বিদ্যাবার্তা ০২২৪
  2020-02-24 11:24:28  cri

আপনারা অবশ্যই জানেন জানুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে চীনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। এদিকে, মহামারী প্রতিরোধে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে চীনে এবং এ পর্যন্ত অনেক আক্রান্ত সুস্থ ওয়ে উঠেছেন। সন্দেহভাজন আক্রান্তদের সংখ্যাও আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। আজকের 'বিদ্যাবার্তা' আসরে আমরা মহামারী প্রতিরোধক কয়েকটি খবর শেয়ার করবো এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এ মহামারী সম্পর্কে নির্দেশনাও তুলে ধরবো।

তিন বাচ্চার 'অস্থায়ী মা'

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে বেইজিংয়ের তিথান হাসপাতালে ৪ বছর বয়সী ছেলে কাংকাং একাই হাসপাতালে বসে ছিল। কারণ, তার বাবা-মা ভাইরাসে সন্দেহভাজন আক্রান্ত হিসেবে হাসপাতালে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে ছিলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বেইজিংয়ের বাইরে। তাহলে, এ বাচ্চাকে কে দেখাশোনা করবে? তিথান হাসপাতালের নার্সদের পরিচালক ম্যাডাম বাই জিং অনেক উদ্বিগ্ন। যদিও হাসপাতালের নার্সরা অনেক ব্যস্ত, কিন্তু তাদের যৌথ উদ্যোগে, কয়েকজন নার্স ছুটির দিনে কাংকাংয়ের 'অস্থায়ী মা'-তে পরিণত হন। নার্স চাং সিয়াও লিং বলেন, 'কাংকাং আমার বাচ্চার সমবয়সী। তাই তার যত্ন নেওয়া আমার জন্য সহজ।' তিনি কাংকাংয়ের সাথে কার্টুন ফিল্ম দেখেন, ছবি আঁকেন আর গল্প করেন।

হাসপাতালের আরেকজন নার্স চিয়া শি স্যুয়ে কাজ শেষ করে বাড়িতে যেতে প্রস্তুত। তখন কাংকাং বলল, সে মাকে মিস করছে। এ কথা শুনে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় পিছিয়ে দিয়ে তার সাথে আরো কিছুক্ষণ খেলেন নার্স চিয়া।

আসলে তিথান হাসপাতালে কাংকাংয়ের মতো বাচ্চা আরো আছে। মেয়ে থুংথুং আর নাননানের পিতামাতাও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হাসপাতালে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে আছেন। তিন জন বাচ্চা অসুস্থ নয়। কিন্তু ভাইরাসে আক্রান্তের স্বজন হিসেবে তাদেরকেও পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।

হাসপাতালে আসার সময় কাপড়চোপড়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আনা হয়নি। তাই বাচ্চাদের যত্নে অস্থায়ী মা যা প্রয়োজন তা বাচ্চাদের জন্য কিনে ফেলেন। বাচ্চাদের বয়স কম। রাতে ঘুমের সময় তাদের যত্ন নিতে হয়। খাবার খাওয়ার সময় সহায়তা দিতে হয়। নার্স বাই এমন কথা শেয়ার করেন।

বাচ্চারা প্রতিদিন শুধু বিচ্ছিন্ন কক্ষের জানালার মাধ্যমে নিজের বাবা-মাকে দেখতে পারে। এ সম্পর্কে নার্স বাই বাচ্চাদের বললেন, 'তোমাদের বাবা-মা এখন ভাইরাস ও দৈত্যের সাথে লড়াই করছেন। দৈত্যকে পরাজিত করে আবার তোমাদের সাথে বাড়িতে যেতে পারবে।'

জন্ম দেওয়ার ২ দিন পর মেয়েকে দেখেন ভাইরাসে আক্রান্ত মা

এবারের গল্প উহান শহরের। ৮ ফেব্রুয়ারি থুংজি হাসপাতালের ধাত্রীবিদ্যা বিভাগে ম্যাডাম ছেন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ২ দিন পর তাকে দেখেন। তাও ভিডিওয়ের মাধ্যমে। স্বাস্থ্যকর বাচ্চাকে দেখে মার চোখে অশ্রু আসে। আসলে ৩০ জানুয়ারি ম্যাডাম ছেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে দেখা যায় তাঁর ফুসফুস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং স্বামীও অসুস্থ। ৫ ফেব্রুয়ারি ম্যাডাম ছেনের অবস্থা আরো দুর্বল হয়ে যায়। তখন ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের ডাক্তাররা তাঁর অপারেশন করেন। যেহেতু ম্যাডাম ছেন ভাইরাসে আক্রান্ত, তাই ডাক্তাররা বাচ্চার জন্মের সময়ই বিভিন্ন প্রতিরোধকব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ডাক্তার ও নার্সরা প্রতিরোধকপোশাক, মুখোশ ও চশমা পড়ে প্রস্তুতি নেন। ১০ মিনিটের অপারেশনে মেয়ের জন্ম হয়।

৮ ফেব্রুয়ারি দু'বার চেকআপ করার পর দেখা যায় বাচ্চা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে, ১৪ দিন বাচ্চাকে আলাদা রাখা হয়। সাবধানতা হিসেবে। এ সম্পর্কে থুংজি হাসপাতালের ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের পরিচালক ছেন লিং বলেন, 'এ পর্যন্ত ৮ জন সন্দেহভাজন আক্রান্ত মা বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন। তাদের বাচ্চাদের জন্মগ্রহণের পর সময়মতো ভাইরাস চেকআপ করা হয়। পরে তাদের আলাদাভাবে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণ করা হয়।'

মহামারী প্রতিরোধে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নির্দেশনা

জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে চীনের হুপেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন গোটা চীনে চলছে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই। মহামারী প্রতিরোধে একাধিক বার প্রয়োজনীয় দিক্‌-নির্দেশনা দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি ভিডিও ফোনের মাধ্যমে উহানে সেবা দেওয়া চিকিত্সকদের সাথে কথা বলেন এবং বেইজিংয়ের কমিউনিটি পরিদর্শন করে ভাইরাসের প্রতিরোধক-ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। চীনা চিকিত্সকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,

'চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে চিকিত্সকদের প্রতি আমি সম্মান প্রকাশ করিছি; জানাচ্ছি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।'

বেইজিংয়ের ছাওইয়াং এলাকার এক আবাসিক কমিউনিটি পরিদর্শনকালে তিনি বলেন,

'কমিউনিটি পর্যায়ে মহামারী ঠেকানো অতি গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিটিতে ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যাবে।'

আনহুয়ালি কমিউনিটির বাসিন্দাদের সাথে দেখা করে তিনি হাসিমুখে বলেন, 'এ বিশেষ মুহূর্তে, ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে, আমরা করমর্দন করবো না।' স্থানীয় নাগরিকদের খাবার ও শাকসবজির দাম সম্পর্কে সি খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, 'মহামারী প্রতিরোধে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হবো।'

 

ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট সি চীনের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার ও সিপিসি'র পার্টি-কমিটিগুলোকে নির্দেশনা দেন। সিপিসি'র সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'জীবন যেন থাই পাহাড়ের মতো ভারী। সিপিসি'র সদস্যরা বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তারা যে-দায়িত্বে বা স্থানেই থাকেন না কেন, তাদেরকে সাহসের সাথে কঠিন অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। চীনা জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যকে সবার আগে রাখতে হবে, মহামারীর তথ্য যথাযথভাবে সংগ্রহ করতে হবে। নাগরিকদের নেতৃত্ব দিয়ে যৌথভাবে মহামারী-প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সিপিসি'র নেতৃত্বে মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় নিশ্চিত হয়। এ কঠোর অবস্থা সিপিসি'র কর্মকর্তাদের জন্য বড় পরীক্ষা। এ পরিস্থিতিতে ভারী দায়িত্ব কাঁধে বহন করে কার্যকরভাবে মহামারী প্রতিরোধে সক্ষম হলে একজন উপযোগী ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।'

সুপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা অনুষ্ঠানের সময় শেষ হয়ে এলো। তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040