বাংলাদেশে পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি : সংকটের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি
  2019-11-17 19:03:30  cri
পেঁয়াজ নিয়ে এক বড় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষ। দু'মাস আগে পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু করলেও তা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, কমার কোনো লক্ষ্মণই নেই। এতে সংসার ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

জুলাই-আগস্টে যে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা- ২৭ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। মাত্র দুদিনে তা বেড়ে হয় ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। অক্টোবরের মাঝামাঝি দাম বেড়ে দাঁড়ায় কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দাম আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। আর দ্বিতীয় সপ্তহে পেঁয়াজের দাম দুশো টাকা ছাড়িয়ে যায়।

১৫ নভেম্বর রাজধানীতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে আড়াইশো টাকা করে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পেঁয়াজের দাম দুশো টাকার ওপরে। ঢাকায় সরবরাহের ঘাটতি না থাকলেও, চট্টগ্রামে অনেক খুচরা বাজারে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। বহু চেষ্টা করেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। বাজার সহনীয় করতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তাতেও ফল মেলেনি। প্রয়োজনের তুলনায় টিসিবির পেঁয়াজ অপ্রতুল। এছাড়া অনিয়ম, অব্যস্থাপনাতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে এক টালমাটাল অবস্থায় পেঁয়াজের বাজার।

টিসিবি'র সূত্রমতে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। আর উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন। ফলে চাহিদা মেটানোর জন্য ৫-৭ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়-যার বেশির ভাগ আসে ভারত থেকে। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ বার পেঁয়াজের দাম ওঠা-নামা করে। আর ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত বিনা নোটিশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে হু হু করে বেড়ে যায় দাম।

লাগামহীন এ দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রথমে পেঁয়াজের দাম বেধে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। পরে অভিযান পরিচালা করে জরিমানা করা হয়। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। সঙ্কট কাটাতে ৬৬ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমাদানির জন্য এলসি খোলা হয়। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ৬ হাজার ১৬২ টন।

অনন্যোপায় হয়ে সরকার তুরস্ক, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আফগানিস্তান থেকে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমাদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের সরবরাহ থাকবে এবং দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দিন জানিয়েছেন, যতদিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হবে ততদিন কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। পেঁয়াজ আমদানির জন্য একজন উপসচিবকে এরই মধ্যে তুরস্ক পাঠানো হয়েছে।

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। সংসদের সমাপনী অধিবেশন এ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকদিনের মধ্যেই আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসতে শুরু করবে। টিসিবির মাধ্যমে এসব পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা হবে। এতে করে সংকট কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলনে পেঁয়াজ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু'এক দিনের মধ্যেই তা দেশে পৌঁছবে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে কোনো মহলের চক্রান্ত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি সরকারের জন্য একটা বড় বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে সন্দেহ নেই। আর অস্বাভাবিক এ দামবৃদ্ধির পেছনে যে অতিমুনাফা করার প্রবণতা কাজ করেছে তা বলাই বাহুল্য। চট্টগ্রামে মজুত করা দেড়শো টনের বেশি পেঁয়াজ ফেলা দেয়ার খবরও দেশবাসী সংবাদ মাধ্যমে পেয়েছে। দেশের অন্যত্রও এ জাতীয় ঘটনা ঘটেছে।

নানাভাবে পেঁয়াজ আমদানি করে সরকার বাজার স্থিতিশীল করা চেষ্টা করে যাচ্ছে- তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে, যারা অতিমুনাফার লোভে এ সংকট তৈরি করেছে তাদের আইনের আওতায় আনাটাও জরুরি বলে মনে করে দেশের মানুষ।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040