১. ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে চীন মোট ৭৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি পুঁজি আকর্ষণ করেছে। ফলে বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের দিক দিয়ে দেশটি বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে। জেনিভায় সম্প্রতি জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রিপোর্ট অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি ছিল। বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
২. ব্যবসা-পরিবেশের উন্নয়ন তাইওয়ানবাসীকে দেশের মূল ভূভাগে শিল্প সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তাইওয়ান কার্যালয়ের মুখপাত্র মা সিও কুয়াং এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চীনের মূল ভূভাগে ব্যবসা-পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি উন্মুক্তকরণও সম্প্রসারিত হতে হবে। এতে মূল ভূভাগে পুঁজি বিনিয়োগ করতে আরও বেশি বিদেশি ব্যবসায়ী আগ্রহী হবেন।
৩. সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে অনুষ্ঠিত হয় 'হোরাসিস চীন সম্মেলন'। সম্মেলনে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপিন্সের দু'শতাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনের আয়োজক 'হোরাসিস' (Horasis)-এর প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্ক-ইয়ুর্গেন রিখটার বলেন, চীন বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। চীনের অর্থনীতির বিকাশে তিনি পুরোপুরি আশাবাদী।
এক সাক্ষাত্কারে রিখটার বলেন, "আমি মনে করি, এখন যুক্তরাষ্ট্রে 'হোরাসিস চীন সম্মেলন' আয়োজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সম্প্রতি বাণিজ্য-আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সকল পক্ষই এই আলোচনার ফলাফলের ব্যাপারে আশাবাদী। আমরা আশা করি যে, এই সম্মেলন এই আশাবাদকে আরও বাড়িয়ে দেবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি এখনও সন্তোষজনক। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে, ৬ শতাংশ বা ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এখনও যথেষ্ট বেশি। চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংঘাত, বিশেষত এ থেকে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা চীনা অর্থনীতিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে আমি চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমি বিশ্বাস করি যে, চীনা অর্থনীতির মূল সূচকগুলো এখনও খুব ভাল।"
৪. চীনের কাগজ-নির্মাণ শিল্পে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে উত্পাদন বাড়লেও, আয় ও মুনাফা কমেছে। শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, এ খাতে উক্ত আট মাসে পাল্প উত্পাদন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায়, ৬.৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮.৬ মিলিয়ন টনে। আর একই সময়কালে কাগজ উত্পাদন এক শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮০.৮৪ মিলিয়ন টনে। শুধু অগাস্টেই দেশে কাগজ উত্পাদিত হয়েছে ১০.৪৪ মিলিয়ন টন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বছরের প্রথম আট মাসে এ শিল্প মুনাফা করেছে ৩৮.৫৪ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.৯ শতাংশ কম।
৫. এদিকে, চীনের প্রধান শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়, কমেছে ২.১ শতাংশ। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) এ তথ্য জানিয়েছে।
এনবিএস জানায়, উক্ত সময়কালে রাষ্ট্রীয় শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা ৯.৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১.৩৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। তবে, এই নয় মাসে বেসরকারি খাতের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা ৫.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১.২৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে।
বছরের প্রথম নয় মাসে খনি-শিল্পে মুনাফা ৩.১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৭.৯৪ বিলিয়ন ইউয়ানে। অন্যদিকে, উত্পাদন-শিল্পে মুনাফা ৩.৯ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩.৭৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে।
৬. আইবিএম চায়না সম্প্রতি শাংহাই চাংচিয়াং গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায়, তিন বছরের সহযোগিতায়, ওয়াটসন বিল্ড আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইনোভেশান সেন্টার নির্মিত হবে চীনে। এই সেন্টারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা হবে এবং এই খাতে প্রতিভাবান তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটিতে বছরে কমপক্ষে ৫০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।
৭. ২০২৫ সাল নাগাদ চীনের ৮৫ শতাংশ নাগরিক মোবাইলফোন সেবা গ্রহণ করবে এবং তাদের মধ্যে আবার ৮৮ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করবে ও ৩৬ শতাংশ ফাইভ-জি সেবার গ্রাহক হবে। জিএসএমএ লিমিটেড সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দিয়েছেন।
এদিকে, শাংহাইয়ে জিএসএমএ গ্রেটার চায়নার প্রধান সিনহান পো ছেন সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ২০১৫ সাল নাগাদ চীনে ফাইজ-জি সেবার গ্রাহক হবে ৬০০ মিলিয়নের বেশি, যা বিশ্বে এ সেবা গ্রহণকারীদের মোট সংখ্যার ৪০ শতাংশ।
৮. এদিকে, চীনের তিনটি প্রধান টেলিকম অপারেটর চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ৮০ হাজারের বেশি ফাইভ-জি বেস স্টেশন গড়ে তুলেছে। চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য জানায়
মন্ত্রণালয় জানায়, উক্ত তিন প্রান্তিকে চীনের টেলিকম সেক্টরের ব্যবসা আগের বছরের একই সময়কালে তুলনায় বেড়েছে ২৩.৯ শতাংশ। তা ছাড়া, উক্ত সময়কালে ১৮ ধরনের ফাইভ-জি স্মার্টফোন বাজারে এসেছে এবং ৭৮৭,০০০ ফাইভ-জি স্মার্টফোন বিদেশে রফতানি করা হয়েছে।
৯. বাদ্যযন্ত্র খাতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৮ সালে ছিল ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬.৪১ শতাংশ বেশি। এই খাতে ২০১৮ সালে চীন বিদেশের সঙ্গে মোট যে-পরিমাণ বাণিজ্য করেছে, তার ২০ শতাংশই হয়েছে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে। সম্প্রতি শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত 'মিউজিক চায়না, ২০১৯' এক্সপোতে এ তথ্য জানায় চায়না মিউজিকেল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাসোসিয়েশান।
সংস্থাটি জানায়, ২০১৮ সালে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে চীন বাদ্যযন্ত্র আমদানি করেছে ১৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯.৩৩ শতাংশ বেশি। একই বছর চীন এসব দেশে বাদ্যযন্ত্র রফতানি করেছে ২৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরে তুলনায় ১০.৬৯ শতাংশ বেশি।
সংস্থা আরও জানায়, ২০১৮ সালে বাদ্যযন্ত্র খাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২১২ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৫৫ শতাংশ বেশি।
১০. প্রথমবারের মতো চীনে দুগ্ধজাত পণ্য রফতানির অনুমতি পেল ভিয়েতনাম। দেশটির বিখ্যাত দুগ্ধজাত পণ্য উত্পাদানকারী প্রতিষ্ঠান টিএইচ গ্রুপকে এই অনুমতি দিয়েছে চীনের সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা।
এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি হ্যানয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ভিয়েতনামের কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, চীন ১৪০ কোটি মানুষের বাজার। এই বাজারে ভিয়েতনামের কৃষিপণ্যের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বস্তুত, দু'টি দেশের কৃষিপণ্য একে অপরের পরিপূরক।
অনুষ্ঠানে হ্যানয়ে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সিয়ং পো বলেন, ভিয়েতনামি দুগ্ধজাত পণ্যের চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। দু'দেশ বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জোরদারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে ভিয়েতনামের টিএইচ গ্রুপ চীনের উসি চিনছিয়াও ইন্টারন্যাশনাল ফুড সিটি কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে একটি সহযোগিতাস্মারক স্বাক্ষর করে।
(আলিমুল হক)