'চোং কুও নু পাই' বা 'leap লিপ'
  2020-02-20 16:42:13  cri

পরিকল্পনা অনুযায়ী এ চলচ্চিত্রটি চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার ইঁদুর বর্ষের প্রথম দিন প্রদর্শনের কথা ছিলো। তবে চীনের উহান শহর থেকে উদ্ভুত আকস্মিক মহামারীর কারণে চলচ্চিত্রটির মুক্তি বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনও বাতিল করা হয়। আশা করি, এই মহামারী শিগগিরি শেষ হবে এবং আমরা সিনেমা হলের বড় পর্দায় পছন্দের চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারবো।

আগে আমরা জানিয়েছিলাম, 'চোং কুও ন্যু পাই' মানে চীনের নারী ভলিবল দল। চীনের নারী ভলিবলের কথা উল্লেখ করতে গেলে এই দলের কোচের কথা অবশ্যই বলতে হবে। চীনের নারী ভলিবল দলের কোচদের মধ্যে অন্যতম হলেন লাং পিং। কেউ কেউ বলেন, লাং পিং সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে চীনের নারী ভলিবলের চেতনা বোঝা যাবে।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের নারী ভলিবল দলের কোচ লাং পিংয়ের জীবনের সঙ্গেও আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

যুগের স্মৃতি:

১৯৮৪ সালে অনেক চীনা সাদাকালো টেলিভিশনে সে সময়ের অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতা দেখেছিলেন। সেই উদ্দীপনাময় প্রতিযোগিতায় চীন বিজয়ী হয়। চীনের নারী ভলিবল দল ৩-০ পয়েন্ট নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে এবং প্রথমবারের মতো অলিম্পিক গেমসের চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে। সেই প্রতিযোগিতা সময়কে ছাড়িয়ে এক প্রজন্মের মানুষের স্মৃতিতে স্থান করে নেয়। এ ঘটনা এখনও অনেকের মনে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে; এটাই সে যুগের স্মৃতি! সে সময় থেকেই একজন খেলোয়াড় হিসেবে লাং পিং নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে শুরু করেন।

তবে সে সময় মানুষ কল্পনাও করতে পারত না যে, তার প্রতিবার সাহসী হয়ে ওঠার ঘটনাটি টানা ৩০ বছরেও বেশি সময় ধরে আমাদের সামনে বার বার আবর্তিত হবে।

তার জীবনের প্রথম চাপটি আসে একেবারে প্রথমে। জাতীয় দলের খেলোয়াড় থেকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৯৫ সালে লাং পিং জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে সে সময় তার সামনে আগের সেই গৌরবময় ভলিবল দলটি ছিল না। এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন থেকে সরে যাবার পর বিশ্বের অষ্টম স্থানে চলে যায় তার আগের সেই দলটি! তিনি কীভাবে এই দল নিয়ে ফের বিশ্বের প্রথম স্থান দখল করবেন? লাং পিংয়ের ওপর কতটা আশা রাখা যায়, তার কাঁধে এরকম চাপ তৈরি হয়। তিনি স্বীকার করেন, সেই সময় তিনি অনেক উদ্বিগ্ন ছিলেন। আগে তিনি কখনও কোচের দায়িত্ব পালন করেন নি। তা ছাড়া, তার সামনে বড় একটি কর্তব্য ছিলো। মাত্র ১৮ মাস পর আটলান্টা অলিম্পিক গেমস শুরু হওয়ার কথা! পরিশ্রম ছাড়া, আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই!

পরিশ্রমের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে প্রকৃত সাফল্য অর্জন করা যায়। লাং পিংয়ের নেতৃত্বে এক বছরের মধ্যে চীনের নারী ভলিবল দল আবারও এশিয়ার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে। তারপর অলিম্পিক গেমসের ফাইনাল প্রতিযোগিতা শুরুর পর তখনকার খুব শক্তিশালী কিউবা দলের মুখোমুখি হতে হয়। অবশেষে চীনের দল একটি রৌপ্যপদক লাভ করে।

এই পরিণতিতে লাং পিং কোনও কষ্ট পান না। তিনি বলেন, সেই প্রেক্ষাপটে এক বছর সময়ের পর রৌপ্যপদক অর্জন করাটাও ছিল দারুণ সম্মানজনক ও গৌরবের বিষয়।

দুঃখ ও অনুতাপ থাকলেও লাং পিং স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন, এই রৌপ্যপদক চীনের নারী ভলিবল দলের আসল অর্জন নয়। বরং উজ্জ্বল পথের সূচনা মাত্র।

সুন ইয়ু নামে দলের একজন সদস্য প্রতিযোগিতার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি বলেন, পুরনো ভলিবল দল থেকে নতুন ভলিবল দল পর্যন্ত লাং পিংয়ের 'লৌহ ও ইস্পাতের' দৃঢ় চেতনা ধাপে ধাপে চীনের ভলিবল দলের চেতনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৯৯ সালে লাং পিংয়ের নেতৃত্বে চীনের নারী ভলিবল দল বিশ্বের শীর্ষস্থানে আবারও ফিরে আসে। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান গেমস ও অলিম্পিক গেমসে বারবার ভালো ফলাফল অর্জন করতে থাকে চোং কুও ন্যু পাই। তবে সেই সময় শারীরিক কারণে লাং পিং জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি যথেষ্ট সফল হইনি। যদি আগামীতে চীনের জাতীয় নারী ভলিবল দলের সফলতার জন্য কিছু করতে পারি, তাহলে আমি খুব খুশি হবো।

খেলাধুলায় জয়-পরাজয় মানুষের মনে নাড়া দিতে পারে:

২০০৫ সালে লাং পিং মার্কিন জাতীয় দলের কোচ হিসেবে আমন্ত্রণ পান। তার চিন্তাটা ছিল খুব সহজ। কারণ এভাবে তিনি আরো বেশি সময় মেয়ের সঙ্গে থাকতে পারবেন।

আসলে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথমবারের মতো তাকে আমন্ত্রণ জানায় নি।

এর আগে ২০০০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ সেই সময় তিনি ভাবেন, চীনের জাতীয় দল যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো না।

২০০৫ সালে চীনের ভলিবল দল বিশ্বের ভলিবল অঙ্গনে খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে মার্কিন জাতীয় দলের কোচ হিসেবে লাং পিংয়ের কাজ করা অনেকের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দেয়।

বিশেষ করে ২০০৮ সালে অলিম্পিক গেমসে মার্কিন দলের কাছে চীনের জাতীয় দলের হেরে যাওয়ার পর শুধু সাধারণ লোক নয়, অনেক বিখ্যাত লোক প্রকাশ্যে বলেন যে, মার্কিন জাতীয় দলের জন্য কোচ হিসেবে লাং পিংয়ের কাজ করা আমার পছন্দ না। কখনও ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আমরা চীনা।

হ্যাঁ, অনেকের চোখে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিশেষ করে অলিম্পিক গেমস শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতা কিমবা দক্ষতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, এর পিছনে সুগভীর জাতীয় পরিচয়ের অর্থও রয়েছে।

এসব সমালোচনা লাং পিং মেনে নেন। মাঝেমাঝে তিনি নিজের পক্ষে যুক্তিও দেন। তিনি বলেন, আমি সবসময়ই চীনের পাসপোর্ট ব্যবহার করি। মার্কিন নাগরিকত্ব নেওয়ার ব্যাপার আমি কখনও ভাবি নি। শুধুমাত্র একজন পেশাদার কোচ হিসেবে আমি এই চাকরি নিয়েছি।

আসলে এক দেশের কোচ অন্য দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই নিয়মিত ও সাধারণ একটি ব্যাপার।

অন্যদিক থেকে আমরা এবার এই ইস্যুটি দেখবো। আমরা যদি প্রশ্ন করি, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কি?

অলিম্পিকের চেতনা ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়: পারস্পরিক সমঝোতা, মৈত্রী, ঐক্য ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো ক্রীড়া।

লাং পিংয়ের মনে প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র প্রতিযোগিতা। নিজের বইতে তিনি এভাবে লিখেন, বৈশ্বিক যুদ্ধ নয়, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেই আমরা। আমারা স্বার্থ নয়, মানবজাতির চেতনার জন্য প্রতিযোগিতায় লড়াই করি।

এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করতে চাই, সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নারী ভলিবল দলের কোচ হিসেবে লাং পিংয়ের বাছাই প্রসঙ্গে চীনে একটি জরিপ চালানো হয়। অধিকাংশ চীনা তাকে সমর্থন দেন।

লাং পিং তিনটি ভিন্ন পরিচয় দিয়ে অলিম্পিক গেমসে অংশ নেন, চীনের জাতীয় দলের খেলোয়াড়, চীনের জাতীয় দলের কোচ এবং মার্কিন জাতীয় দলের কোচ।

তার জীবনের তৃতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালে। তিনি আবারও চীনের জাতীয় নারী ভলিবল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান। সে সময় জাতীয় দলের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না।

আবার চীনের জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর লাং পিং ধারাবাহিক সংস্কার চালু করেন।

যেমন, জাতীয় নারী ভলিবল দলে মিলিটারাইজড ম্যানেজমেন্ট বাতিল করা, দলের মেয়েদের মেকআপ করা এবং ইন্টারনেটে কেনাকাটা করার অনুমতি দেওয়া প্রভৃতি।

আগে, চীনের ক্রীড়া অঙ্গনে আহত ও রোগাক্রান্ত হওয়া ছিল গৌরবের পরিচায়ক। প্রবীণ কোচ হিসেবে লাং পিং বুঝতে পারেন, প্রকৃত সফল ক্রীড়ার প্রশিক্ষণ বিজ্ঞান ও সুস্থতার ভিত্তিতে গড়ে তোলা উচিত্। তাই তিনি সবচেয়ে পেশাদার বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানান এবং শরীরে আঘাত পাওয়ার মতো সব প্রশিক্ষণ বাতিল করেন।

ইনজুরি কমে যাওয়ার পর প্রশিক্ষণের ফলাফল ভালো হতে থাকে। একটি একটি করে বিজয় আসতে থাকে।

নারী ভলিবল দলের চেতনা লাং পিংয়ের হাত ধরে পুরোপুরি ফুটে উঠতে থাকে। তিনি ভাবেন, পুরনো ভলিবল দলের সদস্যদের মধ্যে এখন মাত্র তিনি ফ্রন্টলাইনে কাজ করছেন। তিনি ভালোভাবে নিজের কাজ করতে চান।

ভলিবল দলের তরুণ মেয়েদের তিনি বলেন, চীনের প্রতিনিধিত্বকারী এই পোশাক পরে আমাদের লক্ষ্য হবে- চীনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা এবং জাতীয় সংগীত বাজানো।

পরিশ্রম, পেশাদারিত্ব ও ভালোবাসা এটিই চীনের নারী ভলিবল দলের চেতনা। এই চেতনা দিয়ে তিনি জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পুনরুত্থান সম্পন্ন করেছেন।

শুধু কথা দিয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। যা কথা দিয়ে অর্জন করা যায় না, তা ঘামের বিনিময়ে অর্জন করা যায়।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040