১. চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদে 'চীনের গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতন' সুনিশ্চিত করার নিয়ম-বিধি গৃহীত হয়েছে। নিয়ম-বিধিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, সময়মতো গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। এর অন্যথা হলে আইনানুসারে শাস্তি পেতে হবে। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় পরিষদের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই নিয়ম-বিধি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়।
ব্রিফিংয়ে চীনের জনসম্পদ ও সামাজিক সুনিশ্চয়তা বিভাগের উপ-প্রধান চাং ই ছুয়ান বলেন, গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতন হচ্ছে তাদের মৌলিক স্বার্থ। আর বেতন পরিশোধ-ব্যবস্থা হচ্ছে শ্রমিক আইন ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নিয়ম-বিধি গ্রামীণ শ্রমিকদের বেতনপ্রাপ্তি সুনিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
২. গেল বছর চীনের 'বরফ-তুষার পর্যটন' খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩৮,০০০ কোটি ইউয়ানের বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি চীনা পর্যটন গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে প্রকাশিত 'চীনে বরফ-তুষার পর্যটন উন্নয়ন রিপোর্ট, ২০২০' থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালে চীনে 'বরফ-তুষার পর্যটকের' সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ৪০ লাখ পার্সন টাইমস। ২০২২ সালে চীনে শীতকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনের সময় 'বরফ-তুষার পর্যটকের' সংখ্যা ৩৪ কোটি পার্সন টাইমসে পৌঁছাবে এবং এ খাতে আয় ৬৮,০০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
৩. বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে চীনা মুদ্রা আরএমবি'র কদর বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আরএমবি'র অনুপাত ১.৯৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২.০১ শতাংশে দাঁড়ায়। চীনা জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রা প্রশাসন ব্যুরোর মুখপাত্র ওয়াং ছুন ইং সম্প্রতি বেইজিংয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
আইএমএফের পরিসংখ্যান অনুসারে, বিভিন্ন দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে মার্কিন ডলারের অনুপাত ২০১৪ সালের ৬৫.১৭ থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৬১.৭৮ শতাংশে নেমে আসে। তবে মার্কিন ডলার এখনও বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা।
৪. ২০২০ সালে চীনের জাতীয় ডাক বিভাগ বিদেশে এর পরিষেবা উন্নত করবে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়াতেও উত্সাহ দেবে এই বিভাগ। আন্তঃদেশীয় পণ্য পরিবহনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ জোরদার করা হবে। চীনের জাতীয় ডাক বিভাগ সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
চীনা জাতীয় ডাক বিভাগের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালে চীনে ডাক-শিল্পের মোট ব্যবসার পরিমাণ ও আয় ছিল যথাক্রমে ১.৬ ট্রিলিয়ন ও ৯.৬ কোটি ইউয়ান আরএমবি, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ৩০ ও ২১ শতাংশ বেশি।
পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনের ডাকশিল্প ২ লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
৫. গেল বছর চীনে বিদেশি পর্যটক এসেছেন ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার। সম্প্রতি প্রকাশিত চীনের জাতীয় অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালে চীন থেকে বিদেশে গেছেন ও বিদেশ থেকে চীনে এসেছেন মোট ৬৭ কোটি মানুষ, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৩.৮ শতাংশ বেশি। এই আসা-যাওয়ায় ব্যবহৃত হয়েছে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৩.৪ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া, সারা বছর ধরে চীনের মূল ভূভাগ থেকে বিদেশে গেছেন ও বিদেশ থেকে মূল ভূভাগে এসেছেন মোট ৩৫ কোটি মানুষ। হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান থেকে মূল ভূভাগে আসা-যাওয়া করা মানুষের সংখ্যা যথাক্রমে ১৬ কোটি, ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮৭ হাজার, এবং ১ কোটি ২২ লাখ ৭৮ হাজার।
এদিকে, ২০১৯ সালে বেইজিং ও শাংহাইসহ ১৮টি স্থলবন্দরে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট ৮৯টি বিশেষ চ্যানেল খোলে কর্তৃপক্ষ। এতে পর্যটকদের আশা-যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়।
৬. চীনে ২০১৯ সালে সংস্কৃতি ও পর্যটনের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীনা আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরোসমূহের মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এ সম্মেলন আয়োজিত হয়।
সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর চীন সরকার ৩.৫৭১ কোটি ইউয়ান ব্যয় করেছে ২৬৩টি অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংস্কারের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে। এ ছাড়া, গ্রামীণ পর্যটনের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন এবং অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংস্কারের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। মোট ৬ হাজার জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
৭. ২০১৯ সালে চীনের সিনচিয়াংয়ে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। গত বুধবার সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দুই অধিবেশন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অধিবেশনে জানানো হয়, ২০১৯ সালে সিনচিয়াংয়ের ৬ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়। ৯৭৬টি দরিদ্র গ্রাম ও ১২টি দরিদ্র জেলাও সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়। সিনচিয়াংয়ে এখন হতদরিদ্রের সংখ্যা ৬.১ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ১.২ শতাংশে।
অধিবেশনে আরও জানানো হয়, বিগত এক বছরে সিনচিয়াংয়ের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে ৩৭৫৭ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ দেয় চীনের কেন্দ্রীয় সরকার।
অধিবেশনে বলা হয়, ২০১০ সালে সিনচিয়াংয়ের বাকি ১ লাখ ৬৫ হাজার হতদরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।
৮. ২০১৯ সালে তিব্বত ভ্রমণকারী দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৪ কোটিরও বেশি। সে-বছর পর্যটন খাত থেকে আয় হয়েছে ৫৬০০ কোটি ইউয়ান। ৪ লাখ কৃষক ও পশুপালক তিব্বতের পর্যটনশিল্পে অংশ নিয়েছেন। তিব্বতের পর্যটনশিল্প দারিদ্র্যবিমোচনে সহায়তা করেছে। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একাদশ গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, তিব্বতের সাংস্কৃতিক পর্যটন শিল্প ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে। এ শিল্প স্থানীয় কৃষক ও পশুপালকদের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিব্বতে শীতকালে পর্যটকদের আকর্ষণের ব্যবস্থা কর হয়।
৮. ২০১৯ সালে চীনের ১৯টি প্রদেশ ও শহর সিনচিয়াংয়ের ১৯৩৫টি প্রকল্পে মোট ১৮৮২ কোটি ইউয়ান সাহায্য দিয়েছে। এ সাহায্য সিনচিয়াংয়ের দারিদ্র্যবিমোচন, জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গত মঙ্গলবার সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এনপিসি ও সিসিপিসিসি'র প্রতিনিধি সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সিনচিয়াংয়ের সরকারি কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ২০১৯ সালে সিনচিয়াংয়ের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এ বছর চীনের বিভিন্ন প্রদশের ৮২০টি থানা ও গ্রাম সিনচিয়াংয়ের স্থানীয় থানা ও গ্রামগুলোর সঙ্গে সহায়তার সম্পর্ক গড়ে তোলে।
৯. ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, সিনচিয়াং বন্দর দিয়ে ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল ১৯৭১৯ কোটি ইউয়ান, যা ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় ৬.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রফতানির পরিমাণ ছিল ১২৭০০ কোটি ইউয়ান, যা ৮.১ শতাংশ বেশি এবং আমদানির পরিমাণ ছিল ৭০১৯ কোটি ইউয়ান, যা ৪.৪ শতাংশ বেশি। এক্ষেত্রে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৫৬৮১ কোটি ইউয়ান, যা ১৩.২ শতাংশ বেশি। উরুমুছি'র শুল্ক বিভাগ সম্প্রতি এ খবর প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলো হচ্ছে: রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, বেলারুশ ও আরমেনিয়া। এসব দেশ 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
১০. যুক্তরাষ্ট্রের উত্পাদন-শিল্পে টানা পাঁচ মাস পিএমআই (পারচেস ম্যানেজারস্ ইনডেক্স) কমেছে। ২০১৯ সালে দেশটির উত্পাদন-শিল্পে পিএমআই ০.৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪৭.২-তে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করে।
ইন্সটিটিউট জানায়, বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ ও বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে মন্থরগতির নেতিবাচক প্রভাবে গত বছরের অগাস্ট থেকে মার্কিন উত্পাদন-শিল্প আরও সংকুচিত হতে শুরু করে। ২০১৯ সালে মার্কিন উত্পাদন-শিল্পে গড় পিএমআই ছিল ৫১.২ পয়েন্ট, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উত্পাদন-শিল্পে অস্থির নীতি, দুর্বল বিনিয়োগ-পরিবেশ ও বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের মন্থরগতির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
১১. ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ শতাংশ, আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ১.৮ শতাংশ কম। ভারতের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৪.৫ শতাংশ। এখন চতুর্থ প্রান্তিকে এ হার কিছুটা বাড়তে পারে।
(আলিমুল হক)