গ্রামে প্রথমবার সিপিসি'র সদস্যসম্মেলনের আগে হু শান স্যিন তিন দিন ধরে তার ভাষণ মুখস্থ করেছিলেন। তার মনে তখন অনেক প্রশ্ন: কিভাবে একজন ভাল সম্পাদক হতে পারি? কিভাবে গ্রামবাসীকে ভালোভাবে নেতৃত্ব দিতে পারি? কিভাবে গ্রামবাসীকে দারিদ্র্যমুক্ত করা যাবে? তিনি যত চিন্তা করেন, ততই তার মনে ভয় আরও জেঁকে বসে।
প্রথম সম্মেলনে যদিও ৪০ জন অংশগ্রহণকারীই ছিল তাঁর সুপরিচিত, তবুও তিনি স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন। তিনি প্রথমে তিন মিনিটের মতো সময় কিছুই বলতে পারেননি। পুরাতন সদস্য জেং চাও হুয়া তখন বলে ওঠেন: তুমি কিছু বলবে না? আমাদের মাত্র তিনটি দাবি। প্রথমত, আমরা খাবার চাই; দ্বিতীয়ত, নতুন সড়ক চাই; এবং তৃতীয়ত, বসন্ত উত্সবের সময় মাংস খেতে চাই।
এ কথা শোনার পর হু শান স্যিন আরও উদ্বুদ্ধ হন। তখন উপ-সম্পাদক দাই স্যিউ ছেং বলেন, এটি হলো আমাদের দাবি। আমি বিশ্বাস করি, হু শান স্যিন ভালভাবে তাঁর কাজ করতে পারবেন।
হু শান স্যিন কিছু বললেন না। কিন্তু সবাইকে লক্ষ্য করে তিনি মাথা ঝাকালেন। তখন থেকে হু'র মনে এই তিনটি দাবির কথা গেঁথে যায়।
শুয়াইওয়া গ্রাম দাবিয়েশা পাহাড়ের উত্তর দিকে অবস্থিত। গ্রামের লোকসংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। কৃষিজমির আয়তন খুবই কম। মাটির চেয়ার, মাটির বিছানা, পূর্ব দিকে সূর্য, পশ্চিম দিকে মাটির জানালা। সূর্য ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। এটি হলো শুয়াইওয়া মানুষের মুখের ছড়া। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দরিদ্র জীবন প্রতিফলিত হয়।
হু শান স্যি লেখাপড়ার সময় কষ্ট করেছেন। গ্রামের সম্পাদক হওয়ার পর প্রথম দিকে তাঁর হাতে ছিল মাত্র ৩০ ইউয়ান। বন্ধুদেরকে খাওয়ানোর টাকা ছিল না। ২৮ বছর বয়সী হু শান স্যিন পাহাড়ের মতো শক্তিশালী। কিন্তু এত ভারি দায়িত্ব তাঁর জন্যও অনেক কঠিন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কৃষিজমি পাহাড়ের মাঝখানে বা পাহাড়ে অবস্থিত। যখন বৃষ্টি হয়, তখন কৃষিজমির ক্ষতি হয়। আবহাওয়া অনুযায়ী ফসল বুনতে হয় তাদের। সেজন্য হু'র প্রথম কাজ ছিল জল সেচব্যবস্থা নির্মাণ করা।
শুয়াইওয়া গ্রামের বাসিন্দারা ১০ বছর সময় নিয়ে ৮ হাজার মিটারেরও বেশি লম্বা খাল ও ৩০টি পুকুর নির্মাণ করে।
কিন্তু পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত শুয়াইওয়া গ্রামের কৃষির উন্নয়ন গ্রমবাসীদের মাংসের চাহিদা মেটাতে পারে না। হু শান স্যিন বাসিন্দাদেরকে পাহাড়ি অঞ্চলের অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন গাছ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তখন ৬১ বছর বয়সী জেং গুয়াং ইউন পাহাড়ে চেস্টনাট চাষ শুরু করেন। আট বছর পর তিনি সফলভাবে এক হাজারেরও বেশি চেস্টনাট গাছ চাষ করেন, যা থেকে প্রতিবছর ফসল আসে।
২০ বছরের মধ্যে প্রচুর চেস্টনাট, সবুজ চা, ফির গাছ ও ক্যামেলিয়া চাষ করা হয়। বাসিন্দারা বিভিন্ন গাছ চাষ করার কাঠামোও কয়েক বারের মতো সমন্বয় করে। তখন থেকে গ্রামের প্রতিবছরে বার্ষিক আয় হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ ইউয়ান আএমবি। ২০১৮ সালে শুয়াইওয়া গ্রামের সমষ্টিগত সম্পদ ছিল প্রায় ৭ কোটি ইউয়ানের।
গ্রামবাসীদের খাবার ও মাংসের চাহিদা মেটানোর পর হু শান স্যিন সড়ক নির্মাণ শুরু করেন। আসলে তিনি সম্পাদক হওয়ার পর থেকে সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শুরু করেন। প্রথম সড়কটি ছিল মোট ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। সড়কটি প্রায় ৩০টি পাহাড়কে সংযুক্ত করেছে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শুয়াইওয়ার বাসিন্দারা নিজেদের সম্পদ দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করে।
সড়ক নির্মাণের সময় গ্রামের সকল বাসিন্দা অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু শুয়াই দাও ইয়ান'র স্ত্রী রোগাক্রান্ত ছিলেন এবং তাঁর চারটি সন্তানের বয়স কম। তাঁদের পরিবার খুবই দরিদ্র ছিল। হু শান ইয়ান তাঁদের কাজ কমিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু শুয়াই দাও ইয়ান বলেন, 'আমার পরিবার এত দরিদ্র হওয়ার কারণ হলো গ্রামে সড়ক নেই। আমি সড়ক নির্মাণে অংশ নিতে চাই।' ৩০ বছরে শুয়াইওয়া গ্রামে ৪২ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়েছে।
জল সেচব্যবস্থা, পাহাড়ে গাছ চাষ করা, সেতু ও সড়ক নির্মাণ এবং পর্যটন শিল্প উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলেছে ৩১ বছর ধরে এবং হু শান স্যিন বৃদ্ধ হয়েছেন। তিনি এই ৩১ বছরে গ্রামবাসীদের দাবি পূরণের আশাগুলো তাঁর পূরণ হয়েছে।
বর্তমান গ্রামের সম্মেলনে হু শান স্যিন ভালভাবে ভাষণ দিতে পারেন। তিনি তরুণ ক্যাডারকে দু'টি কথা বলেন: এক. নিজের পরিবারের মতো গ্রাম ব্যবস্থাপনা করতে হবে ও বাসিন্দাদের বিষয়গুলো নিজের বাবা-মা'র বিষয়ের মতো যত্ন নিতে হবে; দুই. একজন দায়িত্বশীল ও যত্নশীল মানুষ হতে হবে।