মহাপ্রাচীরের নিচে বৃক্ষরোপণকারী বৃদ্ধ—লি রুং
  2020-01-18 18:12:03  cri

চীনের হ্যপেই প্রদেশের চাং চিয়া খৌ শহরের সুয়ান হুয়া জেলার ছিং বিয়ান খৌ গ্রামের সবাই লি রুং-এর নাম জানেন। বহু বছর ধরে তিনি স্থানীয় পাহাড়ে বৃক্ষরোপণ করে আসছেন এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন।

পায়ের নিচে নরম উদ্ভিদ, পাহাড়ের গাছ, রাতের তারা, সবই লি রুংয়ের কাছে আপনজনের মতো পরিচিত।

হ্য পেই প্রদেশের সুয়ান হুয়া শহর থেকে ছিং বিয়ান খৌ গ্রামে যেতে, মাঝে মাঝে দেখা যায় নগ্ন হলুদ রংয়ের মাটি, এতে কোনো ঘাস বা গাছের চিহ্ন নেই। তবে গ্রামে প্রবেশের শেষ অংশের সড়কের দুই পাশে দেখা যায় বড় বড় পপলার। গাছগুলো এত বড় ও উঁচু যে, দেখে বোঝা যায় এসব পপলার অনেক বছর আগে থেকেই চাষ করা হয়। আজ আমাদের গল্পের প্রধান চরিত্র লি রুং। তাঁর ভালো বন্ধু, মিস্টার জি জানান, লি রুংয়ের প্রাকৃতিক সুরক্ষা খাতে পুরস্কার পাওয়ার পর এসব গাছ লাগানো হয়। গ্রামের সবাই তাকে সম্মান জানিয়ে একসঙ্গে রোপণ করে এসব পপলার গাছ।

ছিং বিয়ান খৌ গ্রামের নামের একটি শব্দ হলো খৌ। এর অর্থ 'মুখ'। ভৌগোলিক দিক থেকে গ্রামটি সত্যিই 'মুখের' ভূমিকা পালন করে। গ্রামটি উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের উপত্যকায় যাওয়ার মুখে পড়েছে। প্রাচীনকালে চীনের মিং রাজবংশের সময় থেকে গ্রামটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে গ্রামে সারা বছরই প্রচুর বাতাস প্রবাহিত হয়। স্থানীয় লোকজনে মুখে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে; সেটি হলো: 'এক বছরে দুইবার বাতাস হয়, একবার হলে অর্ধেক বছর স্থায়ী হয়'। বসন্ত ও শীতকালে গ্রামে দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তরের বাতাস কখনই থেমে থাকে নি। বাতাসের সঙ্গে আসে বালিঝড় ও শিলাবৃষ্টি।

গত শতাব্দীতে বালিঝড় ও শিলাবৃষ্টি সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। বসন্তকালের বাতাস বালি ও ধুলো উড়িয়ে নিয়ে আসে, গোটা আকাশের রং হলুদাভ হয়ে যায়, দিনের বেলাতেও ঘরে বাতি জ্বালাতে হয়েছিল। জানালার পাল্লায় সবসময় অনেক ধুলো জমে থাকত। মানুষ প্রচণ্ড বাতাসকে ভয় পায়, ফসল ও গবাদি পশুও প্রচণ্ড বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকের জমিচাষও এতে বিঘ্নিত হয়।

পতিত পাহাড়ে বৃক্ষরোপণ করা, শূন্য থেকে সমৃদ্ধ হওয়া

পাহাড়ের মাথায় দাড়িয়ে লি রুং বহু দূর তাকিয়ে থাকেন। সেখান থেকে প্রাচীন মহাপ্রাচীর চোখে পড়ে। সবুজ রঙে চোখ ভরে ওঠে। লাউ হু গৌ নামের জায়গাটা তাঁর প্রিয় স্থান। সেটি হলো তাঁর বৃক্ষরোপণ কাজ শুরু করার স্থান। তিনি ১৯৮৯ সালে সেই জমিত কাজ শুরু করেন। তখন চীনের কৃষকরা নতুন বছরে জমিচাষের জন্য আগের বছর জমির উদ্বৃত্ত ফসল পুড়িয়ে জমি চাষের উপযোগী করত। সে বছরের বসন্তকালে কৃষকরা একইভাবে নতুন বছরের জন্য জমিচাষ শুরু করতে চেয়েছিলেন। তবে প্রচুর বাতাসের কারণে ভয়াবহ আগুন লেগে যায়। পরদিন লি রুং একাই পাহাড়ের উপরে উঠে দেখেন, আগের সমৃদ্ধ ও সবুজ গাছ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! তাঁর খুব খারাপ লাগে, তিনি ভাবতে থাকেন কী করা যায়! লি রুং নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ২৬৭ হেক্টর জমি বর্গা নেন। তিনি নিজেই সেখানে বৃক্ষরোপণ শুরু করেন।

চীনে একটি কথা আছে, যে কোনও কাজের শুরুটা সবচেয়ে কঠিন। বৃক্ষরোপণের শুরুতে লি রুং-এর কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি বিভিন্ন গাছ রোপণ করার চেষ্টা করেছিলেন। আস্তে আস্তে গাছ চাষের অভিজ্ঞতা ও বই পড়ে শেখার মাধ্যমে তিনি গাছ চাষের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। খুবানি গাছ এবং এলম খুব ভালো এবং সহজেই বড় হয়। পপলার শুধুই নিম্ন সমুদ্রপৃষ্ঠের জায়গায় চাষ করতে পারে। উচ্চ সমুদ্রপৃষ্ঠের জায়গায় পাইন গাছ চাষ করা যায়। শুরুতে লি রুং-এর পরিকল্পনা খুব সহজ ছিল। গাছ ভালোভাবে চাষ করে বড় করতে পারলে বিক্রি করে আয় করা যাবে। কিন্তু তিনি কখনওই কল্পনা করতে পারেন নি যে, বাতাস ও বালিঝড়ের পতিত পাহাড়ে বৃক্ষরোপণ করা এবং শুন্য থেকে শুরু করে বড় করা পর্যন্ত কত সময়, কত পরিশ্রম, কত ঘাম ও কত অর্থ খরচ হয়। শুরুটা খুব কঠিন ছিল। এ কাজে কঠোর দশটি বছর কাটিয়েছেন তিনি।

বৃক্ষরোপণের শুরুতে, গ্রামের কৃষকেরা গাছ রক্ষায় সচেতন ছিল না। একবার লি রুং অনেক কষ্ট করে কিছু চারাগাছ লাগালেন। তবে, মেষপাল এসে সব চারাগাছ নষ্ট করে দেয়। লি রুং তা দেখে মনে ভীষণ কষ্ট পান ও কাঁদতে থাকেন। তবে মেষপালক ছিলেন কয়েকজন বৃদ্ধ, তাদের জীবনও ছিল কষ্টকর। তাই লি রুং তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন নি। অন্যদিকে, গ্রামের মেষপালকরা তখন গাছপালা নষ্ট হওয়ার কথা জানতে পারেন। ধীরে ধীরে গ্রামের সবাই প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশেষ করে গাছপালা রক্ষায় সচেতন হয়ে ওঠে।

আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায়। যখন প্রচণ্ড বাতাস ওঠে ও বৃষ্টি পড়ে, অন্যরা তাড়াতাড়ি বাসার দিকে দৌড়ায়। তবে, লি রুং এর উল্টোটা করেন। তাঁর মনে শুধু নতুন রোপণ করা চারাগাছ! প্রচুর বাতাসে, ভীষণ বৃষ্টিতে লি রুং সবসময় পাহাড়ের দিকে দৌড়ান, তাঁর চারাগাছগুলোকে রক্ষা করার জন্য। একবার পাহাড়ে চারাগাছের যত্ন নেওয়ার সময় হঠাত্ প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। চারাগাছ রক্ষা করতে গিয়ে শিলাবৃষ্টির আঘাতে লি রুং অচেতন হয়ে পড়েন। পরে জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখতে পান, মাথা ও মুখ একেবারে রক্তাক্ত!

শীতকাল ও বসন্তকালের পালা পরিবর্তনের সময় লি রুং বনভূমির অগ্নিকাণ্ডে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বৃক্ষরোপণ করতে গিয়ে লি রুং-এর সঞ্চিত সব অর্থ শেষ হয়ে যায় এবং এ কারণে অনেক ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন তিনি। তবে অনেক কষ্ট হলেও বড় হওয়া চারাগাছ দেখে লি রুং-এর মনে আনন্দ এসে জড়ো হয়। একবার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। তিনি মেয়ের স্কুলের লেখাপড়ার ফিও দিতে পারছিলেন না। তখন তিনি কয়েকটি গাছ বিক্রি করার কথা চিন্তা করেছিলেন, তবে পাহাড়ে গিয়ে গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আর গাছ কাটতে পারলেন না তিনি।

লি রুং বলেন, যারা গাছ লাগায় এবং যারা গাছ লাগায় না; তারাই ভিন্ন মানুষ। যখন লি রুং এ-কথা বলেন, তখন তাঁর চাষ করা বনভূমির আয়তন ২৬৭ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।

গাছগুলো বনভূমি তৈরি করে, বাতাস ঠেকিয়ে ভালোবাসা তুলে ধরে

১৯৯৯ সালে চীনের মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইয়াং ছুয়ান মহাপ্রাচীর পরিদর্শন গ্রুপের দায়িত্ব পালনের সময় ছিং বিয়ান খৌ গ্রাম পার হচ্ছিলেন। তিনি পাহাড়ে বৃক্ষরোপণকারী লি রুংকে দেখেন এবং জানতে পারেন যে, পতিত পাহাড়ে এই অসাধারণ সবুজ দৃশ্যের কারণ হলো, চোখের সামনে এই সাধারণ কৃষকের দশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। তখন থেকেই মূলত লি রুং-এর গল্প সবাই জানতে পারে। লি রুং প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় পুরস্কার পান এবং প্রাপ্ত অর্থ তাঁর পরিবারের আর্থিক সমস্যার সমাধান করে। পরিবেশ রক্ষাকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সবসময় তাঁর বাসায় যাতায়াত করেন। নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হয়ে লি রুং-এর মন খুব উষ্ণ হয়ে ওঠে।

'যারা পরিবেশ রক্ষার কাজ করেন, তাদের মন অনেক ভালো'। লি রুং-এর গল্প জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক পর্যটক তাঁর এলাকায় ভ্রমণ করতে যান। সেই সঙ্গে নতুন সমস্যাও সৃষ্টি হয়। আগে পাহাড়াঞ্চল ছিল খুব পরিষ্কার, তবে এখন প্লাস্টিকের বোতলের মতো আবর্জনা দেখা যায়। পর্যটক চলে গেলে লি রুংকে সেই আবর্জনা পরিষ্কার করতে হয়!

এখন পতিত পাহাড় উজ্জ্বল সবুজ হয়েছে। বাতাস ও বালিঝড়ের পরিমাণ কমেছে। পাহাড়ের নিজস্ব আবহাওয়া-ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। নিচের অংশের চেয়ে পাহাড়ে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। বিভিন্ন জীবজন্তুর আনাগোনাও দেখা যায়। গাছ লাগানোর জন্য লি রুংকে সবসময় একাকী পাহাড়ে থাকতে হয়। একাকী জীবন যদিও খুব কঠিন, কিন্তু এতে আনন্দও আছে। কঠিন সময়ে লি রুং পাহাড়ে বসে বই পড়েন। বসন্তকালে বিভিন্ন বুনো শাকপাতা তুলে রান্না করে খান।

পায়ের নিচে নরম ঘাস, পাহাড়ের গাছ, রাতের তারা, সবই লি রুংয়ের কাছে পরিচিত ছবি। এই জমি বছরের পর বছর ধরে লি রুংয়ের যত্ন পেয়েছে। এ জীবন লি রুং-এর প্রতিদিনের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে, এমন জীবন লি রুং-এর মনে শান্তি দেয়। পাহাড়ের জমিতে লি রুং বিভিন্ন ফসল চাষের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেখতে চান, কোন ধরনের ফসল এখানে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। প্রতি বছরের বসন্তকালে পাহাড়ের বনে গোলাপ ফুল ফুটে, এমন প্রাণবন্ত দৃশ্য তাকে ভীষণ খুশি করে। লি রুং বলেন, 'এমন দৃশ্য খুবই সুন্দর!'

দারিদ্র্যবিমোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্থানীয় কর্মকর্তা হুয়াং জিং চিয়াও

হুয়াং জিং চিয়াও চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তু আন জেলার লা লিয়ে থানার তি পিং গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাত ৮টায় তিনি এবং অন্য ৫জন সহকর্মী স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের বাসা থেকে অফিসে ফিরছিলেন। এসময় তাঁদের গাড়ি পাহাড় থেকে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় হুয়াং জিং চিয়াও মারা যান। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তাঁর দারিদ্র্যবিমোচনের গল্প আপনাদের জানাবো।

হুয়াং জিং চিয়াও-এর কাজ করা তু আন জেলাটি হল কুয়াংসি'র চারটি চরম দরিদ্র জেলার অন্যতম। পাথুরে পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত তু আন জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব খারাপ। আর লা লিয়ে থানার তি পিং গ্রামটি হলো গভীর পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত চরম দরিদ্র একটি গ্রাম। সেখানকার অবস্থা আরও খারাপ। তি পিং গ্রামে যাওয়ার ছোট পথটি চওড়ায় মাত্র ৬ মিটার, সবচেয়ে সরু জায়গাটি মাত্র ৩ মিটার প্রশস্ত। পথের এক পাশে পাথুরে পাহাড়, অন্য পাশে ২শ' মিটার খাড়া উঁচু পাহাড়। হুয়াং জিং চিয়াও-এর গাড়ি ঠিক এই পথ থেকেই পাহাড়ের নিচে পড়ে যায়।

এই দুর্ঘটনা ঘটার আগে, হুয়াং জিং চিয়াও স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে একটি দরিদ্র পরিবারের বিপজ্জনক বাড়িঘর মেরামতের কাজ করছিলেন। ভালোভাবে তাদের বাড়িঘর মেরামতের জন্য হুয়াং জিং চিয়াও নিজেই নির্মাণের কাজটি করেন। তবে, কেউ কল্পনা করতে পারেন নি যে, এটিই তার শেষ কাজ; এরপর আর তিনি ফিরে আসবেন না!

এই দরিদ্র পরিবারের পুরুষ ব্যক্তির নাম লু জিই বো। তার বসতবাড়িটিতে মেরামতের দাগ দেখা যাচ্ছে। ঘরের ভিতরে বাতি, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্র, সব কিছুই নতুন কেনা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে হুয়াং জিং চিয়াও অনেকবার লু জিই বোকে নিরাপদ বাড়িঘরে স্থানান্তর অথবা পুনরায় বাড়ি নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তবে, ষাটোর্ধ লু জিই বো মনে করেন, তার বাড়িঘর অনেক পুরানো হলেও তাতে বাস করা যায়। এভাবে তিনটি বছর পার হয়ে যায়। তি পিং গ্রামের সব কৃষক সরকারের তৈরি করা নতুন বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়েছেন অথবা পুনরায় নিজেদের পুরানো বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন, শুধুই লু জিই বো'র পরিবারটিই বাকি ছিল।

গত ২৪ ডিসেম্বর, হুয়াং জিং চিয়াও আবারও লু জিই বো'র বাসায় যান ও তাকে বাড়িঘর মেরামতের প্রস্তাব দেন। তিনি লু জিই বো'র কাছে দেশের দারিদ্র্যবিমোচন নীতির কথা তুলে ধরেন, সবার যত্নের কথা তুলে ধরেন, আত্মীয়স্বজনের উদ্বেগের কথা জানান। লু জিই বো অবশেষে বাড়িঘর মেরামতে রাজি হন। পরদিন অনেক ভোরে হুয়াং জিং চিয়াও সহকর্মীদের নিয়ে লু জিই বো'র বাসায় যান এবং দু'দিন ধরে দিন-রাত পরিশ্রম করে তার বসতবাড়ি মেরামত করেন।

হুয়াং জিং চিয়াও-এর মৃত্যুর খবর শুনে তি পিং গ্রামের শতাধিক কৃষক স্বেচ্ছায় তার বাসায় গিয়ে শোক প্রকাশ করেন।

দরিদ্র মানুষ লু হাই লিন হলেন গ্রামের গরু খামারের কর্মী। হুয়াং জিং চিয়াওকে আর দেখতে পাবেন না; এটা ভেবে লু হাই লিন কাঁদতে থাকেন। তিনি বলেন, 'কয়েক দিন আগে হুয়াং জিং চিয়াও আমার গরু খামারে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন, আমাকে ভালোভাবে কাজ করার উত্সাহ দিয়েছেন, আর মাত্র চার মাস পর এসব গরু বাজারে বিক্রি করা যাবে, তখন আমাদের গ্রাম পুরোপুরিভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারবে, তবে আমাদের প্রিয় জনাব হুয়া এ অবস্থা দেখার জন্য থাকতে পারলেন না।'

তি পিং গ্রামের অন্য আরেক কৃষক ওয়েই আন লুন বলেন, 'যখন জনাব হুয়াং আমাদের গ্রামে আসতেন, তখন আমার বাসায় এক মাস থাকতেন। শুরুর দিকে একটি বিছানাও ছিল না; তিনি মাটিতেই শুয়ে থাকতেন। এমন খারাপ অবস্থার পরও তিনি প্রতিদিন মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতেন'।

আরও ভালো ও সুবিধাজনকভাবে কাজ করার জন্য হুয়াং জিং চিয়াও সবসময় গ্রামের অফিসের প্রথম তলার হোস্টেলে উঠতেন। দ্বিতীয় তলা ছিল তাঁর অফিস। তিনি সেই অফিসকে বাসা মনে করতেন।

ডিসেম্বর মাসে হুয়াং জিং চিয়াও-এর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাধার রোগ সনাক্ত করা হয়। তবে, তিনি কাউকে সে খবর জানান নি। তিনি মনে করেন, এখন হলো দারিদ্র বিমোচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, এমন সময় বিশ্রাম নেওয়া যায় না। তাই তিনি শুধু গোপনে ওষুধ সেবন করতে থাকেন।

হুয়াং জিং চিয়াও দীর্ঘসময় ধরে নিজের বাসা ছেড়ে গ্রামে থাকতে শুরু করেন। তাঁর পরিবার শুরুতে বুঝতে পারে নি। তবে, তাঁর পরিশ্রমের কাজ সম্পর্কে জানার পর স্ত্রী সি ছাই থিয়ান যথাসাধ্য হুয়াং জিং চিয়াও-এর কাজে সমর্থন দিতেন। স্ত্রী সি ছাই থিয়ান নিজের একটি বাড়ি বিক্রি করেন এবং সেই টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনেন, যাতে স্বামী হুয়াং জিং চিয়াওয়ের গ্রামে যাতায়াতে সুবিধা হয়।

স্বামীর কথা স্মরণ করে স্ত্রী সি ছাই থিয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি একবারও তাঁর কাজের গ্রামটিতে যাই নি। একবার থানায় গিয়েছি, তবে সে আমাকে গ্রামে নিয়ে যায়নি। সে বলেছিল, আগামী বছর দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের পর আমি তোমাকে নিয়ে গ্রামে ঘুরে বেড়াবো'।

হুয়াং জিং চিয়াওয়ের মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা সরকারের পক্ষ থেকে হুয়াং জিং চিয়াও-এর বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানান এবং পেনশনের কিছু অর্থ দেন। তবে সি ছাই থিয়ান তা গ্রহণ করেন নি। তিনি বলেন, 'হুয়াং জিং চিয়াও-এর কাজ করা গ্রামটিতে এই পেনশনের অর্থ দিয়ে দিন। স্থানীয় লোকজনের জীবন অনেক কষ্টের; এসব টাকা তাদের জন্য দরকার।'

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040