বর্তমানে ৮৭ বছর বয়সী জেমস কনওয়ে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মিসৌরি রাজ্যের সেন্ট লুই শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। মেয়র থাকাকালীন সেন্ট লুই চীনের নানচিং শহরের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি বলেন, এটি হলো দু'দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
১৯৭৯ সালের পয়লা জানুয়ারি দু'দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পর যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহর চীনের শহরের সঙ্গে মৈত্রী শহরের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেন্ট লুইতে অবস্থিত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চীন বিশেষজ্ঞ স্ট্যানলে স্পেক্টর ইতিবাচকভাবে জোরদার করার মাধ্যমে সেন্ট লুই চীনা শহরের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রথম মার্কিন শহরে পরিণত হয়। এ সম্পর্কে কনওয়ে বলেন, 'নানচিং শহরের সঙ্গে মৈত্রী শহরের সম্পর্ক গড়ে তোলায় অনেক মার্কিন কূটনীতিক বিস্মিত হয়েছেন। তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, আমরা কীভাবে এত কম সময় এ সফলতা অর্জন করেছি পারি। অনেক মানুষ আমাদের প্রশংসা করেছেন।'
৪০ বছর ধরে দু'টি মৈত্রী শহর অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে যোগাযোগ করেছে। বিশ্বের শীর্ষ ৫০০টি প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সেন্ট লুই-এ অবস্থিত ইমারসন ইলেকট্রিক কর্পোরেশন নানচিংয়ে গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। নানচিং বিশ্ববিদ্যালয় ও মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট লুই কলেজ এবং নানচিং বিদেশি ভাষা স্কুল ও সেন্ট লুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য স্থিতিশীল ও নিয়মিত শিক্ষার্থী যোগাযোগের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেন্ট লুইয়ের মিসৌরি উদ্ভিদ উদ্যানে চীনা প্রাচীন বৈশিষ্ট্যময় উদ্যান আছে। নানচিং চোংশান উদ্ভিদ উদ্যান ও মিসৌরি উদ্ভিদ উদ্যানের যৌথ প্রচেষ্টায় দু'দেশের উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে 'চাইনিজ ফ্লোরা' শীর্ষক বই প্রকাশ করেছে।
মৈত্রী শহরের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর প্রতি পঞ্চম, দশম বার্ষিকী উদযাপিত হয়। দু'টি শহর প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। কোওয়েই বলেন, যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় তিনি নয়া চীনের উন্নয়নের বিরাট পরিবর্তন দেখেছেন। তিনি বলেন, 'এখনও আমাদের মনে আছে প্রথমবার নানচিংয়ে ভ্রমণ করার স্মৃতি। ১৯৭৯ সালে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে নানচিং গিয়েছিলাম। তখন চীনা নারীরা আমাদের স্ত্রীর পোশাক ও জুতো দেখছিল। কারণ, তখন চীনে নারীদের পোশাক ছিল খুবই একঘেয়ে। মাত্র ৫ বছর পর আমি পুনরায় নানচিং যাই। তখন নারীদের রঙিন পোশাক ও বিভিন্ন শৈলী দেখতে পাই। দশ বছর পর আমি আগের পুরানো শৈলী আর দেখি নি। চীনা জনগণের অনেক উন্নতি হয়েছে। দশ বছরে চীনের বিরাট অগ্রগতি হয়েছে।'
সেন্ট লুই ও নানচিং মৈত্রী শহরের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর দু'দেশের মৈত্রী শহর সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। সমিতির বর্তমান চেয়ারম্যান নিল পেরিম্যান ২০১২ সালে একটি হোস্ট পরিবারের পিতা হিসাবে সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে যান। তিনি স্মরণ করে বলেন, মৈত্রী শহর পরিকল্পনার বৃহত্তম তাত্পর্য হলো, দু'টি শহরের মানুষের মধ্যে মৈত্রী জোরদার করা। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, 'মৈত্রী শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো। যে শিক্ষার্থী আমার বাড়িতে বাস করত, তাঁরা সেন্ট লুইকে আরো বেশি জানতে পেরেছে। যে মার্কিন মানুষ নানচিংয়ে গিয়েছিলেন, সে অবশ্যই চীনকে আরো বেশি জানেন। আমি আসল চীনকে জানি, কারণ আমি অনেকবার চীনে গিয়েছিলাম। এসব বিষয় বইতে পাওয়া যায় না।'
মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট লুই কলেজের অধ্যাপক ও চীন বিশেষজ্ঞ জোয়েল গ্লাসম্যান হলেন সেন্ট লুই ও নানচিং মৈত্রী শহর সমিতির সদস্য। ১৯৭৮ সাল তিনি মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির প্রতিনিধি হিসেবে প্রথমবার চীন ভ্রমণ করেন। এরপর কয়েক দশকে মধ্যে তিনি দু'টি শহরে যাওয়া-আসা করতে থাকেন। তিনি দুটি শহরের শিক্ষা খাতে যোগাযোগ ও সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন। চীনের শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, 'চীন শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে, ১৯৭৮ সালে চীনের প্রকৌশল জ্ঞান বিশ্বের অনগ্রসর অবস্থায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে চীনের নিজের প্রকৌশল শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি অসাধারণ অগ্রগতি। বর্তমানে চীনের উচ্চ শিক্ষার মান বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের জ্ঞানের একটি অংশে পরিণত হয়েছে।'
গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে সেন্ট লুই শহরের মেয়র লিদা ক্রেউসন প্রতিনিধিদল নিয়ে নানচিং পরিদর্শন করেছেন। দু'দেশের মৈত্রী শহর সমিতির চেয়ারম্যান পেরিম্যান হলেন প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য। তিনি দুই শহরের মৈত্রী আরো জোরদার করার কথা বলেছেন।