নু জাতির লোকসংখ্যা ২৮,৭৫৯। তারা মূলত ইয়ুননান প্রদেশের নু চিয়াং লি সু স্বায়ত্তশাসিত এলাকার লু সুই, ফু কং, কুং শান জেলায় এবং তিব্বতের চা ইয়ু জেলায় বাস করে। লিসু, তিব্বতি, পাই, হান ও নাসিসহ নানা জাতির সঙ্গে সহাবস্থান করে নু জাতির মানুষ। তা ছাড়া, মিয়ানমারে ৩০ হাজার নু জাতির মানুষ বাস করে।
নু জাতির মানুষ নিজেদের নুসু, আনু, আলং ও রুও রোসহ নানা নামে ডাকত। তারা নু চিয়াং নদী ও লানছাং নদীর দু'পাশে বসবাসকারী প্রাচীন একটি জাতি। নু জাতির মানুষ দু'টি উত্স থেকে এসেছে। হাজার বছর আগ থেকে লু সুই জেলার নুসু জাতি ও লিয়াং শান পাহাড়ের ই জাতির মিশ্রণের ফলে নু জাতি সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ফু কুং ও কং শান জেলার নু জাতি আলং বা লং নামের একটি প্রাচীন জাতি থেকে এসেছে। চীনের তু লং জাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাদের। এখন কুং শান নু জাতি মানুষ ও তুলং জাতির মানুষ পরস্পরের কথা বুঝতে পারে। দীর্ঘ সময়ের আদানপ্রদানে এ দু'টি উত্স থেকে আসা মানুষ নু চিয়াং এলাকায় মিশ্রণের ফলে এখনকার নু জাতির সৃষ্টি হয়। অবশ্য, তাদের মধ্যে এখনও নিজস্ব কিছু প্রাচীন বৈশিষ্ট্য বজায় রয়েছে।
নু চিয়াং এলাকার নদী অসংখ্য এবং এখানে চীনের বিখ্যাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অবস্থিত। নু চিয়াং এলাকায় বনের আয়তন ১৪ লাখ হেক্টর এবং দু'টি ভার্জিন বনের কাঠের রিজার্ভ ১৩ কোটি বর্গমিটার। এখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও বৃষ্টিপাত প্রচুর, যা কৃষির জন্য উপযুক্ত। খাড়া ভূখণ্ড ও নু চিয়াং নদীর কারণে এখানে পানিসম্পদ প্রচুর। জলশক্তি সঞ্চয় ১২২৩০ কিলোওয়াট এবং বার্ষিক বিদ্যুৎ উত্পাদনের পরিমাণ ৭৪১০ কোটি কিলোওয়াট-ঘন্টা।
নু জাতি নিজস্ব ভাষা আছে। তিনটি আঞ্চলিক ভাষা কুং শান, ফু কং ও লু সুইর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এক ভাষার মানুষ অন্যের ভাষা সাধারণত বোঝে না। তবে কুং শান আঞ্চলিক ভাষা ও তুলং জাতির ভাষার মধ্যে মিল আছে। লি সু জাতির সঙ্গে দীর্ঘসময় বসবাস করে আসছে বলে নু জাতির মানুষ লু সু ভাষা বলতে পারে। নু জাতির লিখিত ভাষা নেই। তারা হান ভাষার অক্ষর ব্যবহার করে।
নু জাতির ঐতিহ্যিক পোশাক চট দিয়ে তৈরি করা হয়। পুরুষদেরও লম্বা চুল আছে। নু জাতির মূল খাবার ভূট্টা। কুং শান এলাকার নু জাতির মানুষ তিব্বতি জাতির কাছ থেকে বার্লি এবং ওট চাষ শিখেছে। তারা শিকার করে এবং শিকারের মাংস ও চাল দিয়ে জাউ তৈরি করে।
২০০১ সালে চীনা সরকার নু জাতিসহ ২২টি জাতিকে এক লাখের কম জনসংখ্যার জাতি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং কৃষি, পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে তাদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া শুরু করে। ২০০৫ সালে নু জাতির মাথাপিছু জিডিপি ৬০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায় এবং তাদের অন্ন ও বস্ত্রের চাহিদা পূরণ হয়। একই বছরে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদে পাস করা হয় 'কম জনসংখ্যার জাতি সমর্থন পরিকল্পনা, ২০০৫-২০১০' এবং তাদেরকে আরও সুবিধা ও সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তু লং জাতি ও নু জাতির মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আগামী সপ্তাহে আমরা ইয়ুননান প্রদেশের সবচেয়ে কম লোকসংখ্যার জাতি তু লং জাতির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। (শিশির/আলিম/রুবি)