বুনি বেয়ারস: দ্য ওয়াইল্ড লাইফ
  2020-02-06 19:20:44  cri

নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি ছোটদের জন্য তৈরি একটি অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র। তবে, আমি বলতে চাই, এই চলচ্চিত্র শিশুদের জন্য তো বটেই, বড়দের জন্যও সমান উপভোগ্য।

বুনি বেয়ারস: দ্য ওয়াইল্ড লাইফ (Boonie Bears: The Wild Life ) চলচ্চিত্রটি হলো 'বুনি বিয়ারস' নামে ধারাবাহিক চলচ্চিত্রের মধ্যে সপ্তম। প্রথমে 'বুনি বেয়ারস' ছিলো ধারাবাহিক কার্টুন নাটক। শিশুরা এই কার্টুন নাটকটি খুব পছন্দ করায় প্রযোজনা সংস্থা একে চলচ্চিত্রে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। বাস্তবতাই প্রমাণ করে যে, তাদের এই সিদ্ধান্ত ছিল দারুণ সময়োপযোগী।

'বুনি বিয়ারস' নামে ধারাবাহিক চলচ্চিত্র বের হওয়ার পর দর্শকদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। টিভি নাটকের চেয়ে চলচ্চিত্র সংস্করণের গুণগত মান আরও উন্নত হয়েছে। ফলে চলচ্চিত্রের এই আইপি নতুন।

আগে কোনও কোনও দর্শক বলতেন, টিভি নাটকের দৃশ্য ছিল কিছুটা সহজ। এ কথা শুনে প্রযোজনা সংস্থা চলচ্চিত্রের দৃশ্যের ওপর মনোযোগ দেয়। কোনও কোনও দর্শক বলেন, টিভি নাটকের বিষয় খুব সহজ এবং শুধুমাত্র ছোটদের জন্যই তা উপভোগ্য। তারপর প্রযোজনা সংস্থা গল্পের বিষয় বাড়ায় এবং একে একটি ভালো গল্প হিসেবে তৈরি করে।

দর্শকদের ভালো পরামর্শ গ্রহণের পর বড় পর্দায় ছোট বা বেশি, বিভিন্ন শ্রেণীর বয়সের লোকের কাছে উপভোগ্য একটি 'বুনি বিয়ারস' আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

শিশুরা 'বুনি বিয়ারস' চলচ্চিত্র দেখতে খুব পছন্দ করেন এবং বাবা মাও চলচ্চিত্রের বিষয় পছন্দ করেন।

এখন আমি 'বুনি বিয়ারসের' তিনটি প্রধান চরিত্রের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। কুয়াং থৌ ছিয়াং একজন করাতী বা বনে কাঠ কাটেন যিনি। চীনা ভাষায় কুয়াং থৌ মানে চুলহীন। ছিয়াং তার গিভেন নেম বা আসল নাম। এর অর্থ হলো শক্তিশালী। 'সিয়োং তা' ও 'সিয়োং আর' হলো কুমারী বোন রক্ষাকারী। চীনা ভাষায় সিয়োং মানে বিয়ার বা ভালুক। 'সিয়োং তা' মানে বড় ভালুক ভাই এবং 'সিয়োং আর' মানে ছোট ভালুক ভাই।

কুয়াং থৌ ছিয়াং এবং সিয়োং তা ও সিয়োং আরের মধ্যে আধুনিকতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সংঘর্ষ তুলে ধরা হয়। কুয়াং থৌ ছিয়াং গাছ কাটার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন এবং বন হলো সিয়োং তা ও সিয়োং আরের বাসস্থান। পুরনো একটি গল্পে কীভাবে নতুন বিষয় তুলে আনা যায়? 'বুনি বিয়ারস' নামে ধারাবাহিক চলচ্চিত্রে তাদের দ্বন্দ্ব অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে এবং বৈচিত্র্যময় করে তোলার পর দর্শকের সামনে উপহার দেওয়া হয়।

প্রথমে মানবজাতি বনভূমি ধ্বংস করে। পশুপাখি একসঙ্গে বন রক্ষা করে। তারপর বন ধ্বংস হয়, মানবজাতি ও পশুপাখি একসঙ্গে থাকে। তারপর কোনও খারাপ মানুষ কৌশলে মন্দ কাজ করে, মানবজাতি ও পশুপাখি সহযোগিতা করে তাদের ষড়যন্ত্র নষ্ট করে দেয়।

চলচ্চিত্রে কুয়াং থৌ ছিয়াং এবং সিয়োং তা ও সিয়োং আর তাদের মধ্যে যুদ্ধ অবসান হয় এবং তারা অভিন্ন স্বার্থ খুঁজে পায়। কারণ বন না থাকলে পশুপাখির বাড়ি থাকবে না এবং করাতির কাজও আর থাকবে না।

বলা যায়, 'নতুন বিষয় খুঁজে বের করার জন্য সংস্কার করা' হলো 'বুনি বিয়ারস' নামের ধারাবাহিক চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্যময় দিক।

এবার আমরা সবাই মিলে বুনি বেয়ারস: দ্য ওয়াইল্ড লাইফ নামের 'বুনি বিয়ারস' ধারাবাহিক চলচ্চিত্রের সর্বশেষ শিল্পকর্মের ওপর দৃষ্টি দেবো।

চলচ্চিত্রের গল্পটি 'দ্য ওয়াইল্ড লাইফ' নামে একটি থিম পার্কে ঘটে। সেখানে জিনগত প্রযুক্তির সাহায্যে এক ধরনের রিস্টব্যান্ড পরে মানুষ পশুপাখিতে পরিণত হয়। আর যদি আপনি শক্তিশালী হন, তাহলে বাঘ ও সিংহে পরিণত হতে পারবেন। স্মার্ট পশুপাখি পছন্দ করলে বানর ও কাঠবিড়ালে পরিণত হতে পারবেন। উন্নত হতে চাইলে পাখি হয়ে যাবেন। এই পার্কে উঁচু পাহাড় আছে, গভীর খাদ আছে, আছে তুষার মাটি ও তৃণভূমি। মানবজাতি এই পার্কে ইচ্ছামতো যে কোনো পশুপাখিতে পরিণত হতে পারে।

আকস্মিক এক সুযোগে কুয়াং থৌ ছিয়াং এবং সিয়োং তা ও সিয়োং আর এই পার্কে আসে। 'ল্য থিয়েন' নামে এক রহস্যময় পুরুষ কোনো এক উদ্দেশ্য নিয়ে সেই পার্কে আসেন। কুয়াং থৌ ছিয়াং, সিয়োং আর এবং 'ল্য থিয়েন' একটি টিম গঠন করে। তারা ১০ লাখ অধিবৃত্তির জন্য পার্কে এক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তারা অনেক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে, তারা পার্কে বিশৃঙ্খল জিনগত মানস্টার বা সুপার জীবিত প্রাণী দেখতে পায়। এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র আছে কি? 'ল্য থিয়েন' কে? এই পার্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক কী?

আসলে ল্য থিয়েন নিজের পঙ্গু মেয়ের জন্য এই রিস্টব্যান্ড আবিষ্কার করেন। মেয়ের পা অচল হওয়ায় দাঁড়াতে পারে না। শুধু হুইলচেয়ারে বসে থাকতে পারে! মেয়ে পাখির মতো আকাশে উড়তে চায়। মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করে ল্য থিয়েন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে এই রিস্টব্যান্ড আবিষ্কার করেন। তবে মেয়েও রোগের কারণে অবশেষে মারা যায়। ল্য থিয়েনের এই আবিষ্কার চুরি করে তার এক বন্ধু। সে এই 'দ্য ওয়াইল্ড লাইফ' নামে পার্ক চালু করে।

চলচ্চিত্রের শেষে যখন ল্য থিয়েন নিজের এই আবিষ্কার ধ্বংস করার চেষ্টা করে, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ল্য থিয়েনের মাথায় মেয়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের দৃশ্যের মিথ্যা কল্পনা তৈরি করে। সৌভাগ্যের বিষয় হলো, ল্য থিয়েনের চেতনা সময়মতো ফিরে আসে। খুব গুরুত্বপূর্ণ সেই মুহূর্তে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ধ্বংস করে ফেলেন।

ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, চলতি বছর প্রদর্শিত বুনি বেয়ারস: দ্য ওয়াইল্ড লাইফ চলচ্চিত্রটির বিষয় আরও গভীর হয়েছে। আগের চলচ্চিত্রে হয়তো পশুপাখি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানবজাতির ভাবানুভূতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতো। এবার বাবা ও মেয়ের মমতার বন্ধন, স্বার্থের সমানে কুয়াং থৌ ছিয়াংয়ের ব্যক্তিগত পছন্দ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন নিয়ে মানুষের চিন্তাসহ বিভিন্ন বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এত বিশাল বিষয় শিশুদের জন্য গ্রহণ করা একটু কঠিন। তবে শিশুদের সঙ্গে বাবা-মা কিংবা বড়রা চলচ্চিত্রের এসব বিষয় বুঝতে পারেন। সন্তানদের সঙ্গে কার্টুন চলচ্চিত্র দেখার পাশাপাশি দারুণ আনন্দও তারা উপভোগ করতে পারেন।

এবারে আমরা বুনি বেয়ারস: দ্য ওয়াইল্ড লাইফ নামে এ চলচ্চিত্রের ভিজুয়াল এফেক্টসের কথা জানাবো। এক্ষেত্রে বেশি কথা বলা দরকার নেই। বুনি বেয়ারস এই ধারাবাহিক চলচ্চিত্র টানা ৭ বছর ধরে প্রদর্শিত হচ্ছে। ভিজুয়াল এফেক্টস, চলচ্চিত্রের ছন্দ ও আবহ সংগীত, সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, চলচ্চিত্র নির্মাণের মান বেশ উন্নত।

আশা করি, প্রতিটি শিশু ছোটবেলায় পশুপাখিতে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো।

চলচ্চিত্রে ল্য থিয়েন এবং মেয়ের মমতার বন্ধনও অনেক মনোমুগ্ধকর; কারণ, এটি একটি সর্বজনীন বিষয়।

(লিলি/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040