ঢাকার বাতাসে ভয়াবহ বিপদ! নগরবাসী প্রতিনিয়ত বিষ গ্রহণ করছে! খাবারে, বাতাসে, পানিতে, মাছ-ফল-সবজি সব কিছুতেই বিষ। চলাফেরায় ঝুঁকির কাথা না বলাই ভলো। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রায় সব জায়গাতেই অধিকাংশ সময় বিভিন্ন সংস্কার কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। যে কারনে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বাড়ছে ধুলা। দূষিত হচ্ছে বায়ু। এই বায়ু দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে ঢাকা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন 'বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি' শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানায়। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। ২০১৭ সাল অব্দি বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। এত দিন এই উপাদান সবচেয়ে বেশি নির্গত করত চীন। গত দুই বছরে চীনকে টপকে ওই দূষণকারী স্থানটি দখল করে নিয়েছে ভারত। চীন ও ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে জাপানের টোকিও শহর। প্রতিবেদনটিতে মূলত কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ুদূষণের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। আর বায়ুদূষণের কারণে শিশুমৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। পিএম ২.৫ ছাড়াও বায়ুর অন্যান্য দূষণকারী পদার্থের উপস্থিতির দিক থেকে সামগ্রিক দূষণের একটি চিত্র ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে শীর্ষ বায়ুদূষণকারী দেশ হিসেবে চীন, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও পাকিস্তানের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান।
কিন্তু কেন বাংলাদেশে এই বায়ুদূষণ? দূষণ রোধে অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু বায়ুদূষণের কারণগুলো দূর করার বিষয়ে এসব সংস্থার কোনো কাজ চোখে পড়ে না।
কালো ধোঁয়াসহ ক্ষতিকর বস্তুকণা বাতাসে ছড়ানো ফিটনেসহীন মোটরযানগুলোর চলাচল বন্ধের দায়িত্ব সড়ক পরিবহন সংস্থার। ঢাকার চার পাশের ইটভাটার পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিতের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের সময় ধুলা ওড়া বন্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাধ্য করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। রাজধানীর সড়কে ধুলা নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন সকালে দুই সিটি করপোরেশন থেকে পানি ছিটানোর নিয়ম রয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে নীতিমালা প্রণয়নে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বায়ুদূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আরো কী কী উপায়ে বায়ুদূষণ রোধ করা যায়; সে ব্যাপারেও আদেশ দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এক সম্পূরক আবেদনের শুনানিতে এ আদেশ দেন। এ ছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এলাকায় অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দেন আদালত। সেই সাথে রাজধানীর রাস্তা ও ফুটপাথে ধুলোবালু, ময়লা ও বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। তা ছাড়া, পরিস্থিতি বর্তমানের মতোই থেকে যাবে।