সি ছিং হুই
সি ছিং হুইয়ের বয়স ৫১ বছর। এয়ার ফোর্স মিলিটারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোমাটোলজিকাল হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট। ২৭ জানুয়ারি, সহায়তা দলের সদস্য হিসেবে উ হানের উ ছাং হাসপাতালে যান। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত টানা কাজ করেন। তিনটি প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হয়। টয়লেট যাওয়ার সময় নেই। সিফ্ট শেষ হবার পর প্রথমবারের মতো খাবার খান এবং টয়লেটে যান। প্রতিদিন অন্তত ৮০টি সিটি চিত্র দেখেন এবং ৭ ঘন্টার মতো টানা কাজ করেন। তিনি বলেন, তার মার উইচ্যাট-পোস্ট দেখে তিনি উত্সাহিত হন। তার মা লিখেছেন: 'আজ বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন। সবাই পরিবারের কাছে ফিরে আসে। কিন্তু আমার ছেলে গেছে উ হানে। ২০০৮ সালে যখন সিছুয়ান প্রদেশের ওয়ে ছুয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়, তখন আমার ছেলে ফ্রন্ট লাইনে ছিল। এবার সে গেছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফ্রন্ট লাইনে। সারা জীবনে এমন সুযোগ দু'বার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি তার জন্য প্রার্থনা করি। সে আমার গর্ব এবং বিশ্বাস করি সে নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে।'
সি ছিং হুই বলেন, তার রোগীদের অধিকাংশই তার মায়ের মতো প্রবীণ। তাদেরকে দেখলে নিজের মা'র কথা মনে পড়ে। তাদেরকে সাহায্য করা নিজের দায়িত্ব মনে করেন তিনি।
সেন লি ছিন
সেন লি ছিনের বয়স ৫১ বছর। উ হান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিপলস হাসপাতাল সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান নার্স। ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিনি একদিনের ছুটি নেননি। তিনি বলেন, 'আমি ৩২ বছর ধরে এ কাজ করছি। আমার পরিবার আমাদের কাজের গুরুত্ব বোঝে এবং আমাকে সমর্থন দেয়। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমি কাজ করি। আমার বাসা হাসপাতালের কাছাকাছি। তাই, কখনও কখনও আমি অতিরিক্ত কাজও করি। আমার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এখন শীতকালীন ছুটি চলছে। আমি ব্যস্ত থাকায়, আমার স্বামী সব গৃহকাজ করেন। একসাথে ডিনার খাওয়ার জন্য তিনি সবসময় খুব রাত অবধি আমার জন্য অপেক্ষা করেন। হাসপাতালে আমি রোগীদের যত্ন নিই এবং বাসায় আমার স্বামী আমার যত্ন নেন। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।'
তুয়ান মেং ছি
তুয়ান মেং ছির বয়স ৩৫ বছর। কুয়াং তুং জুং শান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় হাসপাতালের পিআইসিইউ'র প্রধান নার্স। ২৪ জানুয়ারি রাতে, কুয়াং তুং সহায়তা চিকিত্সা দলের সঙ্গে উ হানের হান খো হাসপাতালে যান। সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, 'আমি মাত্র দু'দিন রাতের ডিউটি শেষ করেছি। এখানে আমরা প্রতিদিন মাত্র ৫ ঘন্টার মতো ঘুমাতে পারি। আমরা সরাসরি রোগীদের যত্ন নিই এবং কাজের চাপ অনেক বেশি। আমাদের ৮২ জন নার্স আছে এবং ৭টি দলে ভাগ হয়ে আমরা কাজ করি। প্রতি ৪ ঘন্টায় একবার সিফ্ট পরিবর্তন করা হয়। আমার স্বামী একই হাসপাতালে কাজ করেন। তারও আমার সঙ্গে উ হানে আসার কথা ছিল। বিদায় নেওয়ার সময় আমার স্বামী শুধু একটি কথা বলেন: যাও, যত্নশীল হও।'
তুয়ান মেং ছিংয়ের সবসময় তার ৫ বছর বয়সী ছেলের কথা মনে পড়ে। উ হানে আসার দ্বিতীয় দিনে তার ছেলে তাকে একটি ভয়েস-মেইল পাঠায়। সে বলে, 'মা, মা, আমি তোমার জন্য চাঁদের কাছে প্রার্থনা করেছি। নিরাপদে ফিরে আস। মা, ওরা রোগীদের কী চিকিত্সা দেয়? তারা কেমন আছেন? সুস্থ হয়েছেন কি?' তুন মেং ছি বলেন, যখন ঘুম আসে বা ক্লান্ত লাগে, তিনি ছেলের ভয়েস-মেইল শোনোন। এতে তিনি কাজের শক্তি পান।
ইয়ান লি
ইয়ান লি ৪৫ বছর বয়সী। তিনি হুয়াজং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের থুং চি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উপ-প্রধান চিকিত্সক। ২০ জানুয়ারি থেকে তিনি ছুটি বাতিল করে কাজ যোগ দেন।
কাজের কারণে ইয়ান লি পরিবারের সঙ্গে থাকার সময় খুব কম পান। তিন মাস আগে, তিনি ছুটির আবেদন করেছিলেন। একটি ভ্রমণ-পরিকল্পনাও তৈরি করেছিলেন। তবে বিমানে ওঠা হয়ে ওঠেনি। আগেই তিনি একটি জরুরি ফোনকল পান। তার দুজন সহকর্মী অসুস্থ হয়েছেন এবং তাদের বিভাগের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ ফোন পেয়ে ইয়ান লি ভ্রমণ-পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন এবং বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, 'আমার সহকর্মীরা সব ফ্রন্ট লাইনে আছে। আমি পালিয়ে যেতে পারি না।' তাদের প্রতিরক্ষামূলক পোশাক খুব টাইট। এমন পোশাক পরে খেতে পারেন না এবং টয়লেটে যেতে পারেন না। খুব কম মানুষ জানে যে, ইয়ান লি নিজেও একজন রোগী। তিনি ৭ বার হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং বেশ কয়েকবার তার শরীরে সার্জারি করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, এখন এ অবস্থায়, সবাই প্রাণ দিয়ে কাজ করছেন; সবার উচিত কাজে অবিচল থাকা।
তিন সিন পো
তিন সিন পো ৪০ বছর বয়সী। উহান জং নান হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল মেডিসিন বিভাগের নার্স। তার বিভাগে ২০২০ সালের পয়লা জানুয়ারি নতুন প্রতিষ্ঠিত হয় আইসোলেশান ওয়ার্ড। শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি টানা এ ওয়ার্ডে কাজ করছেন।
সিন পো একজন পুরুষ। নার্সের মধ্যে পুরুষ খুব কম দেখা যায়। ২০০৪ সালে স্নাতক হবার পর তিনি সবসময় সবচেয়ে ব্যস্ত আইসিইউতে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, '১৫ বছর ধরে সবচেয়ে ক্লান্তিকর ও কঠিন একটি কর্তব্য পালন করে আসছি। প্রতিরক্ষামূলক পোশাক, চশমা ও মাস্ক পরলে সবাইকে একইরকম লাগে। তাই পোশাকের পেছনে লেখা থাকে আমাদের নাম। কেউ কেউ নিজের ডাকনাম লিখেছে।'
সিন পো ও তার সহকর্মীরা আশাবাদী। ভাইরাসের সংকট কেটে যাবে। তারা কেউ এই নতুন ধরনের যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে যেতে রাজি নন। তিনি বলেন, 'মানুষ আমাদেরকে সাদা পোশাকের সৈনিক বলে ডাকে। আমার মতে এটা বড় মর্যাদা। জনগণের স্বীকৃতি পেয়েছি। আমার কোন দুঃখ নেই।'
ওয়াং রুই লান
ওয়াং রুই লান ৫৩ বছর বয়সী। শাংহাই প্রথম পিপলস হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পরিচালক। ২৬ জানুয়ারি, উহান তৃতীয় পিপলস হাসপাতালে যোগ দেন।
প্রতিদিন বিকেল ৫টায় প্রতিরক্ষামূলক পোশাক ছেড়ে আস্তে আস্তে দু'কাপ পানি পান করা রুই লানের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক একটি ব্যাপার। তিনি বলেন, 'ব্যস্ততার সময় কিছুই খাই না। শুধু পানি পান করি।' তার হাসপাতাল বিভাগের প্রধানকে উহান যেতে বলে। তার বিভাগে তিন জন প্রধান। তবে তিনি নিজে সরাসরি নিজের নাম প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, এটা স্বাভাবিক ও সহজ একটি ব্যাপার। তার মেয়ে এখন বিদেশে লেখাপড়া করছে। সে ও তার সহপাঠিরা মিলে কিছু চিকিত্সাসামগ্রী সংগ্রহ করে। পাশাপাশি তার স্বামীও এ কাজ করেন। ওয়াং রুই লান বলেন, ভাইরেসর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে তার সহকর্মীদের কেউও পালিয়ে যায়নি। যুবক চিকিত্সক ও নার্সরাও সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নেয়। তিনি বলেন, আশা করা য়ায়, দ্রুত সবাই সাধারণ জীবনে ফিরে আসতে পারবে। (শিশির/আলিম)