সম্প্রতি চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কাশি এলাকার শিক্ষা বিভাগের প্রধান এনিভার আবুলিমিত সংবাদদাতাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন স্কুলে ম্যান্ডারিন শেখানোর পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতির নিজস্ব ভাষাও শেখানো হয়।
তিনি বলেন, চীনের জাতীয় ভাষা ম্যান্ডারিন শিখলে শিক্ষার্থীরা দেশের মূলধারার সঙ্গে যেমন সহজে মিশতে সক্ষম হবে, তেমনি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পাবে বড় সুবিধা। তাই সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন স্কুলে একাধিক ভাষা পড়ানো হয় এবং এ উদ্যোগও সফলও হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা ভালো ম্যান্ডারিন বলতে পারে। তাদের পিতামাতার চেয়েও শিক্ষার্থীরা অন্য জাতির লোকজনের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারে। পর্যটকরা সিনচিয়াংযে বেড়াতে আসলে বাচ্চারা তাদের জন্য দৌভাষীর কাজ করে। এর মানে স্থানীয় পর্যটনের উন্নয়নেও ম্যান্ডারিনসহ একাধিক ভাষা শেখার বিষয়টি সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। ভাষা-র সমস্যা সমাধানের পর সিনচিয়াংয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে।
আবুলিমিত আরও বলেন, চীনের রাষ্ট্রীয় মানদন্ড অনুসারে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতির ভাষাও অন্তর্ভুক্ত আছে। উইগুর, কাজাখ, কিরগিজ, মঙ্গোলিয়ান ও সিপো জাতির শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষা শিখতে পারে। এভাবে সংখ্যালঘু জাতির ভাষা সংরক্ষিত হচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম 'নিউইয়র্ক টাইমস'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিনচিয়াংয়ে ম্যান্ডারিন ভাষা প্রচলণের কারণে উইগুর ভাষা হারিয়ে যাবে। এমন বক্তব্য পুরোপুরি ভুল। যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুজাতিক দেশ। সেদেশের অন্যান্য জাতির মানুষরা যদি ইংরেজি না-শেখে, তবে তারা মার্কিন সমাজে টিকতে পারবে না।
সি চিন পিংয়ের প্রিয় বাক্য
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিদেশে সফরকালে, আন্তর্জাতিক ফোরাম বা শীর্ষসম্মেলন অংশগ্রহণকালে বা চীনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপস্থিত থাকাকালে ভাষণ দিয়ে থাকেন। এসব ভাষণে তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন স্থানে তার দেওয়া ভাষণ নিয়ে 'দেশ প্রশাসন' শীর্ষক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। আসলে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও প্রস্তাবসমূহ ধারাবাহিকভাবে উত্থাপিত হয়েছে। এসবই তাঁর কাজের অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত। তিনি অনেক সময় প্রাচীন চীনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, উপন্যাস বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। আমরা তাঁর কিছু কিছু প্রিয় বাক্য বাছাই করে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করবো। আশা করি শ্রোতারা অনুষ্ঠান শুনে সি'র চিন্তাভাবনা ভালভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।
আজকে প্রেসিডেন্ট সি'র যেই প্রিয় বাক্যটি নিয়ে কথা বলবো সেটি হচ্ছে '水能载舟,亦能覆舟',বাংলা ভাষায় অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়াবে: নদী নৌকা বহন করতে পারে, আবার সেটি উল্টেও যেতে পারে।
আসলে এটি একটি উপমা। নদী যেন জনগণ আর নৌকা যেন ক্ষমতাসীন পার্টি। ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর চীনের লাল ফৌজের লংমার্চের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এমন বক্তব্য রাখেন। প্রেসিডেন্ট সি তখন আরও বলেন, 'জনগণ যেন মাটি ও আকাশ। জনগণকে ভুলে যাওয়া বা বিভক্ত করা মানে আমাদের পার্টির নদীর পানিতে ডুবে যাওয়া। জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কাজে সফল হওয়া যাবে না।'
আসলে এ বাক্য প্রাচীনকালের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ 'স্যুন জি'র একটি কথা। এতে 'নদী'কে জনগণ আর 'নৌকা'কে প্রশাসকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। নদীতে নৌকা স্থিতিশীল থাকতে পারে বা নিরাপদে চলাচল করতে পারে। তবে ঢেউ থাকলে নৌকাটি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিও দেখা দেয়।
স্যুনজি ছিলেন প্রাচীনকালে চীনের বিখ্যাত চিন্তাবিদ। তিনি জনগণকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি জনগণকে দেশ-প্রশাসনের ভিত্তি হিসেবে দেখতেন। প্রাচীনকালে বিভিন্ন রাজবংশের পতন প্রমাণ করেছে যে তিনি সঠিক ছিলেন। প্রাচীনকালে রাজারা এবং আধুনিক কালে পার্টি জনগণকে শাসন করে। জনগণ রাজাকে বা পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুতও করতে পারে। ঠিক যেমন নৌকা নদীতে ডুবেও যেতে পারে। ৱ
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের সেবা করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। কমরেড সি চিন পিং যুবক বয়সে যখন গ্রামে সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতেন, তখন স্থানীয় নাগরিকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। চীনের শাআনসি প্রদেশের লিয়াংচিয়াহ্য গ্রামে কর্মরত অবস্থায় টানা ৮ মাস তিনি গ্রামবাসীদের সাথে বাঁধ ও কৃষিক্ষেত নির্মাণ করেন এবং বনাঞ্চলে চাষবাস করেন। স্থানীয় গ্রামবাসী কাও বলেন, সি চিন পিং একদিন দেখলেন গ্রামের একজন প্রবীণ লোক ভারি জিনিস বহন করছেন। কিন্তু বয়সের কারণে তিনি এগুতে পারছিলেন না। সি তখন তাঁকে থামান এবং তাকে বোঝা বহনে সাহায্য করেন। পরে ওই বয়স্ক লোক জানতে পারেন যে, তাকে যিনি সাহায্য করেছেন তিনি হলেন স্থানীয় গ্রামের সরকারি কর্মকর্তা। পরে এই বৃদ্ধ সি চিন পিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন; গ্রামবাসীও সি চিন পিংয়ের কাজের প্রশংসা করেন।"
সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
রেডিওতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা মিস করলে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো- www.bengali.cri.cn
এবার তাহলে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আবারো কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)