চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ে চলচ্চিত্রের ভূমিকা
  2019-12-04 09:27:45  cri
চলতি বছর হলো চীন ও আলবেনিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭০তম বার্ষিকী। ৭০ বছরের মধ্যে বিচিত্র ও রঙ্গিন সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কার্যক্রম দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা ও আন্তরিক বন্ধুত্ব বেগবান করা ছাড়াও, দু'দেশের সম্পর্কের গভীর উন্নয়নও জোরদার করেছে।

নয়াচীনের সঙ্গে সবচেয়ে আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী দেশগুলোর অন্যতম একটি হিসেবে, দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চীন ও আলবেনিয়ার বিনিময় ও সহযোগিতাও শুরু হয়।

আলবেনিয়ার সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ম্যাডাম মিরেলা কুমবারো বলেন, সাংস্কৃতিক বিনিময় চীন ও আলবেনিয়ার সম্পর্কের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে।

তিনি বলেন, 'সর্বপ্রথম আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিষয়, যেমন, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত ও গানের মাধ্যমে চীনারা আলবেনিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন। তখন থেকে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চীন ও আলবেনিয়া পরস্পরকে সমর্থন এবং পরস্পরের সংস্কৃতির আকর্ষণ অনুভব করা শুরু করে। অর্থনৈতিক বিনিময়ের তুলনায় সাংস্কৃতিক বিনিময় পারস্পরিক মানসিক বিনিময় বেগবান করতে সক্ষম বলে আমি মনে করি।'

চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাসে চলচ্চিত্র বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০ দশকে চীন আলবেনিয়ার ৩০টি চলচ্চিত্র আমদানি করে। ফ্যাসিবাদ-বিরোধী বিষয়ক আলবেনিয়ার বিপুলসংখ্যক চলচ্চিত্র চীনের দর্শকদের আকর্ষণ করেছে এবং দর্শকদের মধ্যে তুমুল আলোড়নও সৃষ্টি করেছে।

এখন পর্যন্ত আলবেনিয়া প্রসঙ্গে কথা বললে অনেক চীনা সেদেশের চলচ্চিত্রের নাম বলতে থাকেন। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী চলচ্চিত্র হলো 'নাধিনজিম বি ভেকিয়েন' বা 'ভিক্টোরি অভার ডেথ' । এই চলচ্চিত্রের থিমসং চীনে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং এখন পর্যন্ত তা মানুষের মুখে ধ্বনিত হয়।

চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ে চলচ্চিত্রের বিশাল ভূমিকা প্রসঙ্গে 'নাধিনজিম বি ভেকিয়েন' বা 'ভিক্টোরি অভার ডেথ' চলচ্চিত্রের পরিচালক পিরো মিলকানি মনে করেন, 'তরুণ-তরুণীদের মানসিক জগত্ এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের বিনিময়ে চলচ্চিত্রের প্রভাব বিশাল। কারণ চলচ্চিত্র তাদের বিশ্বকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে এবং তাদের মৈত্রী গভীরতর করতে সক্ষম। আলবেনীয় বা চীনা, যাই হোক, তাদের কাছে চলচ্চিত্রকে সাংস্কৃতিক দূত বলে গণ্য করা হয়। জনগণ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম।'

চীন ও আলবেনিয়ার সম্পর্কের উন্নয়নের ইতিহাসে একদিকে আলবেনিয়ার চলচ্চিত্র চীনাদের সাংস্কৃতিক জীবন বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে, অন্যদিকে আলবেনিয়ায় চীনের পাঠানো সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞরা সেখানকার জনগণের জন্য নতুন শৈল্পিক আমেজ বয়ে আনেন।

১৯৬৪ সালের শেষ দিকে তত্কালীন চীনের কেন্দ্রীয় ব্যালে নৃত্য দলের উপ-মহাপরিচালক চিয়াং চু হুই আলবেনিয়ায় যান। তাঁর দায়িত্ব হলো 'দ্যা রেড ডিটাচমেন্ট অফ উইমেন' নামে চীনের সৃষ্ট এই ব্যালে নৃত্য প্রশিক্ষণে আলবেনিয়ার জাতীয় ব্যালে নৃত্য দলকে সাহায্য করা।

তিনি বলেন, 'আমার মনে যে বিষয় গভীর দাগ কাটে তা হলো আলবেনিয়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেক পরিশ্রমী। তাদের উদ্দীপনা অনেক। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুব সুবিধাজনক। তাদের দক্ষতাও অনেক ভালো। তারাও সরল ও সহজ মানুষ।'

চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক মহলের জনগণের অভিন্ন প্রচেষ্টায় এক দল সাংস্কৃতিক শিল্পী তৈরি হয় এবং যা দু'দেশের এক প্রজন্মের মানুষের যৌবনের স্মৃতি হয়ে ওঠে। সাংস্কৃতিক বিনিময় সময় ও স্থান অতিক্রম করেছে এবং দু'দেশের জনগণের মনে অবিস্মরণীয় স্মৃতি তৈরি করেছে।

নতুন শতাব্দীতে প্রবেশ করার পর বিশেষ করে 'চীন-মধ্যপূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা ব্যবস্থা' এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় চলচ্চিত্র, সভ্যতার প্রকাশনা, আধুনিক নৃত্য, অপেরা ও সঙ্গীতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়।

২০১১ সালে ১৪তম শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে 'মায়া' নামে আলবেনিয়ার চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে চীন আন্তর্জাতিক বেতার বা সিআরআইয়ের অনুদিত ও ডাবিংকৃত চীনা চলচ্চিত্র 'ভয়েজ এক্সট্রাঅর্ডিনারি' আলবেনিয়ায় প্রদর্শিত হয়। এটি হলো আলবেনীয় ভাষায় অনুদিত প্রথম চীনা এনিমেটেড চলচ্চিত্র।

২০১৫ সালে চীনের জাতীয় সংবাদ, প্রকাশনা, বেতার ও টেলিভিশন সাধারণ ব্যুরো আলবেনিয়ার প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে 'চীন ও আলবেনিয়ার ক্ল্যাসিকাল বই পারস্পরিকভাবে অনুবাদ ও প্রকাশনা প্রকল্পের সহযোগিতা চুক্তি' স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে ৫ বছরের মধ্যে চীন ও আলবেনিয়া একে অপরের ২৫টি ক্ল্যাসিকাল সাহিত্য ও শিল্পকর্ম অনুবাদ করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হয়ে ওঠে।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে চীন ও আলবেনিয়ার সরকার আলবেনিয়ায় চীনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটি হলো চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাসে আরেকটি প্রতীকসম্পন্ন দলিল, এটিও 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এর আওতায় দু'পক্ষের সহযোগিতা ও বিনিময় বেগবান করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাও বটে।

২০১৯ সালে চীনের জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে আলবেনিয়ার বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্রে চায়না মিডিয়া গ্রুপ বা সিএমজি'র নির্মিত আলবেনীয় ভাষার কার্টুন চলচ্চিত্র 'চীনের পান্ডা' প্রচারিত হয় এবং যা আলবেনিয়ার ছোট বন্ধুদের সমাদর পায়।

আলবেনিয়ায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চৌ তিং এই কার্টুন চলচ্চিত্র প্রচারের অনুষ্ঠানে বলেন, 'চীনের পান্ডা' নামে এই চলচ্চিত্র প্রচার হলো চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নতুন ফলাফল। আলবেনিয়ার বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্রের মহাপরিচালক থোমা গেলচি বলেন, দু'দেশের সহযোগিতা কার্টুন চলচ্চিত্র থেকে নতুন করে আবার যেভাবে শুরু হয়েছে, তার বিশেষ তাত্পর্য আছে। তার মানে চীন ও আলবেনিয়ার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের বিনিময় আশায় ভরপুর বলে তিনি জোর দিয়ে বলেন।

৭০ বছরের মধ্যে অব্যাহত সাংস্কৃতিক বিনিময় দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন বেগবান করেছে এবং দু'দেশের জনগণের মনের দূরত্ব কাছাকাছি করে তুলেছে। ৭০ বছর পর আজ নতুন সূচনায় দাঁড়িয়ে বলা যায়, এই সাংস্কৃতিক বিনিময় অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাবে এবং যা চীন ও আলবেনিয়ার সম্পর্কের সার্বিক উন্নয়নে আরো বেশি প্রাণশক্তি যোগাবে।

(লিলি/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040