রোববারের আলাপন-200202
  2020-02-02 19:32:57  cri

 






আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।

আকাশ: guo nian hao!

আলিম: শুভ চীনা নববর্ষ!

আলিম: আকাশ, আমরা আজও চীনের বসন্ত উত্সবের কথা বলবো, কেমন? আপনি গত অনুষ্ঠানে বলেছেন 'সান সি'র রাতে মানে নববর্ষের আগের দিন রাতে সবাই আতশবাজি ফোটান, তাই না? তারপর আপনারা কী কী করেন?

আকাশ: অবশ্যই ঘুমাই। কিন্তু সারারাত আতশবাজির শব্দ থাকে এবং মন আনন্দে অনেক উত্তেজিত থাকে, এজন্য রাতে বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারি না। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠি।

আলিম: এত আগেই?

আকাশ: হ্যাঁ। খুশির কারণে আর ঘুমাতে পারি না, তা ছাড়া কিছু দায়িত্বও আছে।

আলিম: দায়িত্ব মানে?

আকাশ: হ্যাঁ, কিছু দায়িত্ব আছে। যেমন- চীনা নববর্ষের প্রথম দিনের নাম হচ্ছে 'ছু ই'। এদিন সবাই খুব আগে ঘুম থেকে উঠে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের বাসায় গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এজন্য খুব আগে উঠতে হয় এবং দাদার বাড়িতে গিয়ে প্রথমে দাদাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে হয়। নববর্ষের দিন সবাইকে খুব সকালে উঠতে হয়, কারণ প্রতিবেশীরা যদি বাসায় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে এসে দরজা বন্ধ দেখেন, তাহলে এটা ভালো নয়। এজন্য অবশ্যই আগে উঠতে হবে।

আলিম: আচ্ছা। নববর্ষের প্রথম দিনের প্রথম খাবার, মানে নাস্তার কি কোনো রীতিনীতি আছে?

আকাশ: অবশ্যই আছে। 'ছু ই' মানে নববর্ষের প্রথম দিন সকালে এবং দুপুরে আবারো আগের দিনের তৈরি চিয়াও জি খেতে হবে।

আলিম: আবার খেতে হবে।

আকাশ: হ্যাঁ। খেতেই হবে।

আলিম: এখন আমি বুঝতে পারছি চিয়াও জি চীনাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আকাশ: হাহাহ, এটা অনেকটা 'মাছে ভাতে বাঙালি'র মতো। আসলে চিয়াও জি মাত্র একটি খাবার নয়, এর অনেক অর্থ রয়েছে।

আলিম: নাস্তায় চিয়াও জি খাওয়ার পর আপনি কি কি করেছেন?

আকাশ: আমি বাবার সাথে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের বাসায় গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। আমরা প্রথমে পরস্পরকে দেখার সময় বলি: 'কুও নিয়ান হাও'!

আলিম: কুও নিয়ান হাও।

আকাশ:। হ্যাঁ। মানে শুভ চীনা নববর্ষ। 

আলিম: কুও নিয়ান হাও।

তারপর কি করেন?

আকাশ: তারপর নববর্ষের দ্বিতীয় দিন অর্থাত 'ছু আর', আমরা নানার বাড়িতে গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।

আলিম: প্রথম দিন দাদার বাড়ি, দ্বিতীয় দিন নানার বাড়ি, তাইনা?

আকাশ: হ্যাঁ। সবাইকে যেতে হবে। পরিবারের অনেকে হয়তো সারা বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকেন, এ দিন এক টেবিলে সবাই গোল হয়ে বসে চিয়াও জি খেতে খেতে গল্প করি। অনেক সুন্দর স্মৃতি। 

আচ্ছা, ভাই বাংলাদেশের নববর্ষের বিশেষ খাবার বা  রীতিনীতি কি?

আলিম:...

আকাশ: বন্ধুরা, আসলে চীনের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি বা উদযাপনের উপায় চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের। আমার জন্মস্থান হান তান হচ্ছে চীনের উত্তরাঞ্চল। আপনারা যা শুনেছেন তা হচ্ছে চীনের উত্তরাঞ্চলের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি। কিন্তু চীনের অন্যান্য অঞ্চলে বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি একটু ভিন্ন। আমাদের সহকর্মী তুহিনার জন্ম চীনের হু বেই প্রদেশের শিয়াও কানে। এটা হচ্ছে চীনের মধ্যাঞ্চল। আমরা এখন শুনবো তার জন্মস্থানে বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি কি রকম?

আকাশ: তুহিনা, আমাদের অনুষ্ঠানে স্বাগতম। আমার জন্মস্থান হান তানে সান সি, মানে চীনের চান্দ্র নববর্ষের আগের দিন এবং ছু শি মানে চীনের নববর্ষের প্রথম দিন আমরা সাধারণত চিয়াও জি খাই। আপনার জন্মস্থানে কি খাওয়া হয়?

তুহিনা: 

আকাশ: আমরা ছু শিতে সবাই দাদার বাড়িতে যাই, সেখানে একসাথে রাতের খাবার চিয়াও জি খাই। তারপর নতুন বছরের প্রথম দিন আমরা আবার দাদার বাড়িতে যাই এবং প্রথমে দাদা-দাদীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। তারপর আশেপাশের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের বাসায় গিয়ে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। দ্বিতীয় দিন আমরা নানা-নানীর বাসায় যাই এবং তাদেরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। আপনার জন্মস্থানের রীতিনীতি কি রকম?

তুহিনা:

আকাশ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! আশা করি আপনি জন্মস্থান শিয়াও কানে একটি চমত্কার ছুটি কাটাবেন। নতুন বছরে আপনার পরিবারের সবার জীবন সুস্থ,  সুন্দর ও সমৃদ্ধ হোক,  এই কামনা করি।

আকাশ: বড় ভাই, আপনি এটা শোনার পর আপনার কি মনে হয়?

আলিম:... ভাই, তুহিনার জন্মস্থান হচ্ছে চীনের মধ্যাঞ্চলে, তাইনা? তাহলে যদি আরো দক্ষিণে যেতে চাই, তাহলে সেখানকার রীতিনীতি কি আরো ভিন্ন হবে?

আকাশ: আচ্ছা, আমি বুঝতে পেরেছি। তাহলে আমরা চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের রীতিনীতি শুনবো, কেমন?বন্ধুরা, মিস কান লু থিং হচ্ছেন ইয়ুন নানের স্থানীয় মানুষ। আমরা এখন তাঁর কাছ থেকে শুনবো তাঁর জন্মস্থান ইয়ুন নানের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি, কেমন?

কান লু থিং(আলিম): আমি ভাবছি আপনাদের উত্তরাঞ্চলের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতির সঙ্গে আমাদের অনেক মিল আছে। এছাড়া অনেক পার্থক্যও আছে। যেমন বসন্ত উত্সবে আপনারা বেশি বেশি চিয়াও জি খান। আমরা ইয়ুন নানে তুলনামূলকভাবে চিয়াও জি কম খাই। আমরা 'আর খুয়াই' খেতে পছন্দ করি। 'আর খুয়াই' হচ্ছে ভাত থেকে তৈরি এক ধরনের প্রধান খাবার, এই খাবার খুব নরম এবং সুস্বাদু। সান সি মানে নববর্ষের আগের দিন আমরা বিশেষভাবে স্নান করে থাকি। তাহলে নতুন বছরে সব জায়গায় খাবার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাসার দরজার পিছনে আমাদেরকে দুটি সুগার ক্যান রাখতে হয়। এর মানে নতুন বছরে জীবন দিন দিন উন্নত হবে এবং মিষ্টির মতো সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে। বসন্ত উত্সবে আমরা কোন দিন দাদা বা নানার বাসায় যাই এটার কোনো রীতিনীতি নেই, আমরা ইচ্ছা মত যাই।

আকাশ: ভাই, আপনার কেমন লেগেছে?

আলিম:

আকাশ: ভাই, এবার আমার একটা প্রশ্ন আছে, আমরা সবাই জানি যে, চীনের ইয়ুন নান প্রদেশ বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বিমানে ঢাকা থেকে ইয়ুন নানে আসতে মাত্র ২ ঘন্টা সময় লাগে। তাহলে ইয়ুন নান প্রদেশের নববর্ষের রীতিনীতি ও বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলের রীতিনীতির কি কোনো মিল আছে?

আলিম:

আকাশ: আচ্ছা। অনেক মজার। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার রীতিনীতি হয়তো ভিন্ন, কিন্তু পরিবার, বন্ধুদের ভালোবাসা এবং মনের আনন্দ এক, তাইনা? আশা করি নতুন বছর সবার একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বছর হবে।

(আকাশ/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040