ফোর স্প্রিংস
  2020-01-30 14:27:33  cri

'ফোর স্প্রিংস' এ তথ্যচিত্রের পরিচালক হচ্ছেন লু ছিং ই।

তিনি বলেন, 'ফোর স্প্রিংস' (four springs) তথ্যচিত্রের নির্মাণ কাজ 'আমার বাবা' নামে তার একটি ডায়রি থেকে শুরু হয়। তিনি 'আমার বাবা' ডায়রিটি 'তৌপান' নামে চীনের একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন। এক রাতে তার অনুসরণকারীর সংখ্যা ৭০০০ ছাড়িয়ে যায়। এই ডায়রি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ও জনপ্রিয়তা পাওয়ায় তিনি বেশ অবাক হয়ে যান। তারপর তিনি বাবা-মার দৈনন্দিন জীবনের ওপর দৃষ্টি রাখতে শুরু করেন।

২০১৩ সালের বসন্ত উত্সবে তিনি একটি ক্যামেরা নিয়ে জন্মস্থানে বাবা-মার জীবনযাপন পদ্ধতি রেকর্ড করা শুরু করেন। শুরুতে তিনি কেবল পারিবারিক ভিডিও রেকর্ড করার চেষ্টা করতেন এবং তথ্যচিত্র নির্মাণের কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। প্রায় দুই বছর পর তার রেকর্ড করা বিষয় সংগ্রহ করে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

তিনি বলেন, তার এই চিন্তা-ধারণা তাইওয়ানের বিখ্যাত পরিচালক হো সিও সিয়েনের কাছ থেকে এসেছে।

কোনও একদিনে তিনি হো সিও সিয়েন নামে চীনের তাওয়ানের এক বিখ্যাত পরিচালকের সাক্ষাত্কার দেখেন।

সাক্ষাত্কারে একজন দর্শক হো সিও সিয়েনকে বলেন, 'আমি চলচ্চিত্র নিয়ে লেখাপড়া করছি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। আপনি আমাকে কোনো পরামর্শ দিতে পারেন?' তারপর হো সিও সিয়েন সেই দর্শককে উত্সাহ দিয়ে বলেন, ইচ্ছা থাকলেই শুটিং করা যায়। চেষ্টা করুন তাহলে। এটাই আমার পরামর্শ।

পরিচালক হো সিও সিয়েনের কথা লু ছিং ইকে উত্সাহিত করে। তখন থেকে তিনি পারিবারিক ভিডিও সংগ্রহ করে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।

লু ছিং ই বলেন, তিনি চার বছর সময় দিয়ে তার জন্মস্থানের ২০ বছরের পরিবর্তন তুলে ধরেন। ক্যামেরায় তিনি নিজের বাবা-মা, প্রয়াত বড় বোন, তার বড় ভাই এবং নিজেকেও ধারণ করেন। তিনি ক্যামেরার মাধ্যমে খুব সাধারণ একটি পরিবারকে তুলে ধরেন।

লু ছিং ই'র জন্মস্থান কুইচৌ প্রদেশের তুশান জেলায়। বাবা লু ইউন খুন একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। অবসরগ্রহণের আগে তিনি স্কুলে পদার্থবিদ্যা ও সংগীত বিষয়ে শিক্ষাদান করতেন। বাবা বেহালা, আরহু ও বাঁশিসহ ২০টিরও বেশি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। মা লি কুয়ে সিয়েন একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। বাবার মতো মাও গান গাইতে ও নাচতে পছন্দ করেন। সবসময় বাবা-মা'র মুখে হাসি লেগে থাকে। পরিচালকের দৃষ্টিতে, তার বাবা মা'র জীবনীশক্তি অনেক প্রবল। কোনও প্রতিবন্ধকতা তাদের থামাতে পারে না বলে তিনি মনে করেন।

তথ্যচিত্রে মোট ৪টি অধ্যায় আছে। এটি ২০১৩ সালে শুরু হয় এবং ২০১৬ সালে শেষ হয়। মোট ২৫০ ঘণ্টা সময় শুটিং করেন তিনি।

তথ্যচিত্রের অধিকাংশ সময় দেখা যায়, বাবা ও মা রান্না করছেন, গান গাইছেন এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন। তারা ক্যামেরার সামনে উত্তেজিতভাবে বলেন, সোয়ালো বাসার ঘরের ছাঁইচে বাসা তৈরি করে এবং গাছে চড়ুইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে।

যখন মা সসেজ তৈরি করছেন, তখন তিনি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেন, যত ধনী হোক, মানুষের নিজের কাজ নিজে করার দক্ষতা হারানো উচিত্ নয় এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।

দ্বিতীয় বসন্তকালের শেষে পরিচালকের বড় বোন রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই ঘটনা পরিবারের সবার মনে তীব্র আঘাত হানে। তথ্যচিত্রে বাবা-মার বেদনা খুব বেশি দেখানো হয় নি। দর্শকমণ্ডলী উপলব্ধি করতে পারে যে, এই বাড়ি থেকে কেউ একজন হারিয়ে গেছে।

তৃতীয় বসন্তকালে বড় মেয়ের মৃত্যুর কারণে মা'র মুখের হাসি কমে যায়। তিনি চিন্তা করা শুরু করেন, তিনি মারা গেলে কে তার স্বামীর যত্ন নেবেন?

সময় থাকলে বাবা মা ঘুরতে ঘুরতে বড় মেয়ের কবরে যান। খাওয়ার সময় মা টেবিলে মেয়ের জন্য একজোড়া চপস্টিক্স ও একটি বাটি রাখেন। তথ্যচিত্র দেখে আমরা বুঝতে পারি, মেয়ে হারানোর বেদনা বাবা-মা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেন না।

চতুর্থ বসন্তকালে একটি অংশ আছে। বাবা-মাকে নিজের তৈরি একটি ভিডিও দেখান। ভিডিওয়ের আবহ সংগীত হলো বড় মেয়ের গাওয়া গান। মা ভিডিও দেখেন আর কান্না-কাটি করেন।

এর মধ্যে দু'বছর সময় পার হয়ে যায়। বড় মেয়ের মৃত্যু এই পরিবার কখনওই তা ভুলতে পারবে না।

পরিচালক লু ছিং ই বলেন, তার কাছে জীবনের প্রতি বাবা মা দৃষ্টিভঙ্গি দারুণ শ্রদ্ধেয়। তিনি বলেন, আমার ৪০ বছর বয়সে বড় বোন মারা যান। আমি শোক, বিষণ্ণ ও অসহায় বোধ করি। আমি বিশ্বাস করি, সময় সব দুঃখ দূর কর দেয়। আমার বাবা-মা নানা রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, কিন্তু আমি কখনও তাদের মুখে একটিও নালিশ শুনি নি। তথ্যচিত্রে আমি তাদের শক্তিশালী অথচ নরম মানসিক চেতনার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

'ফোর স্প্রিংস' তথ্যচিত্রটি ১২তম ফার্স্ট চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের পুরস্কার জয় করে। এ তথ্যচিত্র নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক প্রশংসনীয় কথাও বলেন। তবে পরিচালক বলেন, তার কাছে পুরস্কার ও প্রশংসা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি এই তথ্যচিত্রকে উপহার হিসেবে বাবা মাকে দিতে পেরেছেন এবং বাবা মা নিজ চোখে এই তথ্যচিত্র উপভোগ করেতে পেরেছেন।

বেইজিংয়ে থাকাকালীন ৩০ বছরে লু ছিং ই বিভিন্ন কাজ করতেন। তিনি ছবি আঁকতেন, ফুটবল খেলতেন এবং ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। চলচ্চিত্র শুটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত এক্ষেত্রে তার কোনো পেশাদার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ছিলো না। তাই তিনি বই কিনে নিজেই লেখাপড়া শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে তিনি ৮ শতাধিক চলচ্চিত্র দেখে শেষ করেন। কোনও কোনও চলচ্চিত্র তিনি দশ বারেরও বেশি দেখেছেন। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে তার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। শুটিং করার পর তিনি তার নিজের চিন্তা-ভাবনা তাতে যোগ করেন। প্রতিদিন তিনি দশ ঘণ্টারও বেশি সময় সম্পাদনার পেছনে ব্যয় করেছেন।

দর্শকেরা যারা এ তথ্যচিত্র দেখেছেন, তারা বলেন, এ তথ্যচিত্র দেখার সময় হাসি ধরে রাখা যায় না। তাদের মধ্যে কোনও কোনও দর্শক বলেন, তথ্যচিত্রে পরিচালকের বাবা মা তাদের মনে নির্ভুল বাবা মা'র প্রতিচ্ছবি, মৃদু, উদার ও সহনশীল। কেউ বলেন, তথ্যচিত্রের পারিবারিক আন্তরিকতার দিকটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

আসলে ভালো একটি চলচ্চিত্র হিসেবে কোন বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

সত্যিকার অনুভূতি ও সত্যিকারের অভিনয়। এটি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাই না? (লিলি/আলিম/শুয়ে)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040