ্যে ভারতের নাগরিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইলসংশ্লিষ্ট খাতে। বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় গড়ে ২৩ থেকে ৩৪ হাজার টাকা ভিসা প্রতি লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। (আলিমুল হক)