আকাশ: বন্ধুরা, সম্প্রতি চীনের জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের কোচ পরিবর্তন হয়েছে। নতুন কোচের নাম হচ্ছে লি ছিয়ে।
আলিম: নতুন কোচ লি ছিয়ে বলেন: "যদি চীনা ফুটবল এসোসিয়েশান আমাকে একদিনের জন্যও নিয়োগ দেয়, তবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিতে চেষ্টা করব।' তিনি চীনের ইতিহাসে পুরুষ ফুটবল দলের সবচেয়ে কম বয়সী কোচ।
গত ৫ জানুয়ারি সকালে, ৪২ বছর বয়সী লি ছিয়ে বেইজিংয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন:
আকাশ: "আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে, চীনা জাতীয় দলের হয়ে আমি খেলেছি। সে অভিজ্ঞতা আমার কাছে অমূল্য। তখন আমি অনেক শিখেছি। আমাদের বিগত কয়েক প্রজম্মের ফুটবলার ও সংশ্লিষ্ট সকলের একটাই স্বপ্ন: চীনা পুরুষ ফুটবল দলকে আবার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে যাওয়া।"
আলিম: তিনি জানান, জাতীয় দলের কোচ হওয়া এবং জাতীয় দলকে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে যাওয়া যে-কোনো ফুটবল কোচের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। তিনি বলেন,
আকাশ: "৩৫ বছর আগে আমি ছিলাম শিশু। ফুটবল খেলতে একদম পারতাম না। এখন আমি চীনের জাতীয় দলের কোচে পরিণত হয়েছি। অবশেষে আমি আমার বাচ্চাকে বলতে পারব, বাবা জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। আমি এবং আমার টিম একসাথে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী দল সৃষ্টি করার চেষ্টা করব।"
আলিম: ২০০২ সালের বিশ্বকাপের পর বিগত ১৮ বছরে চীনের পুরুষ ফুটবল দল ৭ জন বিদেশি কোচ পেয়েছে। এবার লি ছিয়ে কোচের দায়িত্ব গ্রহণের পর, তার প্রথম মিশন হচ্ছে জাতীয় দলকে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন,
আকাশ: "আমার ধারণা, আমার পূর্ব-অভিজ্ঞতার কারণেই চীনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশান আমাকে কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছে। আমার আগের সকল কোচের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। মার্সেলো লিপ্পোর সহকারী হিসেবে কাজ করার সময় আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি যে, তিনি জয়ী হতে চান। আমি কখনওই ভুলব না ২০০১ সালের ৭ অক্টোবরের সন্ধ্যার কথা। তখন চীনের দল প্রথম বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। আমি খেলোয়াড় হিসেবে দলের সবকটি খেলায় অংশ নিয়েছি। এখন জাতীয় দলের কোচ হিসেবে আমি আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আবার চীনা ফুটবলকে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।"
আলিম: লি ছিয়ে ১৯৯৩ সালে চিয়ান লি পাও তরুণ ফুটবল দলে স্থান পান। এরপর কোচ চু কুয়াং হুর নেতৃত্বে ব্রাজিলে গিয়ে ফুটবল শেখেন। ১৯৯৭ সালে দেশে ফিরে জাতীয় দলে সুযোগ পান। এরপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বরাবরই দলের একজন শীর্ষ খেলোয়াগ ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেন। পরে তিনি কোচ হিসেবে সার্টিফেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি আরও বলেন,
আকাশ: "আমি তাদেরকেই দলে ঠাঁই দিব, যারা জাতীয় দলের জন্য প্রাণ উজাড় করে খেলতে ইচ্ছুক। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের সেবা করাই হতে হবে তাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমি এমন খেলোয়াড় চাই যারা দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তত।"
আলিম: লি ছিয়ে ইতোমধ্যেই কুয়াং চৌ পৌঁছেছেন। সেখানে জাতীয় দল নিয়ে তিনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। এবারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে ৫ থেকে ২৩ জানুয়ারী পর্যন্ত। আরেকটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
আকাশ: "সত্যিই আমি অনেক খুশি। আমি গর্বিত বোধ করছি। বাসায় আমি আমার মেয়েকে বললাম, জীবনের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। জাতীয় দলের কোচ হওয়ার স্বপ্ন আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে শক্তিশালী জাতীয় দল গড়ে তোলা। এ দল হবে ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল। মাঠে এ দল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে জেতার জন্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সবাই জাতীয় দলের উন্নতি আশা করে; জাতীয় দলের কাছ থেকে ভালো ফলাফল আশা করে। আমি কোচ বোরা মিলুতিনোভিচের কাছে শিখেছি যে, দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে সবকিছু। বছরের পর বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমিও বুঝতে পেরেছি যে, যদি সাফল্য পেতে চাই, সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমার মনে হয়, প্রথমত, দৃষ্টিভঙ্গি ভালো হতে হবে এবং প্রতিদিনের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। আমি মনে করি, আমার সুবিধা হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা। ছোটবেলা খেকে আমি ফুটবল খেলতে ও প্রশিক্ষণ নিতে শরু করি। তারপর ব্রাজিলে গিয়েছি ফুটবল শেখার জন্য। সেবারই প্রথম চীনের একটি গোটা দল ব্রাজিলে যায় ফুটবল শিখতে। আমি অনেক ভাগ্যবান যে, বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে তিনটি ম্যাচ খেলেছি। তারপর আমি ব্রিটেনের প্রেমিয়ার লিগ খেলেছি। আমি এবং সু চি হাই একসাথে ওখানে খেলেছি। কোনো চীনা খেলোয়াড়ের সেটাই ছিল প্রথম ব্রিটিশ প্রেমিয়ার লিগে খেলা। তারপর আমি কোচ হয়েছি। আমি আশা করি, জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের দেশের প্রতি সম্মান ও কর্তব্যবোধ থাকবে। তাদেরকে স্বার্থপর হলে চলবে না। দেশের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিতে হবে। যদি নিজের জন্য কেউ খেলে, তবে আমার দলে তার ঠাঁই হবে না। সব খেলোয়াড়ের লিগ ম্যাচ ও প্রশিক্ষণের পারফরমেন্স আমি পর্যবেক্ষণ করব; প্রতিটি ক্লাবের কোচ ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাপ করব, তাদের সম্পর্কে তথ্য নেব। জাতীয় দলের দরজা সবার জন্যই খোলা থাকবে। বয়স কোনো সমস্যা না। যোগ্য যে-কেউ দলে ঠাঁই পাবেন। জানুয়ারির প্রশিক্ষণ আসলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের আইডিয়া খোলোয়াড়দের জানাবো। সব খেলোয়াড়কে দেশের জন্য ফুটবল খেলার এ সুযোগকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেই হবে। তাদেরকে প্রতিটি খেলাকে জীবনের শেষ খেলা হিসেবে নিতে হবে।
আলিম : তিনি আরো বলেন,
আকাশ:আমি সবসময় পরিকল্পনা করে চলি। কখন কী করতে হবে, তা নিজের কাছে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করি। পাশাপাশি আমি চ্যালেঞ্জ পছন্দ করি। ২০১২ সালে আমি লিয়াও নিঙ প্রদেশে অনেক ভাল জীবন কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি সেই আরামের জীবন ত্যাগ করে কোচের জীবন বেছে নিই। কয়েক বছর আমি হেং তা ফুটবল ক্লাবে কাজ করেছি। সেখানে আমার জীবন আরামের ছিল। কিন্তু আমি হেং তা ছেড়ে হুয়া শিয়া ক্লাবে যোগ দিই। ওখানে ২ বছরের প্রচেষ্টায় হুয়া শিয়া অনেক উন্নতি করে। এজন্য আমি বলি আমি চ্যালেঞ্জ খুবই পছন্দ করি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার একটি স্বপ্ন ছিল। তা হচ্ছে দেশের জাতীয় দলের কোচ হওয়া। ছোটবেলা থেকে কোচ মিস্টার চিয়াংয়ের পরামর্শে আমি প্রশিক্ষণ-ডায়েরি লেখা শুরু করি। ব্রাজিলেও আমি প্রতিদিন প্রশিক্ষণ-ডায়েরি লিখতাম। খেলোয়াড় হিসেবেই আমি জানতাম যে ভবিষ্যতে আমি কোচ হবো।
আকাশ: বড় ভাই, আসলে প্রত্যেক চীনা ফুটবল ভক্ত চীনা জাতীয় ফুটবল দল এবং নতুন কোচ লি ছেইয়ের কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা করেন। ফুটবল উন্নয়নে ভালো কোচ, তরুণ ফুটবলার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, ফুটবলের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন। যেমন ধরুন, ২০০০ সাল থেকে আইসল্যান্ড সরকার অনেক ফুটবল মাঠ বা স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে শরু করে। ২০১৬ সালের তখ্য অনুসারে, সেদেশে মোট ১৭৯টি ভালো মানের ফুটবল মাঠ ও ১২৮টি ছোট আকারের ফুটবল মাঠ রয়েছে। তা ছাড়া এ সব ফুটবল সুবিধা সব নাগরিকের জন্য ফ্রি। যে-কোন ব্যাক্তি এ সুবিধা ভোগ করতে পারে। বড় ভাই, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? কী কী পদক্ষেপ নিলে ফুটবলে উন্নতি করা যাবে?