রোববারের আলাপন-200126
  2020-01-26 18:47:43  cri

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি আলিম এবং শিয়েনান আকাশ।

আকাশ: guo nian hao!

আলিম: guo nian hao!

আলিম: বন্ধুরা, guo nian haoর অর্থ হচ্ছে হ্যাপি চাইনিজ নিউ ইয়ার।

আকাশ: বন্ধুরা, চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী, ২৪ জানুয়ারী হলো চীনের 'সান সি', মানে চীনের নববর্ষের আগের দিন তথা পুরাতন বছরের শেষ দিন। এ দিন চীনারা যত দূরেই থাকুক না কেন, সবাই জন্মস্থানে পরিবারের কাছে ফিরে যান। আসলে আমার কাছে এ কয়েক বছরের 'সান সি'র বিশেষ অর্থ আছে।

আলিম: কী অর্থ আছে?

আকাশ: বড় ভাই আপনি তো জানেন, আমি চার'বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশে ছিলাম। কয়েক বছর আগে আমি চীনে ফিরে আসি। আমি চারটি বছর বাড়িতে বসন্ত উৎসব পালন করতে পারিনি। বাবা-মা ছাড়া বসন্ত উৎসব প্রায় অর্থহীন। তাইনা বড় ভাই? এজন্য এখনকার 'সান সি' নিয়ে আমি খুব উদ্দীপিত এবং আনন্দিত।

আলিম:...

চীনারা 'সান সি-তে কী করে?

আকাশ: আচ্ছা। বন্ধুরা, আমি তাহলে আমার আগের বসন্ত উত্সবের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করি, তাহলে 'সান সি'সহ আপনারা বুঝতে পারবেন চীনারা কিভাবে বসন্ত উত্সব কাটায়, কেমন?

বন্ধুরা, আমি প্রথম কয়েক বছর চীন আন্তর্জাতিক বেতারে কাজ করার সময় বসন্ত উত্সবের মধ্যে অফিস করেছি, মানে জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারি নি। তারপর এক বছর বসন্ত উত্সবের সময় ছুটি পাই। আসলে বড় ভাই, বসন্ত উত্সবের সময় ট্রেন বা বিমানের টিকিট কেনা অনেক অনেক কঠিন। ঈদের সময় বাংলাদেশের অবস্থাও একইরকম, তাইনা?

আলিম:...

আকাশ: এজন্য অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন সকালে টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও আমার জন্মস্থান হান তানে ফিরে যাওয়ার টিকিট পাইনি। তখন ট্রেনের টিকিট কেনার কোনো মোবাইল অ্যাপ ছিলো না। এজন্য ট্রেন স্টেশন বা টিকিট কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কিনতে হতো।

আলিম: তারপর কি হলো?

আকাশ: আমি আশা ছেড়ে দেইনি। অনেক চেষ্টার পর 'সান সি'অর্থাত্ চীনের নববর্ষের আগের দিন বিকেলে হান তানে ফিরে যাওয়ার একটি টিকিট পাই। কিন্তু কোনো সিট নেই। আসলে তখন সিট কোনো ব্যাপার না, টিকিট পাওয়াটাই বড় ব্যাপার। টিকিট পাওয়ার পর, আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাই। কারণ সবাই 'সান সি'র আগে বাসায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য 'সান সি'র দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় টিকিট তুলনামূলকভাবে একটু সহজে কিনতে পারা যায়।

আলিম: আপনি তখন কয়টার সময় হান তানে পৌঁছালেন?

আকাশ: বেইজিং থেকে হান তানের দূরত্ব ৪৪০ কিলোমিটার। দ্রুতগতির ট্রেনে বেইজিং থেকে হান তানে প্রায় দু ঘন্টায় পৌঁছানো যায়। যাই হোক, আমি প্রায় পাঁচটার সময় দাদার বাড়ি পৌঁছাই। তার পর প্রথমে আমি এবং আমার বাবা একসাথে দাদীর স্মরণে একটা অনুষ্ঠান করি। এরপর আমরা দাদার বাসায় ফিরে যাই। বিকালে ইতোমধ্যে সবাই চিয়াও জি বা ডাম্পলিং তৈরি করা সম্পন্ন করেছেন। বড় ভাই, আপনি আমাদের ভাইবোনদেরকে চিয়াও জি সম্পর্কে কিছু বলতে পারবে?

আলিম:

আকাশ: বন্ধুরা, চীনে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে বসন্ত উত্সবের সান সি, চু ই, ফো উ, মানে চীনের চান্দ্র নববর্ষের আগের দিন, প্রথম দিন এবং পঞ্চম দিন সবাই চিয়াও জি তৈরি করে খান । এ বিশেষ সময়ে সবাই যত দূরেই থাকুক না কেন, সবাই জন্মস্থানে ফিরে যান এবং একসাথে চিয়াও জি তৈরি করেন। বড় ভাই, বাংলাদেশে ঈদের সময় চীনের চিয়াও জি'র মতো একরকম বিশেষ কোনো খাবার আছে?

আলিম:... ভাই, আমার একটি প্রশ্ন আছে, চীনারা বসন্ত উত্সব ছাড়া অন্যসময়ে কি চিয়াও জি খান?

আকাশ: হ্যাঁ। অবশ্যই। ইচ্ছামতো খেয়ে থাকেন। যেমন আমার বাবা চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করেন। এজন্য মা প্রায় প্রতি সপ্তাহে চিয়াও জি তৈরি করেন। এজন্য ছোটবেলায় চিয়াও জি খেতে আমার অনেক বিরক্ত লাগতো।

আলিম: কারণ তখন অনেক খেয়েছেন, হাহা।

আকাশ: জ্বি। কিন্তু, জন্মস্থান থেকে বেইজিংয়ে যাওয়ার পর, বিশেষ করে চীন থেকে বাংলাদেশের উত্তরায় থাকার সময়, আমি আমার বাবার মতো চিয়াও জি খেতে অনেক পছন্দ করতাম। আসলে চিয়াও জি আমার কাছে শুধু একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটা মানে বাড়ি, পরিবারের সম্মিলন।

আলিম: ভাই, তাহলে আন্টি সব চিয়াও জি তৈরি করার পর সিদ্ধ করেন, তাইনা?

আকাশ: জ্বি। তবে সান সির সন্ধ্যায় চিয়াও জি সিদ্ধ করার আগে, চীনে একটি রীতি আছে,

আলিম: কী রীতি?

আকাশ: পরিবারের বড় ছেলে আতশবাজি ফোটাবেন। আতশবাজি ফোটানোর সাথে সাথে চিয়াও জি সিদ্ধ করা শুরু হবে।

আলিম: তার মানে, আতশবাজি না ফোটালে চিয়াও জি সিদ্ধ করা হবেনা, তাইনা?

আকাশ: হ্যাঁ। আপনি ঠিকই বলেছেন। এটা হচ্ছে একটি রীতি। যাই হোক, চিয়াও জি সিদ্ধ করার পর দাদা, বাবা, মা এবং আমি টেবিলে গোল হয়ে বসে খেতে শুরু করি। তখন ওই মুহূর্তে আমার চোখে পানি চলে আসে। আমার পরিবার যেন আমার চোখের পানি না দেখতে পারে সেজন্য আমি আমার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেই। বড় ভাই, ওই মুহূর্তটি আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। ঈদে বা অন্য সময় আপনার বাড়ি ফিরে যাওয়ার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন?

আলিম:....

আচ্ছা, সান সি সন্ধ্যায় চিয়াও জি খাওয়ার পর আপনারা কি কি করেছেন?

আকাশ: তখন আমরা চিয়াও জি খাওয়ার পর, দাদার সাথে একসাথে সিসিটিভি'র বসন্ত উত্সবের বিশেষ অনুষ্ঠান দেখি। একসময় দাদা ঘুমিয়ে পড়েন। আমি মা-বাবার সাথে নিজেদের বাসায় ফিরে গিয়ে বাকি অনুষ্ঠান দেখতে থাকি।

আলিম: তারপর কী করেছেন?

আকাশ: রাত ১২টার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। অর্থাত্ আমরা টিভির অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে নতুন বছরের শুরুর জন্য অপেক্ষা করি। তারপর নতুন বছর শুরু হবার ঠিক ওই মুহূর্তটিতে সবাই বাইরে গিয়ে আতশবাজি ফোটাই। তখন সারা শহর আতশবাজির শব্দে ভরে ওঠে।

আলিম: হ্যাঁ। এখন তো বেইজিংয়ে পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় আতশবাজি ফোটানো বলতে গেলে নিষিদ্ধ। তবে আমি প্রথম যখন চীনে আসি তখনও আতশবাজি প্রচুর ফোটানো হতো।....

আলিম: বন্ধুরা, এখন পরিবেশ বা বায়ুদূষণ বন্ধ করতে চীনের অধিকাংশ শহরে আতশবাজি নিষিদ্ধ। পরিবেশ রক্ষার জন্য এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আতশবাজি ছাড়া বসন্ত উত্সবের আবহ অনেক কমে যায়।

আকাশ: বড় ভাই, ছোটবেলায় আমরা অনেক লম্বা সময় আগে থেকেই বসন্ত উত্সবের অপেক্ষায় থাকতাম। কারণ তখন আতশবাজি ফোটাতে পারতাম। এটা ছিলো ভীষণ মজার এবং আনন্দের।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040