চীনের পর্বতারোহণের ইতিহাস-সম্পর্কিত 'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রের পটভূমি
  2019-11-21 18:33:22  cri

'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রটি পর্বতারোহণ সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এতে ২০ শতাব্দীর ৬০ ও ৭০ দশকে চীনের পর্বতারোহণ দলের সদস্যদের দু'বার ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণের গল্প তুলে ধরা হয় এবং যা পর্বতারোহণ বিষয়ক ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রের শূন্যতা পূরণ করে।

'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়। এতে এমন একটি ঘটনা বলা হয় যে, চীনের পর্বতারোহণ দলের সদস্যরা ১৯৬০ ও ১৯৭৫ সালে দু'বার করে হিমালয় পর্বতের ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করে। ১৯৬০ সালে তারা বিশ্বে সর্বপ্রথম ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উত্তর দিকে চূড়ায় পৌঁছানোর এই দারুণ কর্তব্য সম্পন্ন করেন এবং ১৯৭৫ সালে ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উচ্চতা সঠিকভাবে পরিমাপ করেন।

বলা যায়, চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পর্বতারোহণবিষয়ক চলচ্চিত্রের সংখ্যা কম নয়। সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবজাতির পাহাড় বিজয়ের এই থিম প্রকাশিত হয়। তবে নয়াচীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপহার হিসেবে 'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রে আত্মচ্যালেঞ্জ প্রকাশিত হওয়া ছাড়াও, রাষ্ট্রীয় চেতনাও প্রতিফলিত হয়।

'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রটির পিছনের সত্য ঘটনা হলো ১৯৬০ ও ১৯৭৫ সালে দু'বার করে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করা। বিশ্বে মোট ১৪টি পাহাড় আছে, যাদের উচ্চতা ৮০০০ মিটারেরও বেশি। সেগুলোর মধ্যে ৯টি চীনের ভূভাগে অবস্থিত এবং সবচেয়ে বিখ্যাত একটা হলো হিমালয় পর্বতের ছুমোলোংমা শৃঙ্গ। এখন আমরা জানি, ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উচ্চতা ৮৮৪৪.৪৩ মিটার। অনেকে তাকে 'দক্ষিণ মেরু' ও 'উত্তর মেরু'-র পর বিশ্বের তৃতীয় মেরু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ১৮ শতাব্দী থেকে অসংখ্য পর্বতারোহী হিমালয় পর্বতের চূড়ায় আরোহণের চেষ্টা চালান। তবে ১৯৬০ সালের আগে খুব কম বিদেশি পর্বতারোহী যথাক্রমে দু'বার করে দক্ষিণ দিকের চূড়ায় পৌঁছান, এর কারণ দক্ষিণ দিকের ঢাল।

উত্তর দিক থেকে চূড়ায় আরোহণ প্রসঙ্গে বিদেশি পর্বতারোহীরা বারবার চেষ্টা করলেও অবশেষে ব্যর্থ হন। কারণ ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উত্তর দিকের ভূখণ্ড আরো জটিল, ঢাল আরো খাড়া, জলবায়ু ও পরিবেশ আরো খারাপ এবং সেখানে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেশি।

চীনের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায়, ১৯৬০ সালে সেই সময় নয়াচীন অতি কঠিন সময় পার করছিলো। তাই হয়তো অনেক মানুষ জিজ্ঞাস করতে পারেন যে, কেন বিশাল খরচ দিয়ে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করা হয়? আরোহণ করা কি কোটি কোটি মানুষের খাবারের সমস্যার সমাধান করতে পারে? ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

চীনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে নয়াচীন অতি কঠিন সময়ের মধ্যে ছিলো। তবে সেই সময় বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করা শুধু দেশ ও জাতির সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই নয়, বরং বিশ্বের কাছে চীনা জনগণের মানসিক অবস্থা তুলে ধরার একটি জানালাও বটে। সেই সময় চীন নেপালের সঙ্গে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে। ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করা যায় কিনা, তা এই শৃঙ্গের মালিকানার সঙ্গে সম্পর্কিত। নেপালের পর্বতারোহণ দলের সদস্যরা ১৯৫৩ সালে সাফল্যের সঙ্গে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করে। তাই তারা মনে করে, ছুমোলোংমা শৃঙ্গ নেপালের ভূখণ্ড। তাদের কথা অনেক শক্তিশালী। তারা বলে, চীনারা কখনই ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করেন নি, কিভাবে বলা যায়, ছুমোলোংমা শৃঙ্গ চীনের?

তাই নয়াচীন প্রতিষ্ঠার শুরুতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করা সার্বভৌমত্বের মালিকানা নির্ধারণ করার রাজনৈতিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তবে তখনকার চীনের জন্য উত্তর দিক থেকে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করা একটি অসম্ভব কর্তব্য ছিলো। একদিকে ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উত্তর ঢালকে 'মৃত্যুর পথ' বলে গণ্য করা হয়, আগে কেউ এর চূড়ায় পৌঁছান নি। অন্যদিকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত চীনের পর্বতারোহণ শূন্য ছিলো। আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পর্বতারোহণ করার পরিকল্পনা দু'দেশের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থও হয়ে যায়। এই কঠিন অবস্থায় ১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের ছুমোলোংমা শৃঙ্গের পর্বতারোহণ দল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২১৪ জন সদস্য চীনের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শ্রমিক, কৃষক, সৈন্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং গবেষক প্রমুখ। তাদের গড় বয়স মাত্র ২৪ বছর।

ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণের সবচেয়ে কঠিন জায়গা হলো ৮৬৮০ মিটার থেকে ৮৭০০ মিটারের মধ্যে। এই দূরত্বকে 'দ্বিতীয় পদক্ষেপ' বলে অভিহিত হয়। সেখানকার গড় ঢাল ৮০ ডিগ্রিরও বেশি এবং আরোহণের কোনো সমর্থন পয়েন্ট খুঁজে বের করা যায় না।

১৯৬০ সালের ২৫ মে ভোর ৪টা ২০ মিনিটে ওয়াং ফু চৌ, ছু ইন হুয়া এবং কো বু এ তিন জন অবশেষে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করেন। এটি হলো কোনো চীনাদের প্রথমবারের মতো ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ, যা মানবজাতির প্রথমবারের মতো উত্তর দিক থেকে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণের রেকর্ডও সৃষ্টি করে। চীনের পর্বতারোহী দলের এ তিন জন সদস্য সাফল্যের সঙ্গে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করায় চীনা জনগণের আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তারপর নানা করণে চীনের পর্বতারোহণ খাত দশাধিক বছর থেমে থাকে। ১৯৭৫ সালে চীন আবার একটি পর্বতারোহী দল প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭৫ সালের ২৭ মে চীনের পর্বতারোহী দলের সদস্যরা আরেকবার উত্তর দিক থেকে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করেন এবং সঠিকভাবে ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপ করেন। তখন থেকে জানা যায় যে, ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উচ্চতা হলো ৮৮৪৮.১৩ মিটার। বলা যায়, ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপ করা হলো প্রকৃতি জানার প্রক্রিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মান পরীক্ষা এবং মানবজাতির আরেকবার চ্যালেঞ্জ।

চীনের দু'বার ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক রেকর্ড দেখে অনেকে গভীরভাবে মুগ্ধ হয়ে যান।

'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রে 'অসম্ভব কর্তব্য সম্পন্ন করার' গল্প তুলে ধরা হয়। চলচ্চিত্রের বাইরে এ চলচ্চিত্র নির্মাণ করাই হলো 'অসম্ভব কর্তব্য সম্পন্ন করা।' এ চলচ্চিত্রের নির্মাণ দল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৫ মাস সময় ব্যবহার করে। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এত সন্তোষজনক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা দারুণ উত্সাহব্যঞ্জক।

(লিলি/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040