বসন্ত উত্সবের ছুটিতে কী কী চলচ্চিত্র দেখা যায়?
  2020-01-23 14:30:24  cri

২০১৯ সাল আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে। গত বছর চীনের নিজস্ব চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক 'আনন্দহীন শীতকালের' মধ্যে ছিলো বলে অনেকে মনে করেন। তবে বাস্তবতা হলো, এর মধ্য দিয়েই নিজস্ব চলচ্চিত্র শিল্প সামনে এগিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে চীনের বক্সঅফিসের মোট আয় ছিল ৬৪.২৬ বিলিয়ন ইউয়ান। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে চীনের বক্সঅফিসে আর কী কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা প্রথমেই জানবো, ২০২০ সালের শুরুতে কী কী চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

*গত ৩ জানুয়ারি 'লা ভিতা এ বেল্লা' নামে ইতালির এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।

আসলে এই চলচ্চিত্রটি ২০০১ সালে চীনের মূল-ভূভাগে দেখানো হয়। চীনা চলচ্চিত্র অনুরাগীদের এখনও এ ছবিটি না-দেখা মানুষের সংখ্যা খুবই কম বলে আমি মনে করি। তবে যারা সিনেমা হলের বড় পর্দায় এ চলচ্চিত্র উপভোগ করেছেন, তাদের সংখ্যা কিন্তু বেশি নয়। এবারে ৪-কে প্রযুক্তির মাধ্যমে এই চলচ্চিত্রটি পুনরায় প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটি অনেক চলচ্চিত্রপ্রেমীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

এই চলচ্চিত্রে যে গল্পটি তুলে ধরা হয়, সেটি এমন।

অন্ধকার ইহুদি-শিবিরে একজন বাবা খেলাচ্ছলে ও হাসির মাধ্যমে ছেলেকে সুন্দর সময়ের গল্প বলছেন, সুন্দর দিন কল্পনা করছেন। বাস্তব শোচনীয় পরিস্থিতি ও সুন্দর জীবন, এ দুটি বিষয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

* দ্য ফেয়ারওয়েল নামে চলচ্চিত্রটি ১০ জানুয়ারি মুক্তি পায়। এটি উত্তর আমেরিকার বাজারে চীনবিষয়ক আরেকটি আকর্ষণীয় চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রের মূল নির্মাতারা অধিকাংশই চীনা এবং কথোপকথনও চীনা ভাষায়। এ চলচ্চিত্রে চীনা ও পশ্চিমা সংস্কৃতির পার্থক্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

চলচ্চিত্রের ঘটনা এমন।

নানি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তার আত্মীয়স্বজন নানীর কাছে রোগের কথা গোপন রাখতে চান। কারণ, তারা মনে করেন, রোগ সম্পর্কে এত জানাজানি করার চেয়ে রোগ সম্পর্কে না জেনে মৃত্যুবরণ করা অনেক ভালো। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে বড় হওয়া নাতনী তার নানীকে বাস্তবতা জানিয়ে দিতে চায়, কারণ সে মনে করে, নিজের শরীরের অবস্থা জানার অধিকার আছে নানীর। মৃত্যু প্রসঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিমা জগতের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা রকম। তবে ভালোবাসার কারণে সৃষ্ট ফাটল অবশেষে ভালোবাসার দ্বারাই মেরামত হয়ে যায়।

এবার 'রিচার্ড জুয়েল' নামে চলচ্চিত্রের পরিচালক ক্লিন্ট ইস্টউড পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের ওপর নজর দেবো। এ চলচ্চিত্রটি ১০ জানুয়ারি প্রদর্শিত হয়।

৮৯ বছর বয়সী ক্লিন্ট ইস্টউড প্রতি বছর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকেন। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার প্রতিটি শিল্পকর্ম প্রশংসিত হয়েছে। এ চলচ্চিত্রটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি করা হয়।

চলচ্চিত্রের গল্পটি এমন।

১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিক গেমসের নিরাপত্তারক্ষী রিচার্ড একটি বোমাভর্তি ব্যাকপ্যাক খুঁজে পান। তিনি দেরি না করেই মানুষের ভিড় সরাতে শুরু করেন। তারপর তিনি ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের বীর হয়ে ওঠেন।

তবে, পরবর্তীতে ঘটনার আকস্মিক পরিবর্তন আসে। এফবিআই সন্দেহ করে যে, রিচার্ড নিজেই বোমা রেখেছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ প্রসঙ্গে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়ে যায়। ফলে রিচার্ড অনেকের দুর্ব্যবহার ও ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। ৮৮ দিন পর এফবিআই বোমার সঙ্গে রিচার্ডের জড়িত থাকার সন্দেহ বাতিল করে দেয়। তবে সেসময় কেউ এই ঘটনাকে গুরুত্ব দেয় না। কয়েক বছর পর রিচার্ড বিষাদগ্রস্ত হয়ে মারা যায়। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৪৪ বছর।

ভ্যানগার্ড (Vanguard) নামে জ্যাকি চানের নতুন চলচ্চিত্র ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাবে। নিরাপত্তারক্ষীরা বিশ্বে চীনাদের সুরক্ষা দিয়ে থাকেন। তাদের আন্তঃদেশীয় উদ্ধারের গল্প বর্ণনা করা হয় এই চলচ্চিত্রে। উল্লেখ্য, চলতি বছর হলো চলচ্চিত্রাঙ্গনে জ্যাকি চানের ৬০তম বার্ষিকী। তার এ চলচ্চিত্র উপভোগযোগ্য কিনা, সবাই মিলেই তা দেখবো।

এবার আমি কিছু তথ্য জানাতে চাই। হয়তো সবাই জানেন, বসন্ত উত্সব হলো চীনের বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী উত্সব। বসন্ত উত্সব পুনর্মিলনের উত্সবও বটে। তাই অনেক চলচ্চিত্র পরিচালক বসন্ত উত্সবের ছুটিতে নিজেদের মুভি প্রদর্শন করতে চান। অবশ্যই এমন ধরনের চলচ্চিত্রের বিষয় হাস্যরসাত্মক ও সবার কাছে উপভোগযোগ্য। 'ডিটেকটিভ চায়নাটাউন ৩' ডিটেকটিভ চায়নাটাউন সিরিজ চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম। প্রথম চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালের বসন্ত উত্সবের সময় প্রদর্শন করা হয়। 'ডিটেকটিভ চায়নাটাউন-২'য়ের প্রশংসা কিছুটা কম হয়েছিল। তবে বক্সঅফিসে এর আয় খারাপ নয়। চলচ্চিত্রটি বক্সঅফিসে মোট ৩৪০ কোটি ইউয়ান আয় করে। ডিটেকটিভ চায়নাটাউন' নামের ধারাবাহিক চলচ্চিত্রটি হলো দেশের চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক মহলের প্রথম বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা আইপি হয়ে উঠেছে।

চলচ্চিত্রের প্রধান দুটি চরিত্র তদন্ত করতে জাপান যান। সেখানে কী কী ঘটনা ঘটে? ২৫ জানুয়ারি সিনেমা হলেই সেটা দেখা যাক।

চলচ্চিত্র বা টিভি নাটকের আইপি উল্লেখ করতে গেলে অবশ্যই 'লস্ট অন জার্নি' (Lost On Journey) চলচ্চিত্রের কথা বলতে হবে। ২০১০ সালে এই চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের পর 'লস্ট ইন থাইল্যান্ড' (Lost In Thailand) এবং 'লস্ট ইন হংকং' (Lost in Hong Kong) এ দুটি চলচ্চিত্রের নাম চলে আসে। বক্সঅফিসে এর অবস্থা বেশ ভালো। এবার 'লস্ট ইন রাশিয়া' (Lost in Russia) নামে চলচ্চিত্রটি ২৫ জানুয়ারি প্রদর্শিত হবে। আসলেই এসব চলচ্চিত্রকে রোড কমেডি বলে গণ্য করা যায়। সেসব চলচ্চিত্রে প্রধান চারিত্রগুলোর যাত্রাপথের ঘটনা থেকে এক-একটি মজার গল্প বলা হয়।

এখন একটি কার্টুন চলচ্চিত্রের ওপর দৃষ্টি রাখবো। নাম হলো 'লেজেন্ড অফ ডিয়েফিকেশন' (LEGEND OF DEIFICATION)। 'কালাররুম পিকচার্স' নামে প্রযোজনা সংস্থার প্রথম চলচ্চিত্র 'নে চা' প্রায়ই সবার কাছে সুপরিচিত। ২০১৯ সালে ডোমেস্টিক বক্সঅফিসের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে 'নে চা' মোট ৫০০ কোটি ইউয়ান উপার্জন করে। এবারে 'লেজেন্ড অফ ডিয়েফিকেশন' চলচ্চিত্রটি ২০২০ সালের বসন্ত উত্সবের সময় দেখানো হবে। এর প্রধান কারণ হলো 'নে চা'র বিশাল সফলতা। আসলে 'লেজেন্ড অফ ডিয়েফিকেশন' বা 'নে চা', যাই হোক, এতে চীনের রূপকথায় বর্ণিত দেবতাদের তুলে আনা হয়।

চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, দেবতাদের সাধারণ মানুষের মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়, কাজ করতে হয়, টেনশনও করতে হয়। যখন তারা নিজের জাদুকরী ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন তারা কীভাবে জীবনের এক একটি প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করবে? চলচ্চিত্রে সে উত্তর দেওয়া হয়েছে।

এখন 'দ্য রেসকিউ' (The Rescue) নামে একটি চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করবো। এটি ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাবে। এই চলচ্চিত্র সত্যিকারের একটি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি করা হয় এবং চীনের সামুদ্রিক উদ্ধারদলের গল্প এতে বলা হয়। নাম থেকে বোঝা যায়, চলচ্চিত্রটি বেশ আকর্ষণীয়। বিশাল খরচে তৈরি এই চলচ্চিত্র দর্শকদের হতাশ করবে না বলে আমি মনে করি। এ চলচ্চিত্রের পরিচালক হচ্ছেন দ্যান্তে ল্যাম। হংকংয়ে এই পরিচালকের আগের শিল্পকর্মগুলো দর্শক সমাদর পেয়েছে। অপারেশন মেকং (Operation Mekong) তার পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র। ২০১৬ সালে চীনের জাতীয় দিবসের সময় প্রদর্শিত সব চলচ্চিত্রের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন এবং 'অপারেশন অন রেড সি' (OPERATION RED SEA) ছিলো ২০১৮ সালে বার্ষিক বক্সঅফিসের চ্যাম্পিয়ন চলচ্চিত্র। তাহলে নতুন চলচ্চিত্রটি কেমন হবে? ধৈর্য নিয়ে আর একদিন অপেক্ষা করতে হবে।

আজকের অনুষ্ঠান শেষে, বিশেষ করে 'তুও কুয়ান' নামে একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। এতে চোং কুও ন্যু পাই বা চীনের নারী ভলিবল দলের গল্প তুলে ধরা হয়। অনেক চীনা মানুষ 'চোং কু ন্যু পাই' এ চারটি শব্দ শুনলে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবেন। ৪০ বছরের মধ্যে চীনের মহিলা ভলিবল দল ১০বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

৩৮ বছর আগে চীনের মহিলা ভলিবল দলের কিংবদন্তী যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮১ সালের ১৬ নভেম্বর চীনের মহিলা ভলিবল দল ইতিহাসে প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। চলচ্চিত্রে চীনের মহিলা ভলিবল দলের গৌরবময় ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয়েছে। চীনের মহিলা ভলিবল দল চীনের গৌরব ও চীনাদের চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। গোং লি নামে চীনের বিশ্ববিখ্যাত তারকা এ চলচ্চিত্রে দলের কোচের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

(লিলি/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040