নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর, বিশেষ করে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যকর হওয়ার পর, চীনা পরিবহনব্যবস্থা ক্রমশ উন্নত হতে থাকে। ২০১৮ সালে চীনে যাত্রী সংখ্যা ছিল ১৭.৯ বিলিয়ন পার্সনটাইমস, যা ১৯৪৯ সালের ১৩১ গুণ। একই বছর বিভিন্ন যানে পণ্য পরিবহন হয় ৫০.৬ বিলিয়ন টন, যা ১৯৪৯ সালের ২৭১ গুণ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর চীনের পরিবহনমন্ত্রী লি স্যিয়াও ফেং বেইজিংয়ে বলেন, "২০১৮ সালের শেষ দিক পর্যন্ত চীনে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য এক লাখ ৩২ হাজার কিলোমিটার, যা ১৯৪৯ সালের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। দ্রুতগতির রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৯ হাজার কিলোমিটার। এ ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার কিলোমিটার, যা ১৯৪৯ সালের ৬০ গুণ। মহাসড়ক এক লাখ ৪৩ হাজার কিলোমিটার।"
লি স্যিয়াও ফেং বলেন, চীনে পরিবহন খাতের উন্নয়নে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। যেমন, সরঞ্জাম-গবেষণা ও উন্নয়ন-ক্ষমতার দিক দিয়ে চীন পিছিয়ে আছে। পরিবহন-ব্যয়ও এখানে বেশি। শক্তিশালী পরিবহন রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় এ ধরণের সমস্যা সমাধান করা উচিত। সম্প্রতি প্রকাশিত 'পরিবহনে শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণ রূপরেখা'-য় বলা হয়, চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চীন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় 'পরিবহন শক্তিশালী রাষ্ট্রে' পরিণত হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে চীনা পরিবহন শিল্প 'তিনটি পরিবহন নেট' ও 'দু'টি পরিবহন অঞ্চল' গড়ে তুলবে। এ সম্পর্কে লি স্যিয়াও ফেং বলেন, "তিনটি পরিবহন নেট হলো একটি উন্নত দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক। এই নেটাওয়ার্কে দ্রুতগড়ি রেলপথ, দ্রুগগতির সড়কপথ, ও বেসামরিক বিমান পরিবহন অন্তর্ভুক্ত। এটির উচ্চ মান ও দ্রুতগতির বৈশিষ্ট্য থাকবে। এটি হবে একটি সম্পূর্ণ পরিবহন নেটওয়ার্ক। সাধারণ রেলপথ, সাধারণ সড়কপথ, সাধারণ বেসরকারি বিমান পরিবহন ও তেল পরিবহন পাইপলাইন এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। পরিবহন নেটের পরিষেবার সামর্থ্য হবে অনেক। এই নেটওয়ার্কে যাত্রী ও পণ্য আরও কার্যকরভাবে পরিবহন করা যাবে। এটি হবে সার্বিক ও মৌলিক নেটওয়ার্ক।"
রেলপথ হলো জাতীয় অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও বহুমুখী পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান শক্তি। জাতীয় রেলপথ ব্যুরোর উপ-পরিচালক ইউ ছুন স্যিয়াও বলেন,"অবকাঠামো নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাখা-রেলপথ, শহরের মধ্যে রেলপথ, শহর থেকে উপকন্ঠে রেলপথ, ইত্যাদি নির্মিত হবে। এরই মধ্যে ঘন্টায় ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম মালবাহী ট্রেন নির্মিত হয়েছে। প্রতিঘন্টায় ৪০০ কিলোমিটার বেগের ট্রেন ছুটতে সক্ষম এমন রেলপথ এবং ঘন্টায় ৬০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন মেগলেভ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হবে। সার্বিকভাবে যাত্রীসেবার মানও বাড়ানো হবে।"
পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮ সালে চীনের আটটি বিমানবন্দর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫০টি বিমানবন্দরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বিশেষ করে, বেইজিংয়ের রাজধানী বিমানবন্দর হলো যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ১০০ কোটিরও বেশি যাত্রী হ্যান্ডলকারী বিমানবন্দর। চীনা বেসরকারি বিমান চলাচল ব্যুরোর উপপরিচালক দং চি ই বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানচক্রকেন্দ্র নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "যোগাযোগ ও সংযুক্তি জোরদার, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ বজায় রাখা, পরিষেবার মান বাড়ানো, ও উন্মুক্তকরণের আওতায় বিশ্বব্যাপী পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।"
'পরিবহনে শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণ রূপরেখা'-য় বলা হয়েছে, পরিবহন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সংগ্রহ করা হবে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হবে। চীনা পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ ও আন্তর্জাতিক পরিবহন বাজারের সহযোগিতায় অংশ নিতে উত্সাহ দেওয়া হবে।