গ্রন্থাগার: মানুষের সারা জীবনের স্কুল
  2020-01-29 19:07:16  cri

 

চেচিয়াং প্রদেশের চিয়া সিং শহরের গ্রন্থাগার এক বছরে ৫ হাজারটি নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। অন্যভাবে বললে, গড়ে প্রতিদিন ১৩টি অনুষ্ঠান!

গ্রন্থাগারটি মূলত সরকারি বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে। গ্রন্থাগারের কর্মীর সংখ্যা ১৫৮ জন। ১৫৮ জন মানুষ সীমিত অর্থ দিয়ে এক বছরে ৫০০০টি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। এর পেছনে কোনো গোপন রহস্য আছে কি?

বসন্ত উত্সবের কাছাকাছি একদিন সকালে, ৭৪ বছর বয়সী সুন বিন তার বন্ধুর সঙ্গে চিয়াসিং গ্রন্থাগারের দ্বিতীয় তলার কম্পিউটার রুমে আসেন। তিনি একটি কম্পিউটারবিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছেন। আজ তারা শিখবেন কীভাবে উইচ্যাটে নবর্বষের ই-কার্ড তৈরি করতে হয়।

সকাল ৯:১০ মিনিট। সুন বিন সবচেয়ে সামনে বসে গ্রন্থাগার-কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবকের কাছ থেকে শিখছেন, পাশাপাশি নোট নিচ্ছেন। তিনি জানালেন, এখন পুত্র ও কন্যা বা নাতি-নাতনিদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাধারণত উইচ্যাট ব্যবহার করেন। এ প্রশিক্ষণ ক্লাসে আসার আগে তিনি কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানতেন না। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এখন তিনি কম্পিউটারে অনলাইন কেনাকাটা করতে পারেন, হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন, এমনকি ফটোশপসহ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। ক্লাসশেষে ৬৭ বছর বয়সী চৌ ইউয়ু ইং মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, 'বয়স বেশি। সহজে ভুলে যাই। তাই আমি বার বার শিক্ষককে প্রশ্ন করি এবং শিক্ষক সবসময় অশেষ ধৈর্য নিয়ে আমাকে শেখান।'

চিয়াং সিং গ্রন্থাগারের শাখা আছে। শাখা গ্রন্থাগারে কয়েকজন শিশু কম্পিউটারে জ্যামিতিক চিত্র দেখছে। নাগরিক চিয়াও সিয়াও লি তার ৭ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে একসাথে 'ত্রিমাত্রিক মডেলিং প্রিন্ট' নামের একটি ক্লাস করছেন। তিনি বলেন, 'উইচ্যাটে চিয়াসিং গ্রন্থাগারের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে এ ক্লাস সম্পর্কে জানি। তারা প্রতিবার ভিন্ন ক্লাস আয়োজন করে। আমি আগ্রহী হই ও নাম তালিকাভুক্ত করি।'

 

এদিন চিয়াসিং গ্রন্থাগার ও তার শাখায় লেগো, ছবির বই পড়া, চীনা ঐতিহ্য, রোবটসহ ২০টি নানা শিরোনামের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ২০১৯ সালে চিয়া সিং গ্রন্থাগার ও এর দুটি জেলা শাখা এবং ১৬টি উপজেলা ও কমিউনিটি শাখায় ৫ হাজার অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এবং ১২ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়া হয়।

চিয়া সিং গ্রন্থাগারের প্রধান সেন হং মেই বলেন, 'এখন আমাদের ১০টির বেশি অনুষ্ঠান নিজস্ব ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানের বিশেষ শিক্ষণ উপাদান আছে। প্রাকস্কুল শিশু, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, প্রবীণ ও বিশেষ গ্রুপ মানুষের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান আয়োজন করি আমরা।'

এর মধ্যে কিছু অনুষ্ঠান বিগত ১০ বছর ধরে চলছে এবং মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো পরিবর্তিতও হয়েছে। যেমন, প্রবীণদের জন্য প্রশিক্ষণ ক্লাশে শুরুতে কম্পিউটার টাইপিং শিখানো হতো। এখন তাদেরকে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার বেশি শেখানো হয়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাস হল মোবাইফোন ফটোগ্রাফি ও বৈদ্যুতিন ফটো অ্যালবাম তৈরি।

প্রতিবছরের বসন্ত উত্সবের সময় গ্রন্থাগার কৃষক-কর্মীদেরকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কিনতে সাহায্য করে। এখন অবশ্য অনেকেই নিজে নিজে অনলাইনে টিকিট কিনতে পারে। তবে এ সেবা এখনও বজায় রাখা হয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, লুও সুয়াই নামের একজন কৃষক-কর্মী গ্রন্থাগার-কর্মীর সাহায্যে ট্রেনে টিকিট কিনেছেন এবং তিনি একটি কাগজে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন।

চিয়া সিং গ্রন্থাগারের উপ-প্রধান সু তাই ওয়েন বলেন, তারা প্রাথমিক স্কুলের জন্য 'হ্যালো গ্রন্থাগার' 'তথ্য সাক্ষরতা এবং নতুন প্রযুক্তি', 'আঞ্চলিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি' ও 'সাহিত্যসম্পদ'—এ চার ধরনের ক্লাস প্রস্তুত করেন। শহরের প্রত্যেক প্রাথমিক স্কুল নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী গ্রন্থাগারের কাছে আবেদন জানাতে পারে এবং গ্রন্থাগারের কর্মী স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিয়ে আসে।

চিয়া সিং গ্রন্থাগারের ফেং ছিয়াং গ্রামে একটি শাখা আছে। ভেতরে দেখতে একটি ক্যাফের মতো। গ্রামবাসিন্দা চু লিন চেন তার দু'জ

ন নাতি নিয়ে এখানে এসে বই পড়েন। তিনি বলেন, এখানে পরিবেশ ভাল এবং বই বেশি। শিশুরা খুব পছন্দ করে। গ্রামের এ ছোট গ্রন্থাগারে এক বছরে শতাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটি, গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে প্রায় প্রতিদিন অনুষ্ঠান থাকে। গ্রামের কাছাকাছি ২০ হাজার মানুষ এর থেকে উপকৃত হয়। ফেং ছিয়াং শাখার মতো চিয়সিং শহরে নানা শাখা-গ্রন্থাগারে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম আয়োজন করা হয় বলে চিয়াংসিং গ্রন্থাগার এক বছরে ৫ হাজারটি অনুষ্ঠান করতে পেরেছে।

কমিউনিটি পর্যায়ে শাখা-গ্রন্থাগারের জন্য বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান দিতে হয় এবং গ্রন্থাগারের আয়তন ৫০০ বর্গমিটারের চেয়ে বেশি হতে হয়। শাখা-গ্রন্থাগারের বই ও ডিজিটাল ডেটা সব চিয়াসিং গ্রন্থাগার সরবরাহ করে।

সম্প্রতি চিয়াং সিং গ্রন্থাগার ইন্টারনেটে খুব জনপ্রিয় হয়। এই গ্রন্থাগার রাজপ্রাসাদ যাদুঘর ও হুয়া ওয়ে কোম্পানির পাশাপাশি চীনের শ্রেষ্ঠ ৫০টি কোম্পানির নামতালিকায় স্থান পায়।

চিয়াং সিং গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৪ সালে। চীনে সবচেয়ে আগে প্রতিষ্ঠিত পাবলিক গ্রন্থাগারগুলোর অন্যতম এটি। ২০০৩ সালে, চিয়াং সিং গ্রন্থাগার নতুন একটি ভবনে স্থানান্তর করা হয় এবং তখন থেকে তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরাতন গ্রন্থাগার পরিচালনা করে আসছে। এ পদ্ধতি থেকে তারা অনুপ্রাণিত হয়। তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শহর, জেলা, ও গ্রাম পর্যায়ে শাখা-গ্রন্থাগার স্থাপনে উদ্যোগী হয়।

আধুনিক গ্রন্থাগারের কেন্দ্রে থাকে মানুষ। চিয়া সিং গ্রন্থাগারের সম্প্রসারণের কাজ চলছে এবং ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক প্রদর্শনে-সেবা দেবে তারা। গ্রন্থাগারের প্রধান সেন হং মেই বলেন, একটি শহরের গ্রন্থাগারের উচিত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করা। তবে তার মৌলিক দায়িত্ব হল জাতির সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। গ্রন্থাগারকে হতে হবে মানুষের সারা জীবনের স্কুল। (শিশির/আলিম/আকাশ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040