বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত : ত্রাণ ও পুনর্বাসনে জোর দেয়া জরুরি
  2019-11-10 19:12:51  cri
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‌বুলবুল আতঙ্কে গত কয়েকটি দিন কেটেছে বাংলাদেশের মানুষের। ছিল ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত আর জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস। সৌভাগ্যবশত আগে ভারতে আঘাত হেনে দুর্বল হয়ে যাওয়ায়, যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল বাংলাদেশে ততটা ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারেনি ঘূর্ণিঝড়টি।

তারপরও ঘূর্ণঝিড় বুলবুলের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়েছে খুলনা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, ভোলাসহ উপকূলীয় বেশ কিছু জেলার জনজীবন। প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ৪ জনের। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে পড়েছ গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি। হয়েছে ব্যাপক ফসলহানি, ভেসে গেছে মাছের ঘের। বিদ্যুতের খুটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীন রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা।

খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় ৩টি বাধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ফসলী জমি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট। এ জেলায় এক নারীসহ দুজনের প্রাণহানি হয়।

সাতক্ষীরায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি, তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট ও মাছের ঘের। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজলোর চালিতাবুনিয়ায় ভাঙ্গা বাধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ফসলের ক্ষেত। এ জেলায় মারা গেছে আরো দু'জন।

ভোলার লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় দুশোর বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুররা। কাজ না পেয়ে তাদের অনেকেরই অনাহারে থাকার যোগাড়।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দুদিন ধরে বন্ধ ছিল দেশের সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলো। ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে এগুলো। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ১১ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময়ে দুপাশে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন।

ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ায় ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষজন। তবে, এদের অনেকেরই ঘরবাড়ি, ক্ষেতখামার, মাছের ঘের নষ্ট হয়ে গেছে। এখন উপদ্রুত এ মানুষগুলোর জন্য দরকার পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা।

ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব পরিস্থিতি মোকাবেলায় আবহাওয়া অধিদপ্তর, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চমৎকার ভূমিকা রেখেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল আমাদের কোস্টগার্ড ও ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবি।

এখন ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমেও প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সরকারি হিসেবে ২ জনের প্রাণহানি ৩০ জন আহত হয়েছেন। দ্রুত তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাঠে নামবেন এবং ত্রাণকার্যক্রম শুরু করবেন।

ত্রাণমন্ত্রী জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ত্রাণ পাঠানো, সতর্কবার্তা প্রচার, স্বেচ্ছাসেবি নিয়োগ, লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। গণমাধ্যম ও আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিত ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক বার্তা প্রচার করে জনগণকে সচেতন করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলভাবে ঘূর্ণঝড় মোকাবেলা করা গেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী।

বন্যা-ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ বিষয়ে বিশ্বেও বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। তবে, দেখা গেছে ঘূর্ণিঝড়ের আগে সরকারের তৎপরতা যতটা চোখে পড়ে পরবর্তীতের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে কিছু খামতি থেকেই যায়। অনেক সময় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ত্রাণ পৌঁছয় না। কিংবা পৌঁছলেও তা পর্যাপ্ত হয় না। সরকারকে এ বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ নজর দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি মানুষ যাতে ত্রাণ পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, ফসলহানি ঘটেছে যাদের – দ্রুত তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি। আশার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সেরকম নির্দেশনাই রয়েছে। এখন বাস্তবায়নটাই সকলের চাওয়া।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040