১. ২০২৩ সাল নাগাদ চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বাজার ১১৯০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশান (আইডিসি) ও কিউবিটএআই কর্তৃক যৌথভাবে প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
শ্বেতপত্রে বলা হয়, অনুকূল নীতিমালার কারণে, ২০১৯ সালে চীনের এআই বাজার গোটা বিশ্বের এআই বাজারের ১২ শতাংশ দখল করবে। এক্ষেত্রে চীনের এআই বাজারের প্রবৃদ্ধি হবে ৬৪ শতাংশ। চীনের এআই বাজার তখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এআই বাজারে পরিণত হবে।
শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, চীনের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি খাতে চলতি বছর বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। সেবা খাত, স্বাস্থ্যসেবা ও টেলিযোগাযোগ খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
শ্বেতপত্র অনুসারে, ২০২০ সালে চীনের এআই বাজার ৪২৫ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। সেক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে ৫১.৫ শতাংশ।
২. চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য চলতি বছর স্থিতিশীল থাকবে এবং এর কাঠামোগত উন্নতি সাধিত হবে। সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৯ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩০ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে (প্রায় ৪.২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে বাইরের অনিশ্চয়তা একটা বাধা হিসেবে কাজ করবে। তবে, তা সত্ত্বেও, দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। পাশাপাশি, চীন তার বাণিজ্য-কাঠামো উন্নত করবে, বাণিজ্য-ব্যয় কমাবে ও দক্ষতা বাড়াবে।
৩. এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে আগের বছরের একই সময়কালের তুলনায় ২.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৮.৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৪.১৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে চীন রফতানি করেছে ১৫.৫৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের পণ্য ও সেবা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, বছরের প্রথম ১১ মাসে চীন আমদানি করেছে ১২.৯৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের পণ্য ও সেবা। ফলে, উক্ত ১১ মাসে চীনের বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ২.৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪.৯ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্ট এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে শ্লথগতি সত্ত্বেও, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় থেকেছে। এ থেকে চীনা অর্থনীতির শক্ত ভিত্তি প্রমাণিত হয়। নভেম্বরে চীনে আমদানি ২.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১.২৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। এ থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি প্রমাণিত হয়।
কর্মকর্তা জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বেড়েছে। তা ছাড়া, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে গড় বৃদ্ধির চেয়ে বেশি। বছরের প্রথম ১১ মাসে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ৯.৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮.৩৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে, যা চীনের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ২৯.৩ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রাখা অব্যাহত রেখেছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির বৈদেশিক বাণিজ্য ১১ মাসে ১০.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১২.১২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনের অপরিশোধিত তেল আমদানি ১০.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬২ মিলিয়ন টনে। এসময় কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ১০.২ ও ৭.৪ শতাংশ। তবে, এসময় সয়াবিন আমদানি ৪.১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৭৮.৯৭ মিলিয়ন টনে।
৪. চীনে একটি নতুন তেল ও গ্যাস পাইপিং সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংস্থার নাম 'চায়না অয়েল অ্যান্ড গ্যাস পাইপিং নেটওয়ার্ক কর্পোরেশান'। সম্প্রতি সংস্থাটির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাবাণী পাঠান চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং।
শুভেচ্ছাবাণীতে প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, গ্যাস ও তেল শিল্পে সংস্কার গভীরতর করা এবং তেল ও গ্যাসের সরবরাহ-ব্যবস্থা আরও কার্যকর ও স্থিতিশীল করা নতুন কর্পোরেশান প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য।
প্রেসিডেন্ট সিন চি পিংয়ের 'নতুন যুগে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা' অনুসরণ করে, সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় পরিষদের নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন, সংস্কার ও নবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ন্যায়সংগত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজার নিশ্চিতকরণ, গ্যাস ও তেল শিল্পের উন্নয়ন, ইত্যাদি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী লি প্রয়োজনীয় দিক্-নির্দেশনাও দেন।
উপ-প্রধানমন্ত্রী হান চেং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
৫. চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার সময় চীন যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা নির্ধারিত সময়ের আগেই পূরণ করা হয়েছে। তিনি সম্প্রতি সিউলে দক্ষিণ কোরিয়ার মৈত্রী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চীনে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে এবং তা দিন দিন উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। বিদেশি পণ্যের ওপর চীনের গড় শুল্ক ৭.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ ও নবোদিত অর্থনৈতিক সত্তাগুলোর তুলনায় অনেক কম। পাশাপাশি, বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের চীনা বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। এদিকে, আগামী পয়লা জানুয়ারি চীনে নতুন 'বিদেশি বিনিয়োগ আইন' কার্যকর হবে। এতে বিদেশি ব্যবসায়ীরা আরও সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠু ব্যবসা-পরিবেশ পাবেন।
৬. চীন ও আফ্রিকার মধ্যে কৃষিপণ্যের বাণিজ্য ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি চীনের কৃষি ও গ্রামীণ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
২০০০ সালে যেখানে চীন-আফ্রিকা কৃষিপণ্যের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এক্ষেত্রে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। চীনের কৃষিমন্ত্রী হান ছাংফু সম্প্রতি হাইনানের সানইয়াতে অনুষ্ঠিত প্রথম চীন-আফ্রিকা কৃষি-সহযোগিতা ফোরামে এসব তথ্য উল্লেখ করেন। ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, প্রতিবছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ হাজার কৃষি-কর্মকর্তা, টেকনিশিয়ান, কৃষক ও শিক্ষার্থী চীনে প্রশিক্ষণ লাভ করছেন।
৭. গেল অক্টোবরে হাঙ্গেরির বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত ছিল ৫১৪ মিলিয়ন ইউরো। দেশটির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর এ তথ্য জানিয়েছে।
দফতর জানায়, অক্টোবরে দেশটির রফতানি ৬.৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১০.০৮৬ বিলিয়ন ইউরোতে এবং আমদানি ৩.৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৫৭২ বিলিয়ন ইউরোতে। এসময় হাঙ্গেরির মোট রফতানির ৮০ শতাংশ ও আমদানির ৭৪ শতাংশ হয়েছে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে।
দফতর আরও জানায়, বছরের প্রথম ১০ মাসে হাঙ্গেরির রফতানি ৪.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯১.৯৮০ বিলিয়ন ইউরোতে এবং আমদানি ৫.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭.৫৭৮ বিলিয়ন ইউরোতে। অথাৎ, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দেশটির বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত ছিল ৪.৪০২ বিলিয়ন ইউরো।
৮. চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এ নিয়ে টানা ৫ বছর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করল দেশটি। দক্ষিণ কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, দোসরা ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে ২০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৯. বাংলাদেশে বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা ৪৬ লাখের ওপরে। সব ই-টিআইএনধারীরই প্রতিবছর তাদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এর মধ্যে যাদের করযোগ্য আয় আছে, কেবল তাদেরই আয়কর জমা দিতে হয়। গত পয়লা ডিসেম্বর ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা শেষ হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আয়কর বিভাগ প্রাথমিক হিসাবে দেখেছে, রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ২২ লাখেরও কম। অর্থাৎ, ই-টিআইএনধারীর মধ্যে অর্ধেকও তাদের আয়কর বিবরণী জমা দেননি।
এনবিআরের কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করদাতাদের একটি অংশ নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা দিতে না-পারায় জমার সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। এই সংখ্যা লক্ষাধিক। তাদেরকে সম্ভাব্য রিটার্ন দাখিলকারী হিসাব করেই মূলত সংখ্যা প্রায় ২২ লাখে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গত বছর ২২ লাখ বলা হলেও এই সংখ্যা আসলে ২০ লাখের মতো ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর আয়কর দিবস পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের বিপরীতে কর আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা; আর এবার কর আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। কর আদায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। অবশ্য এনবিআর আশা করছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল ২৩ লাখ হতে পারে।
১০. বাংলাদেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এগিয়ে আছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং। আমানত ও ঋণের হিসাবে এক-চতুর্থাংশই এ ধারার ব্যাংকগুলোর দখলে রয়েছে। এ দুইটি সূচকের মাধ্যমেই বোঝা যায় একটি ব্যাংক কত বড়ো। অন্যদিকে যেসব সূচকের মাধ্যমে ব্যাংকের শক্ত অবস্থান প্রকাশ করে সেসব সূচকেও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো এগিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
(আলিমুল হক)