করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা সুস্থ হওয়ার সংখ্যার চেয়ে বেশি কেন?--সংক্রামক রোগ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞদের জবাব
  2020-01-30 19:25:43  cri
জানুয়ারি ৩০: সম্প্রতি চীনে অভিনব করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে কম। এর কারণ কি? বিশেষজ্ঞরা এ সম্পর্কে তাদের কথা জানিয়েছেন।

নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কি? বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের সামর্থ্য বেড়েছে। পর্যবেক্ষণের আওতা বৃদ্ধি হলো এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

সোমবার উহানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৯২জন। হুপেই প্রদেশের চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি'র কমিটির উপ সম্পাদক ও উহান শহরের সিপিসি কমিটির সম্পাদক মা গুও ছিয়াং সে প্রদেশের অভিনব করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কর্মসংক্রান্ত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এ ধরণের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রথমে উহান থেকে বিভিন্ন নমুনা জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে নিয়ে পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু বর্তমান হুপেই প্রদেশেই পরীক্ষা করা যাচ্ছে।

পরীক্ষার আওতা ও সামর্থ্য বেড়েছে। মা গুও ছিয়াং বলেন, আসলে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের গতি বৃদ্ধি পায়নি, কিন্তু সন্দেহভাজন রোগী থেকে রোগাক্রান্ত মানুষ চিহ্নিতকরণের গতি বেড়েছে।

জাতীয় চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সদস্য ও বেইজিংয়ের তিথান হাসপাতালের সংক্রামক রোগগুলির নির্ণয় ও চিকিত্সা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ লি স্যিং ওয়াং বলেন, কোন কোন মানুষের লক্ষণ নেই কিন্তু তারাও আক্রান্ত হয়েছে। তাদের জন্য নিউক্লিক এসিড পরীক্ষাটি ইতিবাচক। এটি হলো আমাদের পরীক্ষার সামর্থ্য বৃদ্ধি হওয়ার পর উদ্ভাবিত ব্যবস্থা।

এ ছাড়া অভিনব করোনা ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার শক্তি বেশি। এটি হলো আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক পরিমাণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। চীনের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের উপ পরিচালক ফেং জি জিয়ান বলেন, তথ্য অনুযায়ী সার্স ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছিল ৯দিন। কিন্তু অভিনব করোনা ভাইরাস মাত্র ৬ থেকে ৭ দিনে ছড়িয়ে পড়ছে।

হাসপাতালে চিকিত্সার প্রক্রিয়া আছে এবং হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও কঠোর মানদণ্ড রয়েছে।

বেইজিং শহরের স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য ও চীনা ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির একাডেমিশিয়ান চাং বো লি বলেন, তিনি গত ৮ জানুয়ারি হুপেই থেকে বেইজিংয়ে ফিরে আসেন। তাঁর জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি ছিল। ১৩ জানুয়ারি এ রোগী বেইজিং তিথান হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করেন ও চীনা ঔষধ খাওয়া শুরু করেন। ২৪ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে যান তিনি। হাসপাতালে মোট ১৫দিন ছিলেন চাং।

লি স্যিং ওয়াং বলেন, হালকা রোগী হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করেন প্রায় এক সপ্তাহ, কিন্তু গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ বা আরো বেশি সময় লাগে।

তিনি বলেন, আমাদের আক্রান্তদের হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বের যাওয়ার মানদণ্ড হলো ক্লিনিক্যাল লক্ষণ ও শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার স্বাভাবিক হওয়া এবং দুই বারের মতো নিউক্লিক এসিড পরীক্ষা নেতিবাচক হওয়া। তাই বর্তমানে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বের যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কম।

লি স্যিং ওয়াংয়ের চোখে যদিও সংক্রামিত ব্যক্তি যাদের লক্ষণ বা জ্বর নেই, অথবা স্পষ্ট কোনো লক্ষণ নেই; তবুও মাঝে মাঝে শুকনো কাশি বা অবসাদগ্রস্ত হওয়ায় ভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কা রয়েছে। এটি ভাইরাস প্রতিরোধ কাজে কঠিন ও জটিলতা সৃষ্টি করে। কিন্তু হালকা আক্রান্তদের কাশির লক্ষণ সাধারণত কম হয়, তাই সংক্রমণের শক্তি বেশি ছিল না। এদিকে রোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগকারী ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষণ ছাড়াই আক্রান্ত খুঁজে পাওয়া গেছে। বর্তমানে তাঁদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাই, এটা বলা যায় যে, আক্রান্তের হার বাড়লেও সংক্রমণের উত্স নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

(ছাই/তৌহিদ/তৌহিনা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040