রোববারের আলাপন-191229
  2019-12-29 18:23:46  cri

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি এনামুল হক টুটুল এবং শিয়েনান আকাশ।

বন্ধুরা, আমি অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথমে আমার ফু চিয়ান যাত্রার কিছু দৃশ্য ও স্থানীয় সংস্কৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?

টুটুল: বন্ধুরা, আকাশ ভাই সম্প্রতি ছুটিতে চীনের ফু চিয়ান প্রদেশে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে প্রতিদিন রাজার মত খেয়েছেন, কিন্তু আমাদের জন্য কিছুই আনেন নি।

আকাশ: সরি ভাই। খাবার নেই, কিন্তু তোমার জন্য চা আছে!

টুটুল: তাই নাকি? হাহা।

আকাশ: বন্ধুরা, ফু চিয়ান প্রদেশ, যখনই মানুষ সময় পান, তখনই সবাই একসাথে বা একা চা খান। তা হচ্ছে সেখানকার রীতিনীতি।আসুন, আমরা একসাথে এ ফুচিয়ান চা পান করি, কেমন?

টুটুল: ভাই, আমরা তাহলে একসাথে চা খেতে খেতে কোন বিষয় শুনবো? আকাশ: ঠু লো।

টুটুল: ঠু লো মানে?

আকাশ: ঠু মানে মাটি, লো মানে ভবন। ঠু লো মানে মাটির ভবন। ঠু লো হচ্ছে ফু চিয়ান প্রদেশের স্থানীয় বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী বসবাসের জায়গা। ঠু লো গোলাকার আকারের আছে, বর্গাকারেরও আছে। ঠু লোর অনেক তলা আছে, তিন, চার তলা রয়েছে। প্রতি তলায় অনেক কক্ষ থাকে। সাধারণত প্রথম তলা রান্নার জন্য, দ্বিতীয় তলা চাল বা অন্য কিছু মজুতের জন্য, তিন তলা বসবাসের জন্য।অনেক পরিবার একসাথে এক‌ই ঠু লোতে বাস করেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি ঠু লোর মাঝখানে কমপক্ষে একটি কূপ/গর্ত আছে। যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়, যেমন- ডাকাত আসে, তাহলে ঠু লোর দরজা বন্ধ করে থাকা যায়। ভেতরে পানি এবং ভাত সব আছে। অনেক সময় থাকা যায়। তখন ঠু লো একটি দুর্গের মতোই কাজ করে।আসলে তা একটি ছোট দুর্গ। ভাই, ঠু লোর মতো এ ধরনের ভবন কি বাংলাদেশ আছে?

টুটুল:…

আকাশ: ফু চিয়ান প্রদেশে ৩০০০টিরও বেশি ঠু লো রয়েছে।অধিকাংশই ইয়োং তিং কাউন্টি, নান চিং কাউন্টি এবং হুয়া আন কাউন্টিতে অবস্থিত। ঠু লোর নির্মাণ আসলে প্রাচীনকালে কিছু কিছু হান জাতির মানুষের চীনের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তরের সংগে জড়িত।

টুটুল: ভাই, কেন তারা তখন উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে স্থানান্তরিত হন?

আকাশ: প্রাচীনকালে কিছু কিছু সময় চীনের উত্তরাঞ্চল অনেক বছর যুদ্ধের অবস্থায় থাকে। এ ছাড়া ভয়াবহ বড় খরাও সৃষ্টি হয়। এজন্য উত্তরাঞ্চলের লোকজন অনেকে দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তরিত হন। ঠু লো আসলে হচ্ছে তাদের নির্মাণ এবং তাদের বসবাসের ভবন।

টুটুল: আচ্ছা, অনেক মজার, আমিও একদিন ঠু লো দেখতে চাই।

আকাশ: আসুন, বন্ধুরা, সুযোগ পেলে চীনের ফু চিয়ানে আসুন, ঠু লো দেখতে আসুন। ভেতরে বসে তাদের চা পান করুন, স্থানীয় বিশেষ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।

সংগীত

আকাশ: বন্ধুরা, সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমস অক্টোবর মাসে চীনের উ হান শহরে আয়োজিত হয়। এ উপলক্ষে আমি উ হানে গিয়ে আপনাদের জন্য সংশ্লিষ্ট খবর ও প্রতিবেদন লিখেছি। আমরা আমাদের অনুষ্ঠানে অব্যাহতভাবে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?

টুটুল: বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এবারের বিশ্ব মিলিটারি গেমসে অংশগ্রহণকারীদের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, কেমন?

২৭ অক্টোবর সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমস চীনের উ হান শহরে সাফল্যের সাথে সমাপ্ত হয়। বিশ্ব মিলিটারি গেমসের মশাল ইতোমধ্যে নিভে গেছে। কিন্তু যারা মিলিটারি গেমসে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করেছেন, তারা হয়তো কখনোই এই গেমসের স্মৃতি ভুলবেন না।

৩৩ বছর বয়সী তোং মিং হচ্ছেন এবারের বিশ্ব মিলিটারি গেমসের ২৬০০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে একজন। খেলার সময় তারা বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের সাহায্য করেন, তারাও স্টেডিয়ামের শৃঙ্খলা রক্ষা করেন। তোং মিং একজন শিক্ষক। তিনি ৬ বছর বয়সে ডাইভিং খেলা শুরু করেন। ৯ বছর বয়সে ভালো পারফর্মেন্সের জন্য প্রদেশের দলে প্রবেশ করেন। কিন্তু তিনি জাতীয় দলে প্রবেশের প্রাক্কালে ডাইভিংয়ের সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাকে চিরদিনের জন্য ডাইভিং খেলাকে বিদায় জানাতে হয়। তখন থেকে তাকে হুইলচেয়ারের উপর নির্ভর করে চলাচল করতে হয়। তবে, শারীরিক বাধা কখনোই তার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তিনি বেইজিং অলিম্পিক গেমস, শাংহাই ওয়ার্ল্ড এক্সপো, লন্ডন অলিম্পিক গেমসসহ বড় আকারের গেমস ও কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জন্মস্থান উ হানে সপ্তম বিশ্ব মিলিটারি গেমস আয়োজনের খবর পেয়ে তিনি ইতিবাচকভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলে অংশ নেন। বিশ্ব মিলিটারি গেমসের সময়, তিনি তার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মন প্রাণ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিয়ে সেবা প্রদান করেন। তার ডেডিকেটিং স্পিরিট বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদদের সম্মান অর্জন করেছে। তার ব্যক্তিত্ব ও মধুর হাসিও অনেকের মন জয় করেছে।

একদিন, তার কাজের ব্যস্ততার মাঝে হঠাত্ একজন মিশরের খেলোয়াড় তার সামনে চলে আসেন, তার নতুন জয়ের স্বর্ণপদক তোং মিং'র গলায় পরিয়ে দেন। তিনি তোং মিংকে বলেন:

আকাশ:আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।(ধন্যবাদ)।

তোং মিংয়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলায় একটি দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এদিন, বিশ্ব মিলিটারি গেমসের স্বেচ্ছাসেবকদের মঞ্চে তিনি অবশেষে তার স্বপ্নের স্বর্ণপদক লাভ করেন।

তিনি বলেন,

আকাশ:আমি আগে থেকেই একজন ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়াবিদের মধ্যে খেলাধুলার স্পিরিট থাকা উচিত। তা হচ্ছে অধ্যবসায়, সাহস ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া। আমি আমার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সবাইকে জানাতে চাই, যদি মনে আলো থাকে, আশা থাকে, যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকে, তাহলে অবশ্যই অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টি করতে পারবে।

আকাশ: টুটুল ভাই, এ গল্প শোনার সময় আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। প্রত্যেক মানুষের জীবন আসলে একটি প্রতিযোগিতার মতই, তাইনা? খুব কঠিন। জীবনের এই কঠিন পথে কেউ কেউ তাদের আশা ছেড়ে দেয়, কিন্তু যারা কখনোই কঠিনকে ভয় করে না, কেবলমাত্র তারাই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। আমরা একদিন মারা যাবো, কিন্তু আমাদের এমন কিছু করা উচিত যা এ পৃথিবীতে থেকে যাবে। ভাই, তুমি কিছু বলবে?

টুটুল:

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040