মহামারী চীনের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন-প্রবণতাকে থামিয়ে দিতে পারবে না: সি চিন পিং
  2020-02-15 14:43:13  cri

১. চীনের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির প্রবণতা পরিবর্তিত হবে না এবং নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া (এনসিপি)-র নেতিবাচক প্রভাব হবে অস্থায়ী। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্প্রতি বেইজিংয়ে এনসিপি প্রতিরোধকাজ পর্যবেক্ষণের সময় এ কথা বলেন।

সি চিন পিং বলেন, অর্থনীতির ওপর মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। চলতি বছরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মহামারীতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করতে হবে। এসব সংস্থাকে দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নিতে সহযোগিতা করতে হবে। মহামারী চলাকালে ব্যাপক কর্মচ্যুতির ঘটনা ঠেকানোও জরুরি।

২. গত জানুয়ারিতে চীনের কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) আগের মাসের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ তথ্য জানায়।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ৮ ধরনের পণ্য ও পরিষেবার মূল্য কমবেশি বেড়েছে। খাদ্য, সিগারেট ও অ্যালকোহলের দাম ১৫.২ শতাংশ বেড়েছে। মাংসের দাম ৭৬.৭ শতাংশ, শাকসবজির দাম ১৭.১ শতাংশ, মত্স্যজাত পণ্যের দাম ৩.৮ শতাংশ এবং ডিমের দাম ২.৪ শতাংশ বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের বিশেষ গবেষক ইয়াও চিং ইউয়ান বলেন, বসন্ত উত্সব ও নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া (এনসিপি)-র কারণে সিপিআই বেড়েছে। বসন্ত উত্সব উপলক্ষ্যে সবাই বেশি কেনাকাটা করেন। তখন দ্রব্যমূল্য বাড়ে। এবার যোগ হয়েছে মহামারীর প্রকোপ। ফলে দ্রব্যমূল্য বেশি বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের সার্বিক সিপিআই নির্ভর করছে এনসিপি প্রতিরোধকাজের ফলাফলের ওপর। এ লড়াইয়ের নেতিবাচক প্রভাব স্বল্পমেয়াদি হলে, সিপিআই-ও স্থিতিশীল হবে।

৩. সুইডিস পোস্ট অ্যান্ড টেলিকম অথরিটি (পিটিএস) জানিয়েছে, চীনা কোম্পানি হুয়াওয়েই-র ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না। সুইডিশ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সম্প্রতি এ তথ্য জানান পিটিএসের স্পেকটার্ম বিশ্লেষণ ইউনিটের প্রধান আনান বেকিয়াস।

তিনি বলেন, সুইডেনের ফাইব-জি ফ্রিকোয়েন্স লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট নিয়ম মেনেই বরাদ্দ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে হুয়াওয়েইকে বাইরে রাখা হবে না।

উল্লেখ্য, পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভ-জি ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক সুইডেনের ইন্টারনেট স্পিড দশ গুণ বাড়াতে পারে।

৪. চীনের রাজস্ব আয় ২০১৯ সালে আগের বছরের তুলনায় ৩.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৯.০৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (২.৭২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার)-এ। সম্প্রতি সরকারিভাবে এই তথ্য জানানো হয়।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ওই বছর কেন্দ্রীয় সরকার ৮.৯৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান রাজস্ব সংগ্রহ করে, যা আগে বছরের তুলনায় ৪.৫ শতাংশ বেশি। একই বছর স্থানীয় সরকারগুলো মোট রাজস্ব সংগ্রহ করে ১০.১১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের তুলনায় ৩.২ শতাংশ বেশি।

৫. চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুষ্ঠু ও স্থিতিশীলভাবে উন্নয়নের স্বার্থে, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর শুল্ক পুনঃনির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় পরিষদের শুল্ক কমিটি।

সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুযারি দুপুর একটা এক মিনিট থেকে মার্কিন রফতানিপণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্কের স্থলে ৫ শতাংশ শুল্ক এবং ৫ শতাংশ শুল্কের স্থলে ২.৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।

৬. বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রধান বোর্গে ব্রেন্দা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনের ক্ষেত্রে চীন সঠিক পথেই চলছে। তিনি সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ব্রেন্দা বলেন, বিগত কয়েক দশকে চীনে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে, যা মানবজাতির দারিদ্র্যবিমোচন প্রচেষ্টায় একটা অসাধারণ অর্জন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীনের নেতা ঠিকই বলেছেন যে, বিভিন্ন দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল ও পরস্পরের স্বার্থও অনেক ক্ষেত্রে অভিন্ন। উম্মুক্ততা, সহনশীলতা, সহযোগিতা ও জয়-জয় নীতিই হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর একমাত্র সঠিক বাছাই।

৭. মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সম্প্রতি উজবেকিস্তানের তাসখন্দে মধ্য-এশিয়ার পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে 'সি ৫ প্লাস ১' শীর্ষক বৈঠক করেন। বৈঠকশেষে ছ'পক্ষ এক যৌথ বিবৃতিতে অর্থ-বাণিজ্য, জ্বালানি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শিক্ষা ও নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের কথা ঘোষণা করে।

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আঞ্চলিক প্রক্রিয়ায় 'সি ৫ প্লাস ১'-এর গুরুত্ব আছে। এ ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও যোগাযোগ বজায় রাখা এবং মধ্য-এশিয়ায় টেকসই শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য সহায়ক।

৮. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার উপযোগী। তবে এর মধ্যে সংস্কার চালানো উচিত। সদস্যদের উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করে সংস্থাটিকে আরও আধুনিক করা। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো ওয়াশিংটনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমিতির সম্মেলনে এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা এনেছে। তবে এখন যুগের উপযোগী করে এতে সংস্কার করতে হবে।

মহাপরিচালক বলেন, অর্থনীতির ব্যাপক হ্রাসের প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু অর্থনৈতিক সত্ত্বা আর্থিক নীতি ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থনীতি চাঙ্গা করার পাশাপাশি সংরক্ষণবাদ জোরদার করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

আজেভেদো আরও বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর বিগত ২৫ বছরে বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে, বাণিজ্যিক বাধা কমেছে, এবং দারিদ্র্যের হার ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। পাশাপাশি, বিশ্বে ব্যাপক পরিবর্তনও ঘটেছে। আগামী কয়েক বছরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কার্যকর অবস্থান ধরে রেখে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি জানান, আগামী জুন মাসে কাজাখস্তানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

৯. পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় তহবিল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। একাধিক প্রক্রিয়ায় সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া যাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে প্রকাশিত এক সার্কুলারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।

সার্কুলারে বলা হয়, আর্থিক খাতের প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকসমূহের নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের আইন রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজারের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী হিসেবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্রমাগত তারল্য প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ও ডিলার লাইসেন্সধারী ব্রোকারেজ হাউজ) এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজকে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় এ তহবিল সরবরাহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

তফসিলি ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকে তহবিল যোগান দিতে পারে। এছাড়া ধারণকৃত ট্রেজারি বিল বা বন্ড এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়া আরও একটি উপায় তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। আর সেটি হলো, প্রথমে নিজ উৎস থেকে তহবিল গঠন করে পরবর্তীতে ট্রেজারি বিল বা বন্ড এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা যাবে। এই তহবিল হতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ২৬ক ধারায় বর্ণিত বিনিয়োগসীমা অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

১০. চলতি অর্থবছরে রফতানিতে নগদ সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি আয়করও কমানো হয়েছে। এবার নতুন করে রফতানিপণ্যে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের ওপর বিনিময় হারে ডলারপ্রতি পাঁচ টাকা করে চেয়েছে পোশাক শিল্পমালিকরা। আর্থিক মূল্যে এ সহায়তার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার। সম্প্রতি এমন অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত ১৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকেও পাঠানো হয়। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে গার্মেন্টস রফতানি কমে যাওয়া ও প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে সক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারকরা রফতানির বিপরীতে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা পেয়ে থাকেন। চলতি বছর নতুন করে সবধরনের রফতানিতে এক শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তা দেওয়া শুরু করে সরকার। নগদ সহায়তার ওপর করও অর্ধেক কমিয়ে ১০ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে রফতানিতে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে গার্মেন্টস খাত থেকেই সরকারের সম্ভাব্য রাজস্ব ছাড় হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। রফতানিসহ বিভিন্ন খাতে ছাড় ও অব্যাহতি দেওয়ায় সরকারের রাজস্বেও টান পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর চাপে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে গেছে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040