'আমার গৌরবময় দেশ, আমার প্রিয় দেশ,
আমি তোমাকে কী শুভেচ্ছা জানাবো, প্রিয় রোমানিয়া?
আমি তোমার শক্ত হাত ও শক্ত বাহু প্রত্যাশা করি,
গৌরবময় অতীতের উত্তরাধিকারী ও দুর্দান্ত ভবিষ্যত কামনা করি!
আপনার গর্বিত বাচ্চাদের যদি এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকে,
আমরা এক সঙ্গে উদযাপন করি,
এটি আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা, সুন্দর রোমানিয়া।"
এই চমত্কার কবিতাটি বেইজিং ইলেভেন স্কুল লাইব্রেরির প্রশস্ত বক্তৃতা হলে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। মঞ্চে বারো বা তেরো বছর বয়সী চারটি শিশু অভিনেতা কবিতায় তুলে ধরা দেশপ্রেমের গল্প বলছিল। মঞ্চের সামনে বসে প্রথম শ্রেণির ৬০০জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আবৃত্তি শুনছিলেন। এটি স্কুলের দ্বাদশ রোমানিয়ান সংস্কৃতি দিবসের মঞ্চ। শিশু অভিনেতারা রোমানিয়ার জাতীয় কবি মিহাই এমিনিস্কু রচিত 'আমি তোমাকে কী শুভেচ্ছা জানাবো, প্রিয় রোমানিয়া' পড়ে শোনায়।
একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় একই দেশের সংস্কৃতি নিয়ে টানা ১১ বছর ধরে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার মূল শক্তি কী? কার্যকলাপটি বাচ্চাদের ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল?
এই প্রশ্নগুলি মাথায় রেখে, চায়না মিডিয়া গ্রুপের রোমানিয়ান ভাষা বিভাগের সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে এই ইভেন্টে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাক্ষাত্কার নেন। এই ইভেন্টের দায়িত্বে থাকা সুন সু জিয়াও বলেন, 'রোমানিয়ান সাংস্কৃতিক দিবস' বেইজিং একাদশ বিদ্যালয়ের 'বিদেশি সাংস্কৃতিক দিবস' কোর্স এবং প্রথম পর্যায়ের 'বিদেশি সাংস্কৃতিক দিবসের' অবিচ্ছেদ্য অংশ।
২০০৮ সালে, বেইজিং একাদশ বিদ্যালয়ের সাবেক চ্যান্সেলার লি সিগুই এবং তত্কালীন চীনে নিযুক্ত রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত জনাব ভাইওরেল ইস্তিচোয়ায় প্রতি বছরের ১৫ জানুয়ারি, অর্থাত্ রোমানিয়ান কবি মিহাই এমিনিস্কুর জন্মদিনে, বেইজিং একাদশ বিদ্যালয়ের 'রোমানিয়ান সংস্কৃতি দিবস' হিসাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম 'রোমানিয়ান সংস্কৃতি দিবস' সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অব্যাহত বিকাশ ও উদ্ভাবনের পর এখন বেইজিং একাদশ বিদ্যালয়ে মধ্য ইউরোপীয়, ওশেনিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়, পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকার ৮০টিরও বেশি 'বিদেশি সংস্কৃতি দিবস' কোর্স করেছে। 'বিদেশি সংস্কৃতি দিবস' আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের একটি অংশে পরিণত হয়েছে।
লিয়াও জিয়ে উয়ান সেই চার শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন যারা কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নিয়েছিলে "আমি তোমাকে কী শুভেচ্ছা জানাবো, প্রিয় রোমানিয়া"।
সে সাংবাদিকদের জানায়, তারা সবাই স্কুলের প্রথম গ্রেডের শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা তাদের। শিক্ষক শুধু প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে মনে করে, তাদের আবৃত্তি করা কবিতাটি খুব সুন্দর। কবিতায় রোমানিয়া সম্পর্কে লেখকের গভীর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। সে বলে, অনুষ্ঠান তৈরির সময় তারা অনেক কিছু শিখেছিল; এটি প্রস্তুত করতে তাদের অনেক সময় লেগেছে। সবসময় তারা এক সঙ্গে আলোচনা ও চর্চা করেছিল।
সে বলে, 'প্রস্তুতির সময় আমরা এই কবিতাটি খুঁজে পাই এবং এর সাথে সম্পর্কিত গানগুলো খুঁজে বের করেছি। সবগুলোই রোমানীয় সংগীত। আমরাও দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান করেছি এবং অবশেষে এই দেশাত্মবোধক কবিতা ও কিছু সুন্দর গান বের করেছি। আমি ভবিষ্যতের কর্মকাণ্ডে অংশ নেবো। আমি মনে করি, এটি অনেক সুন্দর। আমি অনেক বন্ধু তৈরি করেছি। আমি অন্য কয়েকটি দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কেও শিখেছি এবং এটি আমার নিজস্ব একটি পরিকল্পনা।'
'লুকিং ইন দ্য মিরর' একটি প্রফুল্ল, মজাদার ও সুন্দর রোমানিয়ান লোকসংগীত; যা চীনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গানে একটি মেয়েকে তার সুন্দর মুখ ও তার সুন্দর যৌবনের প্রশংসা করা হয়। এতে লোকেরা সুখ ও ভালোবাসা অনুভব করতে পারে। পান চুংইয়েই ও তার পাঁচ সহপাঠী এই লোকসংগীত পরিবেশন করেন। সে সাংবাদিকদের জানায়, লোকগানটি সত্যিই সুন্দর। এই গানের কথাগুলো সুন্দর ও বুদ্ধিদীপ্ত। গানের মধ্যে মেয়েরা আয়নায় তাদের সুন্দর মুখ দেখে। আমি মনে করি, এটি এখনও আমাদের বয়সের সাথে খাপ খায় এবং এর সুর ও স্টাইলে রোমানিয়ান সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে। আমি বিদেশি ভাষায় কিছু গান গেয়েছি, তবে 'লুকিং ইন দ্য মিরর'-এর মতো বিদেশি লোকগান এই প্রথম পেয়েছি।
রোমানিয়ান ফোক মিউজিক 'স্কাইলার্ক' এর সুর উচ্ছল ও প্রফুল্ল, বনের মধ্যে দিয়ে আকাশ দেখা যায়, সূর্যের উজ্জ্বল আলো দেখা যায়। পরে এটি বিখ্যাত রোমানিয়ান বেহালা, সুরকার গ্রিগোরাশ দিনিকুর মাধ্যমে দারুণ একটি কর্মে রূপান্তরিত হয়। বহু বছর ধরে বেহালা বিষয়ে পড়াশুনা করা লিউ ইয়ানটং সুন শাওজেংয়ের পিয়ানো সহযোগীর সঙ্গে এই 'স্কাইলার্ক' পরিবেশন করেছিলেন।
এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আর একটি অংশ ছিল রোমানিয়া সম্পর্কিত 'জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতা'। হোস্ট বিষয়টি বলার পর অনেক শিক্ষার্থী ডান হাত উঁচু করে এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে ছুটে যায়। সঠিক উত্তরদাতার সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
এবারের 'রোমানিয়ান সংস্কৃতি দিবসের' প্রতিপাদ্য হলো: 'কার্পাথিয়ান পর্বতমালার নিচে সাদা গোলাপ'। এটি চলতি বছর চীন ও রোমানিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭০তম বার্ষিকীর সঙ্গেও মিলে যায়। এই ইভেন্টটি শিশু-হৃদয়ে চীন ও রোমানিয়ার বন্ধুত্বের বীজ বপন করার মতো। হয়তো আগামীতে কোন এক দিন তারা সুন্দর ফুল হয়ে ফুটবে, সৌরভ ছড়াবে!