১. সুষ্ঠু আইনগত কাঠামোর আওতায় একটি বিশ্বমানের ও বাজারমুখী ব্যবসা-পরিবেশ গড়ে তুলতে নতুন বিধি প্রয়োগ করবে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলো সমাধান করতে বৃহত্তর উদ্যোগ নেওয়া হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় পরিষদ তথা মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, আগামী পয়লা জানুয়ারি থেকে ব্যবসা-পরিবেশ উন্নত করাসংক্রান্ত নতুন বিধি কার্যকর হবে। এই বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে বিগত দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, অর্থনীতির ওপর নিম্নমুখী চাপ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে বাজারকে চাঙ্গা করা। ব্যবসা-পরিবেশ উন্নত করতে সরকার কর-হ্রাস অব্যাহত রাখবে ও প্রশাসনে সংস্কার-প্রক্রিয়া জোরদার করবে।
২. চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে চীনের প্রধান শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৯ শতাংশ কমেছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস)-এর সিনিয়র পরিসংখ্যানবিদ চু হং জানান, বছরের প্রথম নয় মাসে মুনাফা কমেছিল ২.১ শতাংশ।
তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা সবচেয়ে বেশি কমেছে। বছরের প্রথম দশ মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১.৪৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান তথা ২১০০০ কোটি মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের প্রথম দশ মাসে মুনাফা করেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৩ শতাংশ বেশি। দশ মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট মুনাফার পরিমাণ ছিল ১.৩৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।
তিনি আরও জানান, বিগত দশ মাসে খনিশিল্পে মুনাফা ২.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭২১৩ কোটি ইউয়ানে এবং উৎপাদন-শিল্পে মুনাফা ৪.৯ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪.১৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। শুধু অক্টোবরেই দেশের প্রধান শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৯ শতাংশ।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক সত্ত্বেও, চীনা কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দাম কমায়নি। ফলে মার্কিন ফার্ম ও ক্রেতাদের চীনা পণ্য ক্রয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণার ফলাফল অনুসারে, ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মার্কিন সরকার শুল্ক থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করেছে মোটামুটি ৪০০০ কোটি ডলার। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকেই যুক্তরাষ্ট্র চীনা রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে।
গবেষণায় উঠে এসেছে যে, চীনা পণ্যের আমদানিমূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কোনো প্রভাব পড়েনি। এর অর্থ চীনা কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দাম তেমন একটা কমায়নি। ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে চীনা পণ্যের দাম ডলারে কমেছে মাত্র ২ শতাংশ। একই সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের পণ্যের দামও প্রায় একই হারে কমেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, আমদানিপণ্যের মূল্যের সামান্য হ্রাস অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে হয়নি, বরং বাজারের অন্যান্য ফ্যাক্টরের কারণে হয়েছে।
এদিকে, অক্টোবরে পণ্যবাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি কমে দাঁড়ায় ৬৬৫০ কোটি ডলারে। এর মূল কারণ পণ্য-আমদানিতে ধস নামা। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনা রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমেছে।
৪. ২০১৯ সালে চীনে বিদেশি পর্যটক খাতে আয় ১৩০০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। চায়না ট্যুরিজম একাডেমি এ পূর্বাভাস দিয়েছে।
একাডেমি জানায়, ২০১৮ সালে চীনে বিদেশি পর্যটক এসেছে ১৪ কোটি ১০ লাখ। সেবছর এ খাতে চীনের আয় হয়েছে ১২৭১০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি।
একাডেমির হিসাব অনুসারে, চীনের বিদেশি পর্যটকদের ৬০ শতাংশই এশিয়ার দেশগুলো থেকে এসেছে। এরপরই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর স্থান। চীনে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছে যথাক্রমে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
৫. চীনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)-র কম্প্রিহেন্সিভ আমদানি মূল্যসূচক চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে ২৪ নভেম্বর সময়কালে কমেছে। শাংহাই পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস এক্সচেঞ্জ (এসএইচপিজিএক্স) সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
উক্ত সময়কালে এলএনজি মূল্যসূচক (ট্যাক্স ছাড়া) দাঁড়ায় প্রতিটনে ৩৩৬০ ডলার, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩.৬ শতাংশ কম।
৬. চীনের টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়েই ইউক্রেনের ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ উন্নয়নে সেদেশের সরকারকে সাহায্য করতে একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। কোম্পানির ইউরোপ এলাকার প্রেসিডেন্ট লি চিয়ান সম্প্রতি কিয়েভে এ কথা জানান।
তিনি জানান, ভিন্ন দেশে ব্রডব্যান্ড গড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রস্তুত তাদের কোম্পানি।
তিনি জানান, বিগত তিন বছরে হুয়াওয়েই স্থানীয় অপারেটরদের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে, ইউক্রেনকে টু-জি থেকে ফোর-জিতে উন্নীত হতে সাহায্য করেছে। ব্রডব্যান্ড উন্নয়নের মাধ্যমে ইউক্রেন অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হতে পারে।
৭. ২২ নভেম্বর শেষ-হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেল আমদানি ও রফতানি—দুটোই বেড়েছে। মার্কিন জ্বালানি তথ্য-প্রশাসন (ইআইএ) এ কথা জানায়।
ইআইএ জানায়, ওই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে প্রতিদিন ৬.১৯ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় দিনপ্রতি ২ লাখ ১৭ হাজার ব্যারেল বেশি। অন্যদিকে, একই সপ্তাহে দেশটি দিনপ্রতি অপরিশোধিত তেল রফতানি করেছে ৩.৪৮ মিলিয়ন টন, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় দিনপ্রতি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ব্যারেল বেশি।
৮. চীনে আনারস রফতানি শুরু করেছে মালয়েশিয়া। সম্প্রতি চার্টার্ড বিমানে করে চীনের হ্যনান প্রদেশের চেংচৌ-তে আনারস রফতানি শুরু করে দেশটি। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার কৃষি উপমন্ত্রী বলেন, চীনে আনারস রফতানি তার দেশের কৃষিখাতকে চাঙ্গা করবে এবং এতে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
উপমন্ত্রী জানান, প্রতিবছর চীনে গড়ে কমপক্ষে ২ হাজার টন ফল রফতানি করা হবে। আর এ জন্য সপ্তাহে তিনটি কার্গো-চার্টার্ড ফ্লাইট চলাচল করবে। এতে মালয়েশিয়ার বছরে আয় হবে প্রায় ২৯ লাখ মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে প্রতিবছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ শতাংশ।
৯. চলতি বছর মেক্সিকোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে -০.২ থেকে ০.২ শতাংশের মধ্যে। অন্যদিকে, ২০২০ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ০.৮ থেকে ১.৮ শতাংশের মধ্যে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দিয়েছে। ২০১৮ সালে ম্যাক্সিকোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশ। ল্যাটিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হচ্ছে ম্যাক্সিকো। এক্ষেত্রে প্রথম স্থানে আছে ব্রাজিল।
১০. বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ কমার পরিবর্তে বাড়ছে। চলতি বছরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ থাকবে না। তবে তেমনটা ঘটেনি। নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আরও প্রায় চার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১২শতাংশ। দেশের শিল্প-কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা, উৎপাদন-খরচ অনেক বেশি ও বেশি সুদ দিয়ে কারখানা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিল্পমালিকরা। এতেও বাধ্য হয়ে অনেকে খেলাপি হয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের এক গবেষণায় ব্যাংকের ঋণ-কার্যক্রম বিষয়ে বলা হয়, একজন বড় ব্যবসায়ীকে অনেকগুলো ব্যাংক মিলে ঋণ প্রদান করে, এতে অনেকসময় চাহিদার বেশি ঋণ চলে যায়। এটা গ্রাহকদের অন্য খাতে ঋণ ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পায় না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। জুনশেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সেহিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
১১. পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে বাইসাইকেল আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গে বাইসাইকেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গে সাইকেল রফতানির এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে। প্রয়োজনে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গে বাইসাইকেলের কারখানা স্থাপন করতে পারে। সরকার এ ব্যাপারে জমি বরাদ্দ দেবে।'
গত ২২ নভেম্বর কলকাতার তাজ বেঙ্গল হোটেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মধ্যকার বৈঠকশেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিল্পকারখানার ওপর সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
(আলিমুল হক)