চীনের 'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর থেকে এর বক্সঅফিস ১০০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ছাড়িয়ে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ ৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে প্রদর্শিত হয়। বক্সঅফিসের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সুবিধাও অর্জন করে চলচ্চিত্রটি।
সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, 'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রটি হলো চীনা চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পকর্ম। চলচ্চিত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা চলচ্চিত্রের শিল্পায়নে অর্জিত ফলাফল তুল ধরা ছাড়াও, দেশপ্রেম ও সংহতিবাদের চেতনা পালন করা হয়, যাতে ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রের সুষ্ঠু উন্নয়নে অনেক অনুপ্রেরণা দেওয়া যায়।
এ চলচ্চিত্রটি পর্বতারোহণ সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এতে ২০ শতাব্দীর ৬০ ও ৭০ দশকে চীনের পর্বতারোহণ দলের সদস্যদের দু'বার ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণের গল্প তুলে ধরা হয় এবং যা পর্বতারোহণ বিষয়ক ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রের শূন্যতা পূরণ করে।
'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রের প্রযোজনা কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রেন চোং লুন বলেন, ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণের গল্প চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তরুণ দর্শকদের সঙ্গে ইতিহাসের দূরত্ব কাছাকাছি করে তোলা। চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত এসব বীরের চেতনা বিভিন্ন বয়সের দর্শকদের মনকে মুগ্ধ করতে সক্ষম বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গোটা চলচ্চিত্র দেশের জন্য আরোহণ করার চেতনায় পরিপূর্ণ, এটাই চলচ্চিত্রের স্পিরিট। চীনের চলচ্চিত্র সমালোচক সমিতির মহাপরিচালক রাও শু কুয়াং মনে করেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এবং ব্যক্তিগত মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় ঘটালে এবং প্রধান মূল্যবোধের মাধ্যমে চীনা গল্প ভালোভাবে বললে দর্শকেরা সত্যিকারভাবে চলচ্চিত্রের আকর্ষণীয় শক্তি অনুভব করতে পারেন, ফলে ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রে সুষ্ঠু ও টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়িত হবে।
চীনের সাহিত্য ও শিল্প সমালোচক সমিতির চেয়ারম্যান চোং ছেং সিয়াং 'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রকে 'চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মহান একটি চলচ্চিত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এতে চীনের চেতনা প্রতিফলিত হয়।
চীনের চলচ্চিত্র সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ইন হোং এ চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত নতুন মূলধারার চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন সারসংকলনের সময় বলেন, 'চলচ্চিত্রের মহান থিম প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত বাছাই ও চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ। ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ হলো জাতীয় সম্মান এবং যা একটি দেশের মর্যাদার প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এটাই ব্যক্তিগত বাছাই।'
তিনি বলেন, পারিবারিক অনুভূতি বা দেশপ্রেমের চেতনা প্রকাশের সময় ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মহান থিম বর্ণনা করলে এবং পুরোপুরিভাবে নির্দিষ্ট খুঁটিনাটি তথ্য ব্যবহার করলে দর্শকদের মধ্যে সহজেই একই আবেদন সৃষ্টি করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুগের সঙ্গে বাস করা এবং দেশের সঙ্গে একই ভাগ্য উপভোগ করা হলো প্রত্যেক চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
চীন এখন চলচ্চিত্রের বড় দেশ থেকে শক্তিশালী দেশে পরিণত হচ্ছে। 'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রের মতো প্রধান থিমকে তুলে ধরা এমন ধরনের চলচ্চিত্র সাফল্যের সঙ্গে রূপান্তরিত হয়। প্রধান থিম ঘিরে নির্মিত চলচ্চিত্র চীনের চলচ্চিত্র বাজারে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে এবং প্রধান মূল্যবোধ প্রচার করার সামাজিক দায়িত্বও পালন করে থাকে, ফলে ব্যাপক দর্শক বিশেষ করে তরুণ দর্শকদের সমাদর অর্জন করা যায়।
উল্লেখ্য, 'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্র চীনে প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আমেরিকা এবং ব্রিটেনে একই সময় প্রদর্শিত হয়।
ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রের গুণগত মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা চলচ্চিত্রের বাইরে চলে যাওয়ার গতি অবশ্যই আরো দ্রুত হবে এবং বিদেশে চীনা চলচ্চিত্র আরো বেশি একই আবেদন অর্জন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
'দ্যা ক্লাইম্বার্স' চলচ্চিত্রটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়। এতে এমন একটি ঘটনা বলা হয় যে, ১৯৬০ সালের ২৫ মে চীনের পর্বতারোহণ দলের সদস্যরা সাফল্যের সঙ্গে উত্তর দিকে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করেন এবং তারা মানবজাতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই মহান কর্তব্য সম্পন্ন করেন। তবে সেই সময় কোনো চিত্রের ডেটা রাখা হয়নি বলে কোনো স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। তাই ১৫ বছর পর চীনের পর্বতারোহণ দল আবার ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। চলচ্চিত্রে প্রধানত তাদের দ্বিতীয় বার ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণের গল্প তুলে ধরা হয়। গত শতাব্দীর ৫০'র দশকে চীন এবং নেপাল সীমানা ভাগের ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে। তখন ছুমোলোংমা শৃঙ্গের মালিকানা সমস্যায় দু'দেশ মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে না।
নেপালের পর্বতারোহণ দলের সদস্যরা ১৯৫৩ সালে সাফল্যের সঙ্গে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করে। তাই তারা মনে করে, ছুমোলোংমা শৃঙ্গ নেপালের ভূখণ্ড। তাদের কথা অনেক শক্তিশালী। তারা বলে, চীনারা কখনই ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করেন নি, কিভাবে বলা যায়, ছুমোলোংমা শৃঙ্গ চীনের?
তাই নয়াচীন প্রতিষ্ঠার শুরুতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ হলো সার্বভৌমত্বের মালিকানা নির্ধারণ করার রাজনৈতিক কর্তব্য। তারপর খুব দ্রুত গতিতে তরুণ একটি পর্বতারোহণ দল প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের উদ্দেশ্য হলো: ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করা ।
১৯৬০ সালের মে মাসে ২০০ জন পর্বতারোহী ছুমোলোংমা শৃঙ্গের দিকে যাত্রা শুরু করেন। অবশেষে মাত্র ৩ জন সাফল্যের সঙ্গে ছুমোলোংমা শৃঙ্গে আরোহণ করেন। কারণ আরোহণের পথে দলনেতা দলের আরেকজন সদস্যকে উদ্ধার করতে অসাবধানে ক্যামেরা পাহারের নীচে হারান, তাই কোনো চিত্রের ডেটা রাখা হয় নি এবং বিশ্বের স্বীকৃতিও পাওয়া যায় নি।
১৯৭৩ সালে চীন আবার পর্বতারোহণ দল প্রতিষ্ঠা করে। দু'বছরের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির পর ১৯৭৫ সালের মে মাসে চীনের তরুণ পর্বতারোহীরা আবার বিশ্বের শীর্ষের দিক চ্যালেঞ্জ করেন এবং অবশেষে ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উচ্চতা সঠিকভাবে পরিমাপ করেন।
(লিলি/টুটুল)