১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর রাশিয়ান ফেডারেশন সরকার, রাশিয়ান ফেডারেশনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং সেন্ট পিটার্সবুর্গ শহর কর্তৃক আয়োজিত অষ্টম সেন্ট পিটার্সবুর্গ আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি ফোরাম রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামের কাঠামোটিতে তিনটি প্রধান বিভাগ ছিল : সাংস্কৃতিক বিনিময়, উত্সব সম্পাদনা এবং ব্যবসায়ের প্ল্যাটফর্ম। বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত, পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের জন্য একাধিক যোগাযোগ, শেখার ও প্রদর্শনীর স্থান তৈরি করেছে এই প্ল্যাটফর্ম। এবারের ফোরামের অতিথি দেশ হিসাবে চীন সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেছে এবং দুটি দেশ সংগীত, চারুকলা, সিনেমা, থিয়েটার, জাদুঘর ও সার্কাস বিষয়ে গভীর সংলাপ করেছে।
ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি রাশিয়ার জাতীয় জাদুঘরের হার্মিটেজ জাদুঘর (হার্মিটেজ) এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুশ ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলগা গোলোডেটস, রাশিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি, সেন্ট পিটার্সবুর্গের মেয়র আলেকজান্ডার বেগলভ এবং চীনা সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ঝাং স্যু উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতা দেন।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী গোরোডিটস বলেন, ২০১২ সালে সেন্ট পিটার্সবুর্গ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষার প্রচার ও স্বল্প সময়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ২০১২ সালে প্রথম ফোরামে কেবল ৭০জন বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। ২০১৯ সালের ফোরামে বিশ্বের প্রায় একশ দেশের ৩৫হাজার লোক হাজির হয়। এতে ৩৫০টিরও বেশি ইভেন্টের আয়োজন করা হয় এবং একাধিক রেকর্ড তৈরি হয়। আমাদের সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উন্নয়নের জন্য বোঝাপড়া, যোগাযোগ ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এখন আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, ফোরামটি বিশ্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আর্ট ক্র্যাডল হয়ে উঠেছে।
রুশ সংস্কৃতিমন্ত্রী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাশিয়া প্রথমবারের মতো সংস্কৃতিকে জাতীয় উন্নয়নের অগ্রাধিকার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রতি বছর প্রায় একশত নতুন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় চালু হয়, যা রাশিয়ান মানুষের আত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি সাংস্কৃতিক ফোরামের আন্তর্জাতিকীকরণ ও এর প্রচারে সর্বস্তরের মানুষকে ধন্যবাদ জানান। এই ফোরামে চীন অতিথি দেশ হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৯ সেন্ট পিটার্সবুর্গ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ফোরামে চীন অতিথি দেশ। এটি কেবল চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭০তম বার্ষিকীর প্রতি শ্রদ্ধাই নয়, বরং আমাদের গভীরতর সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্বেরও বহিঃপ্রকাশ। এই ফোরাম চলাকালীন, চীন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। উদাহরণস্বরূপ, শাংহাই জাতীয় অর্কেস্ট্রা রাশিয়ান আন্দ্রেভ ন্যাশনাল মডেল অর্কেস্ট্রার সাথে একটি যৌথ কনসার্ট আয়োজন করবে। চীনের জাতীয় থিয়েটার "কিং ল্যানলিং" নাটকটি পরিবেশন করবে, নাটকটি মস্কোতে চেখভ আন্তর্জাতিক থিয়েটার ফেস্টিভাল ২০১৯-এ পরিবেশিত হয়েছিল এবং বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিল; বেইজিং ডান্স একাডেমি বোরিস এফম্যান চিলড্রেন্স ডান্স থিয়েটারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে এবং 'সোয়ান লেক' ব্যালে পরিবেশন করবে।
চীনা সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী ঝাং স্যু তাঁর বক্তৃতায় সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী লুও সু কাংয়ের অভিনন্দনমূলক চিঠি পড়ে শোনান। অভিনন্দন চিঠিতে মন্ত্রী লুও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, পারস্পরিক সাংস্কৃতিক উত্সবে অনেক মানুষ অংশগ্রহণ করেছে এবং এটি চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাসে একটি ব্র্যান্ড ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। এ বছর, ফোরামের অধীনে অনেক উপ-ফোরামে অংশ নিতে সংগীত, শিল্প, চলচ্চিত্র, থিয়েটার, জাদুঘর, সার্কাস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত পাঠিয়েছে চীন। আশা করা হয় যে, অতিথি দেশ হিসেবে চীন অবশ্যই রুশ জনগণকে চীন সম্পর্কে আরও জানতে, চীনকে ভালবাসতে এবং চীনা ও রাশিয়ান জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে সহায়তা করবে।
ভবিষ্যতে চীন-রাশিয়া সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং মূল প্রকল্পগুলির দিকনির্দেশের কথা সম্পর্কে ঝাং স্যু বলেন, চীন ও রাশিয়া ২০২০ ও ২০২১ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনবর্ষ আয়োজন করবে। দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিভাগগুলি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনী বছরের কাঠামোর মধ্যে চীন-রাশিয়া সাংস্কৃতিক উত্সব এবং হ্যাপি স্প্রিং ফেস্টিভালের মতো ব্র্যান্ড প্রকল্পগুলি পরিচালনা করবে।