শিক্ষা বিষয়ক খবর, চীনের হাইনান কারিগরি প্রযুক্তি একাডেমির অধ্যাপক লি লিন না'র গল্প
  2019-11-11 16:19:39  cri

 


চীনের তিব্বতের প্রতিবন্ধী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে এআই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ

'সিয়াওতু, সিয়াওতু, 'আমি এবং আমার মাতৃভূমি' গানটি প্রচার করো! 'তিনটি রাষ্ট্রের কাহিনী' প্রচার করো!' একথা শুনে রোবট প্যাড ছাত্রছাত্রীদের জন্য গান ও গল্প প্রচার করতে শুরু করে। তিব্বতের রাজধানী লাসায় প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করা স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা রোবট 'সিয়াওতু'কে ডেকে সহজভাবে বাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, পরিবারের সদস্যদের সাথে ভিডিও ফোনে কথা বলতে পারে। এককথায় এখানে লেখাপড়া ও জীবনযাপনে অনেক সুবিধা পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, লাসা শহরের প্রতিবন্ধী স্কুল তিব্বতে নির্মিত প্রথম প্রতিবন্ধী স্কুল, যার মধ্যে ২২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চীনের বাইতু কোম্পানি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিবেচনা করে এআই গ্রন্থাগার ও এআই হোস্টেল গঠন করেছে।

জানা গেছে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পাঠ্যপুস্তক খুবই কম, তাই তাদের জন্য বই কেনা এবং জ্ঞান অর্জনে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমানে এআই গ্রন্থাগারের মাধ্যমে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। তারা শুধু কণ্ঠ নির্দেশনা দিয়ে চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভূগোলসহ বিভিন্ন জ্ঞান শিখতে পারে।

এআই হোস্টেলে রোবট সিয়াওতুকে ডাকার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের সাথে ভিডিও ফোনালাপ করতে পারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীরা। সাথে সাথে রোবটের মাধ্যমে তারা ঘড়ির অ্যালার্ম ও ওয়েকআপ নোটিশ পেতে পারে, এমনকি সর্বশেষ খবরও জানতে পারে যা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্বকে জানার জানালা খুলে দিয়েছে।

শ্রবণ বৈকল্য ও শারীরিক অক্ষম ছাত্রছাত্রীদের জন্য এআই গ্রন্থাগার সাইন ভাষার অনুবাদ এপিপি চালু হয়েছে, যাতে বিভিন্ন রূপকথা ও বইয়ের অক্ষর সাইন ভাষার অনুবাদ করা হয় এবং এআই প্রযুক্তিতে শ্রবণ বৈকল্য বাচ্চাদের বই পড়তে সহায়তা দেয়। সাথে সাথে ভিআর বুদ্ধিমান ক্লাসরুমও চালু হয়েছে, ভিআর পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রাণচঞ্চল লেখাপড়ার পরিবেশ গড়ে তোলা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা সহজভাবে জ্ঞান বুঝতে সক্ষম।

স্কুলের প্রেসিডেন্ট ইয়োনতেন পুনসো বলেন, অন্ধ ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে অনেক কম। তারা শুধু ম্যাসাজ, কেক পাচক হতে পারেন, তবে যুগের উন্নয়নের সাথে সাথে তারা আরো অনেক কিছু করতে সক্ষম। তারা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে আরো বেশি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম, এভাবে তাদের জীবনযাপনও পরিবর্তন করা সম্ভব।

হাইনান কারিগরি প্রযুক্তি একাডেমির অধ্যাপক লি লিন না'র গল্প

'আমার একটি স্বপ্ন আছে, যা হাইনান ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ফল ও সবজি ফ্রোজেন করে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে চীনের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা'। হাইনান কারিগরি প্রযুক্তি একাডেমির অধ্যাপক লি লিন না এমন কথা বলেন। ৬০ বছর বয়সী ম্যাডাম লি কখনো অবসর জীবনের কথা ভাবেন নি। তিনি প্রতিদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাজ করেন এবং ইলেকট্রনিক ব্যবসা ও মাল পরিবহন পেশার গবেষণা নিয়ে বিভিন্ন কাজ করেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি চীনের 'শ্রেষ্ঠ শিক্ষক পদক' লাভ করেন।

সমাজের জন্য আরো বেশি দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া

১৯৯১ সালে চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন লি। তখন চাকরির অন্যান্য অনেক সুযোগ থাকলেও তিনি হাইনানে এসে কারিগরি কলেজের একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, শিক্ষকতার প্রতি আমার বিশেষ আকর্ষণ আছে, তাই এই পেশা ছাড়া আর অন্য কোনো চাকরি করতে চাই নি।

ম্যাডাম লি তাঁর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় থেকেই শিক্ষকতার প্রতি বেশ আগ্রহী হন তিনি। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনার দৃশ্য তাঁকে মুগ্ধ করে এবং ছাত্রছাত্রীরা তাঁর ক্লাসের মাধ্যমে আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারলে তিনি গৌরব বোধ করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর সাহায্যে নতুন অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শিখে নিজের সুন্দর জীবন শুরু করেছেন।

মৌলিক শিক্ষাদানের তুলনায় কারিগরি প্রশিক্ষণ লি'র জন্য আরো আকর্ষণীয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, গত শতাব্দীর ৯০ দশকে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ব্যক্তিদের প্রয়োজন পড়ে, তবে শ্রমিকদের গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা না গ্রহণের কারণে কারিগরি স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্নাতক হওয়ার পর কর্মসংস্থানে যোগ দেয় আর সমাজের দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণে কারিগরি স্কুলের ভূমিকা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

অধ্যাপক লি'র চোখে কারিগরি স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে দুর্বল নেয়, বরং তাদের হস্তশিল্পকর্মের বিশেষ প্রাধান্য রয়েছে। কারিগরি স্কুলের শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য তিনি আন্তরিকতার সাথে ছাত্রছাত্রীদের সাথে পরিচিত হন এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বেশি উত্সাহ দেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আলাদা প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গবেষণা করেন তিনি। প্রথমে কাজ করার পদ্ধতি তাদের বুঝিয়ে দেন, তারপর তাদের তত্ত্ব পড়াশোনা করান তিনি।

অধ্যাপক লি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের কেবল তত্ত্ব নয়, প্রায়োগিক জ্ঞানও অর্জন করতে হবে। প্রায়োগিক জ্ঞানের মাধ্যমে তারা সবকিছু আরো সহজভাবে শিখতে সক্ষম হবে। অতীতকালে এমন বিষয় শেখার আগ্রহ খুবই কম, তবে নতুন পদ্ধতি চালু করার পর শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়।

ইলেকট্রনিক ব্যবসা ও মাল পরিবহনে হাইনানে দক্ষ ব্যক্তিদের ঘাঁটি স্থাপন

গত শতাব্দীর ৯০ দশকের শেষ দিকে চীনের ইলেকট্রনিক ব্যবসা মাত্র শুরু হয়েছে। কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকধারী লি লিন না অবিলম্বে ইলেকট্রনিক ব্যবসা প্রশিক্ষণের তাত্পর্য অনুভব করেন। ২০০০ সালে হাইনান প্রদেশে প্রথম কারিগরি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-হাইনান কারিগরি প্রযুক্তি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন অধ্যাপক লি এ স্কুলে যোগদান করেন এবং তখন থেকে হাইনান ইলেকট্রনিক কারিগরি প্রশিক্ষণের নতুন সূচনা শুরু হয়। তখন হাইনানে ইলেকট্রনিক ব্যবসা-শিল্প অনুন্নত ছিলো। এ বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিলো না। তাই ম্যাডাম লি বিভিন্ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করেন।

স্কুলের দোকানে অনলাইন সুপারমার্কেট চালুর উদ্যোগ নেন তিনি। ছাত্রছাত্রীরা পণ্যদ্রব্যের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা, কম্পিউটার সফ্টওয়্যার সুন্দর করা এবং স্কুলের মাল পরিবহনসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। তাছাড়া, ইন্টার্নশিপের সুযোগ খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেন এবং ইলেকট্রনিক ব্যবসার সুবিধা ও অনলাইন ব্যবসার স্বার্থসহ বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দেন, সাথে সাথে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইন ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানের ই-ব্যবসা উন্নয়নের পদ্ধতি জানার পর তিনি গবেষণা দল নিয়ে 'হাইনান ই-ব্যবসা উন্নয়ন'সহ ধারাবাহিক তত্পরতা পরিচালনা করেন। ৬ বছর ধরে বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে লাখ লাখ ইউয়ানের স্বার্থ অর্জন করেন এবং তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেন ও প্রায় শতাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করেন।

কারিগরি স্কুল থেকে লেখাপড়া শেষে অনেকে ই-ব্যবসার জ্ঞান দিয়ে জন্মস্থানের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছেন। লি তা ছেং তাদের মধ্যে একজন, যিনি বিশেষ প্রযুক্তি দিয়ে হাইনান ওয়েনছাং মুরগি তৈরি করে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করেন।

শিক্ষক লি'র গবেষণায় আবিষ্কার করেন যে, ই-ব্যবসায় গ্রামাঞ্চলে মাল পরিবহনের দুর্বলতা রয়েছে, তাই স্কুলে তিনি মাল পরিবহন বিভাগ স্থাপন করেন, কৃষিজাত পণ্যদ্রব্য টাটকা রাখতে কোল্ড চেইনের মাল পরিবহন বিভাগ স্থাপন করেন। বহু বছর ধরে, যখন সমস্যা খুঁজে পান, তখন বিভিন্ন পদ্ধতিতে তা সমাধানের চেষ্টা করেন লি এবং সাথে সাথে শিক্ষাদানের পদ্ধতিও সৃজনশীল করে তোলেন।

অবসর নিলেও বিশ্রাম নেন না তিনি

কলেজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সকলের মনে ম্যাডাম লি অনেক দক্ষ একজন নারী। দক্ষ এবং প্রফুল্ল চরিত্রের কারণে ৬০ বছর বয়স হলেও তাঁর চেহারায় বয়সের কোনো ছাপ দেখা যায় না।

অধ্যাপক লি'র সময়সূচিতে কোনো ছুটি নেই। দিনের বেলায় ক্লাসসহ প্রশিক্ষণ, ইন্টার্নশিপ, শিল্প-প্রতিষ্ঠানে পরিষেবা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ নানান বিষয়ে তিনি ব্যস্ত। রাতের সময় তিনি মনোযোগ দিয়ে বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণা করেন। এ সম্পর্কে লি বলেন, 'রাতের সময় আমার কার্যকরিতা খুবই ভালো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, সময় ভুলে গিয়ে অফিস-ভবনে কাজ করছি।'

লি মনে করেন, এ‌ই চাকরিতে ভালো করতে চাইলে মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করতে হবে। কারিগরি প্রশিক্ষণ শুধু পড়াশোনা-ই নয়, এখানে বাজার, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ও উত্পাদন শিল্পের বাজার সম্পর্কেও জানতে হবে।

অতিরিক্ত সময় দিয়ে চাকরি করলেও কখনো ক্লান্ত বোধ করেন না শিক্ষক লি। বিশেষ করে কারিগরি প্রশিক্ষণের সুন্দর ভবিষ্যত তাকে অনেক শক্তি যোগায়। হাইনানে অবাধ বাণিজ্য এলাকা এবং চীনের বৈশিষ্ট্যময় অবাধ বাণিজ্য বন্দর স্থাপন উপলক্ষে কারিগরি স্কুলে এআই প্রযুক্তি ও বিগ ডেটা, নতুন জ্বালানি সম্পদ গাড়ি, আন্তঃদেশীয় ই-ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিভাগ চালু হয়েছে, নতুন উন্নয়নের সম্ভাবনায় আরো বেশি দক্ষ ব্যক্তি দরকার।

চলতি বছর চীনের জাতীয় দিবসের ছুটিতে লাওস ভ্রমণে যান শিক্ষক লি। ভবিষ্যতে চীন-লাওস রেলপথ চালু হলে দেশটির সাথে মাল পরিবহনের চ্যানেল তৈরি হবে। তখন লাওসের ই-ব্যবসা বাজারে আরো বেশি সাফল্য অর্জন করা যাবে বলে মনে করেন শিপ্রিয় শ্রোতা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও এখানেই শেষ করতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.bengali.cri.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহের একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)

ক্ষক লি।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040